X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
আজ বিশ্ব শ্রবণ দিবস

নীরব এলাকা শব্দে সরব

আসাদ আবেদীন জয়
০৩ মার্চ ২০২৪, ১৬:০৭আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৪, ১৬:০৭

‘হর্ন বাজানো নিষেধ’ কিংবা ‘সামনে হাসপাতাল, হর্ন বাজাবেন না’—রাস্তার পাশে এ রকম অনেক সাইনবোর্ড আমরা দেখতে পাই। আসলেই কি এসব নির্দেশ কেউ মানছে? হর্ন বাজানো যেখানে নিষেধ, সেখানে কি কেউ হর্ন বাজাচ্ছে না? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল কিংবা ঘোষিত নীরব এলাকাগুলো কি ছাড় পাচ্ছে শব্দদূষণের কবল থেকে?

আজ ৩ মার্চ পালিত হচ্ছে বিশ্ব শ্রবণ দিবস। এবার 'চেঞ্জিং মাইন্ডসেট: লেটস মেইক ইয়ার অ্যান্ড হিয়ারিং কেয়ার আ রিয়েলিটি ফর অল' প্রতিপাদ্যে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক কর্ণ যত্ন দিবসটি।

তবে হর্ন নিয়ে যত প্রশ্নই থাকুক, সব কটির উত্তর হচ্ছে, ‘না’। দেশের কোনও এলাকাই ছাড় পাচ্ছে না শব্দদূষণের কবল থেকে। কোনটি নীরব এলাকা, কোথায় হর্ন বাজনো নিষেধ, কোথায় হাসপাতাল—এসবের কোনও তোয়াক্কা নেই। যত্রতত্র উচ্চ শব্দে হর্ন বাজিয়ে চলছে পরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির চালকরা। এতে প্রতিনিয়তই দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

রাজধানীর পল্টন এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ সচিবালয়। এর সামনের রাস্তাটি নীরব ঘোষিত। এর মানে হচ্ছে, এখানে হর্ন বাজানো নিষেধ। কিন্তু রবিবার (৩ মার্চ) বেলা ১১টা থেকে সেখানে সরেজমিনে অবস্থান করে দেখা যায়, নিরব এলাকা আসলে নীরব নয়। তা এখন শব্দে সরব। ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল—সবাই প্রতিনিয়ত হর্ন বাজিয়েই যাচ্ছে। কোনও কারণ ছাড়াই হর্ন বাজাতে দেখা যায় চালকদের।

কোনও কারণ ছাড়াই হর্ন বাজাতে দেখা যায় চালকদের

সড়কে ট্রাফিক পুলিশ বা সার্জেন্ট দায়িত্বরত অবস্থায় আছেন। তারা ট্রাফিক কন্ট্রোল করছেন। কিন্তু নীরব ঘোষিত এলাকা যে উচ্চ শব্দে সরব হয়ে আছে, সেটা যেন তাদের দায়িত্বের আওতায় নেই। অথচ সচিবালয়ের গেটের সামনেই বড় আকারের সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে: 'সচিবালয় এলাকা নীরব এলাকা, হর্ন বাজানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ’। ঠিক এসম এক পরিস্থিতিতে দেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শ্রবণ দিবস।

সচিবালয় এলাকার আশপাশের রাস্তায় বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা হয় নীরব এলাকায় হর্ন বাজানো প্রসঙ্গে। তারা জানান তাদের মত-অভিমত।

গুলিস্তানে সচিবালয়ের চার নম্বর গেটের পাশে ভ্রাম্যমাণ জুস বিক্রেতা নূর মোহাম্মদ বলেন, সাইনবোর্ডে তো কতই লেখা থাকে কিন্তু মানে কয়জন। সারা দিনই গাড়ির হর্ন বাজতেই থাকে। লেখা আছে নিষেধ, তা-ও বাজায়।

আরেক পথচারী হাসিবুল ইসলাম বলেন, ঢাকা শহরে নীরব এলাকা বলতে কিছু নেই। সাইনবোর্ডে যা-ই লেখা থাক, এগুলো চালকদের কিছুই যায় আসে না। তারা এগুলো পড়ে বলে আমার মনে হয় না। এমনও তো দেখি জ্যামে বসে আছি, তা-ও গাড়িগুলো হর্ন বাজায়। অথচ সামনে যাওয়ার জায়গা নেই। তাহলে এই হর্নের মানে কী?

সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সচিবালয়ের ফুটপাত ধরে হাঁটছিলেন। তার সঙ্গে নীরব এলাকা নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন, সচিবালয়ের গেটগুলোর সামনে দেখেছি সাইনবোর্ডে লেখা আছে হর্ন বাজানো নিষেধ, এগুলোর দরকার আছে কিন্তু বাস্তবে এর কোনও কার্যকারিতা নেই। কখনও ট্রাফিককে দেখিওনি যে হর্ন বাজাতে মানা করেছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মেহেদী হাসান বলেন, প্রতিদিনই তো আমাদের রাস্তায় চলাচল করতে হয়। শব্দ, ধুলা এসবের মধ্যেই আমাদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। অক্সিজেন ও শব্দ, কোনোটাই আমাদের জন্য নিরাপদ নয়। প্রতিনিয়তই আমরা নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত করছি। আমার মনে হয় যত দিন আমরা নিজেরা সচেতন না হবো, তত দিন কোনও কিছুই ঠিক হবে না। শব্দদূষণ-বায়ুদূষণসহ আরও সব ধরনের দূষণ আমাদের ধ্বংস করে দেবে।

সিগন্যাল পড়লেই একটু পরেই পেছন থেকে চালকরা হর্ন বাজাতে থাকেন

নীরব এলাকায় হর্ন বাজানো নিয়ে শাহবাগ ট্রফিক জোনের সার্জেন্ট সবুজ মিয়া বলেন, শুধু সচিবালয় নয়, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এগুলোও নীরব এলাকা। এসব স্থানে হর্ন বাজানো নিষেধ। কিন্তু চালকরা সচেতন নন। তারা অযথাই হর্ন বাজায়। আমরা প্রায়ই হর্ন না বাজাতে প্রচারণা চালাই, লিফলেট বিতরণ করি। চালকদের সচেতন করতে চেষ্টা করি। কিন্তু কোনও লাভ হয় না। সবচেয়ে বিরক্ত লাগে যখন আমরা সিগন্যাল দিই, তার একটু পরেই পেছন থেকে চালকরা হর্ন বাজাতে থাকে।

সাইনবোর্ডে লেখা আছে নীরব এলাকায় হর্ন বাজানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এ ক্ষেত্রে আপনারা কখনও শাস্তি বা জরিমানা করেছেন কি না, জানতে চাইলে সবুজ মিয়া বলেন, আমরা এর জন্য কোনও শাস্তি বা জরিমানা করি না। যতদূর সম্ভব তাদের সচেতন করার চেষ্টা করি। আর শাস্তি দেওয়ার সময়ই বা কোথায়? জ্যাম কন্ট্রোল করতে করতেই তো সময় চলে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ২০০৭ সালের ৩ মার্চ প্রথমবারের মতো পালিত হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার কেয়ার ডে’ বা আন্তর্জাতিক কর্ণ যত্ন দিবস। তখন শব্দদূষণকে শ্রবণ হ্রাসের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য প্রচারণা চালানো হতো। কানের বহিরাংশ বা বহিকর্ণ দেখতে ইংরেজি সংখ্যা ৩ বা থ্রির মতো। তাই ইংরেজি বছরের তৃতীয় মাস তথা মার্চ মাসের তৃতীয় দিনকে বিশ্ব কানের যত্ন দিবস হিসেবে পালনের জন্য নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন এই দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
নানা কর্মসূচিতে পালিত হচ্ছে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস আজদায়িত্ব পালনকালে কতটা সুরক্ষা পাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা
সর্বশেষ খবর
জালিয়াতির মামলায় সিটি ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সিটি ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
প্রতিরোধ যোদ্ধাদের খুঁজতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন হাইকোর্টের
প্রতিরোধ যোদ্ধাদের খুঁজতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন হাইকোর্টের
নিউ ইয়র্কে দুই বাংলাদেশি হত্যায় সন্দেহভাজন যুবক গ্রেপ্তার
নিউ ইয়র্কে দুই বাংলাদেশি হত্যায় সন্দেহভাজন যুবক গ্রেপ্তার
বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ
বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড