X
বুধবার, ০৭ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২

মিল্কি হত্যা: এক দশকেও শেষ হয়নি বিচার, ঝুলছে সাক্ষ্য গ্রহণে

আরিফুল ইসলাম
১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

রাজধানীর গুলশান ১ নম্বর শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণিবিতানের সামনে ১০ বছর আগে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পরের দিন মিল্কির ছোট ভাই মেজর রাশেদুল হক খান মিল্কি বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। কিন্তু ১০ বছর পার হলেও এখনও শেষ হয়নি বিচারকার্য। কবে নাগাদ বিচার শেষ হতে পারে, তা-ও বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

হত্যার আড়াই বছর পর দ্বিতীয় দফায় ১৮ আসামির বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষীর জন্য তারিখ ধার্য করেছিলেন আদালত। তবে আইনের কিছু জটিলতার কারণে সাক্ষ্য গ্রহণ হচ্ছে ধীরগতিতে। গত ৭ বছরে মালাটিতে ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন মাত্র পাঁচ জন।

বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেসমিন আরা বেগমের আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ২৯ মে মামলাটির পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত দায়রা জজ ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এরপর মামলাটিতে ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চার জন সাক্ষ্য দেন। এ অবস্থায় ২০২২ সালের ২১ মার্চ মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বদলির আদেশ দেন আইন মন্ত্রণালয়। পরবর্তী সময়ে গত দুই বছরে মাত্র একজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এর প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের আদালতে পাঠানো হয়। প্রতিটা ধার্য তারিখে আদালত থেকে সাক্ষীদের হাজির হতে সমন পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সাক্ষীরা আদালতে হাজির হচ্ছেন না। তারপরও রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সাক্ষীদের হাজির করতে।

তিনি আরও বলেন, জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেও সাক্ষীদের খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। ফলে নিয়মিত হচ্ছে না মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটির দ্রুত বিচার শেষ করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। সাক্ষীরা নিয়মিত আদালতে হাজির হলে বিচার দ্রুত শেষ হবে এবং ভুক্তভোগীর পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।

অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, মামলাটি দীর্ঘদিন ধরে সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। আগের আদালতে চার-পাঁচ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হলেও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এক জনেরও সাক্ষ্য হয়নি। সাক্ষীরা ঠিকমতো না আসায় মামলাটি ঝুলে গেছে। আমরাও চাই বিচার দ্রুত শেষ হোক। প্রকৃত অপরাধীর সাজা হোক, আর নিরপরাধ ব্যক্তিরা মুক্তি পাক।

তারা আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তো আর ১৮ জন জড়িত নয়। হয়তো তিন-চার জন ঘটনা ঘটিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে বাকিদের জড়ানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো এই মামলা থেকে নিরপরাধ ব্যক্তিরা যেন খালাস পায়।

এদিকে মামলার বাদী মিল্কির ছোট ভাই রাশেদুল হক খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

যেভাবে খুন হন মিল্কি
রাজনৈতিক বিরোধ, চাঁদাবাজিসহ নানা বিরোধের জেরে ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশান ১ নম্বর শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণিবিতানের সামনে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ওই সময় বিপণিবিতানের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও চিত্র দেখে মিল্কির একসময়ের সহযোগী যুবলীগের আরেক নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেকসহ ভাড়াটে খুনিরা তাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ জানায়।

ঘটনার পরের দিন মিল্কির ছোট ভাই মেজর রাশেদুল হক খান মিল্কি বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটির এজাহারনামীয় ১১ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও চার থেকে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলাটি তদন্ত করে প্রথমে ১১ জনকে এবং পরে আবার সাত জনকে অভিযুক্ত করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।

মামলার চার্জশিটভুক্ত ১৮ আসামিরা হলেন, মো. সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, তুহিন রহমান ফাহিম, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ। প্রথম চার জন পলাকত রয়েছে। এ ছাড়া অন্য ১৪ জন আসামি জামিনে রয়েছে।

/এনএআর/
সম্পর্কিত
মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে মেয়েকে বিক্রির অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে
হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় আরও ১৭ জন গ্রেফতার
আসামি ধরতে গিয়ে ওসিসহ ৭ পুলিশ হামলার শিকার
সর্বশেষ খবর
মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে মেয়েকে বিক্রির অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে
মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে মেয়েকে বিক্রির অভিযোগ বাবার বিরুদ্ধে
সাত গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনাকে হারিয়ে ফাইনালে ইন্টার
সাত গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনাকে হারিয়ে ফাইনালে ইন্টার
হত্যা মামলায় কারাগারে এনসিপি নেতা, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ 
হত্যা মামলায় কারাগারে এনসিপি নেতা, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ 
৩ সমন্বয়ককে পিটিয়ে আহত করলেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা
৩ সমন্বয়ককে পিটিয়ে আহত করলেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা
সর্বাধিক পঠিত
প্রাথমিকে আরও একটি অধিদফতর হচ্ছে
প্রাথমিকে আরও একটি অধিদফতর হচ্ছে
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
ঈদুল আজহায় ছুটি ১০ দিন, দুই শনিবার খোলা থাকবে অফিস
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য আসছে নতুন আইন
৩০ পেরোনোর পর বলিরেখা আটকাতে এই ৫ টিপস মেনে চলা জরুরি
৩০ পেরোনোর পর বলিরেখা আটকাতে এই ৫ টিপস মেনে চলা জরুরি
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ
শব্দচয়ন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’, হেফাজতের দুঃখপ্রকাশ