ঈদের ছুটি শুরু হলে পাল্টে যায় রাজধানী ঢাকার চিত্র। ঈদুল আজহা উপলক্ষে অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। ঈদের ছুটির আগের শেষ কর্ম দিবস ছিল গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) ।
এদিন অফিস করেছেন সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি অফিসের কর্মীরা।
শুকবার থেকে ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে ঢাকা ছাড়েন এক কোটির বেশি মানুষ। ফলে রাজধানীর পুরো চিত্র পাল্টে যায়।
ঈদের ছুটির প্রভাবে রাজধানীর অলিগলিসহ প্রধান সড়কগুলো এখন প্রায় ফাঁকা। রাস্তায় গণপরিবহন নেই বললেই চলে। নেই চিরচেনা যানজট। পুরো সড়কজুড়ে ব্যক্তিগত কিছু যানবাহ ও রিকশার আনাগোনা দেখা যায়। রাজধানীর অনেক বাসিন্দা ফাঁকা শহর ঘুরে ঘুরে উপভোগ করছেন। বাতাসের মধ্যেও পাওয়া যায় স্বস্তির নিঃশ্বাস।
রবিবার (১৬ জুন) বিকালে রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, বাংলামোটর, শাহবাগ, সায়েন্সল্যাব, মিরপুর রোড, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, বিজয়সরণি ও মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা মেলে এমন চিত্র। রাজধানীবাসী বলছেন, এই ছুটি রাজধানীতে থাকা মানুষের জন্য এক আশীর্বাদ। থাকে না যানজট, শব্দদূষণ, কোলাহল বা বিষাক্ত বায়ু। ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ছুটে চলা যায় কোনও ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই।
রাজধানীর আগারগাঁও থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন যাচ্ছেন আজমল হোসাইন। বাস না পেয়ে রিকশায় করে যাচ্ছেন তিনি। আজমল বলেন, ঈদের ছুটির কারণে রাস্তায় বাস নেই। তাই একটু বেশি ভাড়া দিয়ে রিক্শায় করে যাচ্ছি। বেশি টাকা খরচ হলেও যানজট না থাকায় স্বস্তিতে চলাচল করতে পারছি। জার্মান প্রবাসী সোহানা মিমি মোহাম্মদপুর থেকে সিএনজিতে করে মালিবাগ আসেন। তিনি বলেন, স্বাভাবিক সময়ে মোহাম্মদপুর থেকে মালিবাগ আসতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। আজকে মাত্র ১৫ মিনিটে চলে আসলাম। ফাঁকা ঢাকা দেখতে অনেক সুন্দর। সব সময় যদি এমন পেতাম, তাহলে আর বিদেশে যেতাম না। ঢাকায় থেকে যেতাম।
কাকরাইল এলাকায় যানবাহনের জন্য পরিবার নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন মিজানুর রহমান নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, যানজটের কারণে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাওয়া হয় না। ঈদের ছুটিতে রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। তাই পরিবার নিয়ে বড় বোনের বাড়িতে যাচ্ছি। যদিও গণপরিবহন কম থাকায় অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়া লাগে। শাহবাগ মোড়ে কথা হয় ফাহিম নামে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ঢাকার রাস্তা ফাঁকা। কোনও যানজট নেই। তবে গণপরিবহন নেই বললেই চলে। রিকশা আছে। কিন্তু দূরের পথতো আর রিকশায় যাওয়া যায় না। তাই কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছি।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকা সাভার পরিবহনের চালক উজ্জল মিয়া বলেন, আজকে ঢাকার সব রাস্তা ফাঁকাই পাইছি। তবে যাত্রীর সংখ্যা খুবই কম। তাই যাত্রীর জন্য মোড়ে মোড়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে গাড়ি চালিয়ে অনেক মজা পাই। কিন্তু যাত্রী না থাকায় ভাড়া বেশি পাওয়া যায় না। মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি রুটের শিকড় পরিবহন নামে একটি বাসের চালক রুবেল বলেন, অন্যান্য দিন মিরপুর থেকে যাত্রাবাড়ি আসতে চার ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। এই ছুটির দিনে এক থেকে দেড় ঘণ্টার এক ট্রিপ ভাড়া মারা যায়। শুধু সমস্যা হচ্ছে যাত্রী কম।
ঢাকার সড়কে গাড়ির চাপ কম থাকায় অনেকটা স্বস্তিতে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। সায়েন্সল্যাব এলাকায় কথা হয় ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট মাহবুব আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের সময় স্বাভাবিকভাবেই ঢাকায় মানুষের সংখ্যা কমে যায়। ফলে সড়ক অনেকটাই ফাঁকা থাকে। তবে আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছি। মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে যে সব ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তা করা হচ্ছে।
আসাদগেট এলাকায় কথা হয় সার্জেন্ট রাসেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটির সময় রাজধানীতে যানবাহনের চাপ কমে যায়। ব্যক্তিগত যানবাহনের সংখ্যাই বেশি। তবে অনেকে ফাঁকা ঢাকায় আইন অমান্য করে অতিরিক্ত গতিতে মোটরবাইক ও গাড়ি চালান। এছাড়া ফাঁকা ঢাকায় অপরাধ প্রবণতা বাড়ার শঙ্কা থাকে। সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছি। যেকোনও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।
এর আগে সকালে জাতীয় ঈদগাহ মাঠ পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ফাঁকা ঢাকায় মোটরবাইক ও প্রাইভেট কার রেসিংয়ের প্রবণতা দেখা যায়। সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আছে। সড়কে অতিরিক্ত গতিতে মোটরবাইকসহ যেকোনও যানবাহন চললে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’