ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইউরোপীয়দের প্রস্তাবকে অবাস্তব বলেছেন দেশটির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। শনিবার (২১ জুন) সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, এসব আজগুবি শর্তে অনড় থাকলে কোনও সমঝোতায় পৌঁছানো অসম্ভব। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেছেন, জেনেভার আলোচনায় ইউরোপীয়দের উত্থাপিত প্রস্তাব খুবই অবাস্তব। তারা নিজেদের শর্তে জেদ ধরে থাকলে ইউরোপের সঙ্গে ইরানের সমঝোতায় পৌঁছানো যাবে না।
তবে পশ্চিমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, যত যাই হোক, তেহরান এসব প্রস্তাবনা যাচাই করে পরবর্তী বৈঠকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে।
ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে গত সপ্তাহে হামলার মধ্য দিয়ে অপারেশন রাইজিং লায়ন শুরু করে ইসরায়েল। তাদের দাবি, তেহরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে দূরে রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংঘাত শুরুর পর থেকেই আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইউরোপীয়রা জেনেভায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে কূটনৈতিক উপায়ে সংঘাত নিরসনের চেষ্টা করেছেন।
শুক্রবার ইরান, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আয়োজিত ওই বৈঠকে প্রাথমিকভাবে অগ্রগতি হয়েছিল বলেই ধারণা করা হচ্ছিল। আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সব পক্ষই একমত হয়েছিল। তবে পরবর্তী বৈঠকের নির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করা হয়নি।
বৈঠকে আলোচনা নিয়ে কোনও পক্ষই বিস্তারিত কিছু জানায়নি। তবে ইউরোপীয় কূটনীতিবিদরা বলেছেন, যুদ্ধবিরতি এবং পারমাণবিক ইস্যুতে সমান্তরাল আলোচনা নিয়ে তারা ভাবছেন। মার্কিন সম্পৃক্ততা ছাড়াই তারা প্রক্রিয়া শুরু করতে চান। তাদের প্রস্তাবের মধ্যে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে জোরালো নজরদারি এবং তাদেরকে সীমিত মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে অনুমোদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ইউরোপীয় কূটনীতিবিদরা বলেছেন, পারমাণবিক চুক্তিতে ইরানের আগ্রহের মাত্রা পরখ করে দেখা ছিল বৈঠকের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। তবে ইসরায়েল শিগগিরই হামলা থামাবে বলে তাদের মনে হচ্ছে না আর সংঘাত চলমান থাকলে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা দুষ্কর হয়ে উঠবে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দাবি করেছেন, ইরানি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার আলাপ হয়েছে এবং তারা উভয়েই আলোচনার গতি বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হয়েছেন। তবে পুরো বিষয়টি অনেকটা ইরানের ওপর নির্ভর করছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, তেহরানকে তাদের শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্য প্রমাণ করতে হবে।
ইউরোপীয়দের অনেক আশার বাণী অবশ্য তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রথমে উল্লিখিত ইরানি কর্মকর্তা। তিনি বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিসহ নিজেদের প্রতিরক্ষা খাতে কোনও রকম হস্তক্ষেপ তেহরান মেনে নেবে না। এছাড়া, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধের আবদারে তারা কর্ণপাত করবেন না।
তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, ইরান সবসময়ই কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানায়। তবে যুদ্ধের ছায়াতলে আমরা তা মেনে নেব না।