X
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
২ আষাঢ় ১৪৩২
পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল পাস

‘ব্যাংকের কথা এলে আতঙ্ক চলে আসে’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০২ জুলাই ২০২৪, ২০:৪০আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৪, ২০:৪০

গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি অ-ব্যাংক পরিশোধ সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে ‘পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা বিল-২০২৪’ সংসদে পাস হয়েছে। মঙ্গলবার (২  জুলাই) বিলটি পাসের সময় আলোচনায় অংশ নিয়ে একাধিক এমপি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে বিশৃঙ্খলার সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের কথা এলে সবার মধ্যে আতঙ্ক চলে আসে। হরহামেশাই বড় কোম্পানিগুলোর সুদ মওকুফ করে দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারছে না।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বিলটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করেন। বিলের ওপর আনা জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

তবে সদস্যদের সমালোচনার কোনও জবাব দেননি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ হবে আমলযোগ্য, অজামিনযোগ্য এবং অ-আপসযোগ্য।

বিলে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ‘অগ্রিম পরিশোধ দলিল’ ইস্যু, ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া জনসাধারণের কাছ থেকে যেকোনও ধরনের বিনিয়োগ গ্রহণ, ঋণ প্রদান, অর্থ সংরক্ষণ বা আর্থিক লেনদেন উদ্ভব হয়, এরূপ কোনও অনলাইন বা অফলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা যাবে না। এসব বিধান অমান্য করলে সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড।

বিলে বলা হয়েছে, কোনও ব্যাংক-কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনও পরিশোধ ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ, পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনা বা ইলেকট্রনিক মুদ্রায় পরিশোধ সেবা দিতে পারবে না। একইভাবে কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাইসেন্স নেওয়া ছাড়া কোনও পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনা বা পরিশোধসেবা দিতে পারবে না। এই বিধান লঙ্ঘনের সাজা হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ-সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়, এখন বাংলাদেশে পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা-সংক্রান্ত কোনও আইন নেই। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ অনুযায়ী, বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেমস রেগুলেশনস-২০১৪ এবং রেগুলেশনস অন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার-২০১৪-এর আওতায় সব পরিশোধ ও নিষ্পত্তি ব্যবস্থা পরিচালিত হচ্ছে। এ সংক্রান্ত পৃথক কোনও আইন না থাকায় ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ইলেকট্রনিক লেনদেন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ ছাড়া অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশোধ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণেও বর্তমানে কোনও আইন নেই। ফলে গ্রাহকের স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে ব্যাংকের পাশাপাশি অ-ব্যাংক পরিশোধ সেবাদানকারীদের আইনি কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। এ কারণে এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।

বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র সদস্য পংকজ নাথ বলেন, চার শিল্প প্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়ম না মেনে চারটি প্রতিষ্ঠানের ৬ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ অনুমোদন প্রয়োজন ছিল।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বেসরকারি ব্যাংক এনবিএল-এর কী অবস্থা তাও জানি। সুদ মওকুফের বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের তথ্য ধরে তিনি বলেন, সুদ কখন মওকুফ হয়। প্রাকৃতিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংস, ঋণগৃহীতার মৃত্যু বা দৈব-দুর্বিপাকে কারণে। কিন্তু কিছুই হয়নি। দুর্যোগও হয়নি। খাত বিবরণ করে, খোঁড়া অজুহাত দিয়ে তাদের সুদ মওকুফের সুযোগ দেওয়া হয়। আর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এই লোকগুলোকে চিহ্নিত করতে না পারলে প্রধানমন্ত্রীর মহতি উদ্যোগ ম্লান হয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, একটা বিতর্কিত ব্যক্তির নাম প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে দুর্নীতির কারণে। এক ব্যক্তি রাষ্ট্রের তিন, চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে একটি সরকারি ব্যাংকে থেকে, এনবিআরের পরিচালক, আপিলাত ট্র্যাইবুনালের চেয়ারম্যান। তার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ১৫ বছর আগে। কে তাকে সুপারিশ করলো এনবিআরের পরিচালক বানাতে? কে তাকে করলো ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যাান ও সোনালি ব্যাংকের পরিচালক? শর্ষের মধ্যেই ভূত। এই ভূত প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ সরাতে পারবে না।

জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পিকে হালদার টাকা নিয়ে ভারতে চলে গেছে। অনেক কোম্পানি আজ দেউলিয়া অবস্থায়। যারা লিজিং কোম্পানিতে টাকা রেখে নিঃস্ব, তারা টাকা ফেরত পাবে কিনা, তা এই আইনে আছে কিনা তাও বোধগম্য নয়। আইন হচ্ছে কিন্তু তার প্রয়োগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না। ব্যাঙের ছাতার মতো ব্যাংক হয়ে গেছে। ১০/২০টি ব্যাংক আজ বন্ধের পর্যায়ে আছে। তাদের আর্থিক অবস্থা নাজুক।

স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা ক্লাস ছেড়ে দিয়ে আন্দোলন করছে। তারা সর্বজনীন পেনশনে যুক্ত হতে চাচ্ছেন না। কারও ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া সমীচীন হবে না। সরকারকে বলবো, বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য। তিনি বলেন, আমাদের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের কথা এলে সবার মধ্যে আতঙ্ক চলে আসে।

/ইএইচএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, আইন কী বলে
প্রধানমন্ত্রীর লাভের গুড় পিঁপড়ায় খেয়ে ফেলে: পঙ্কজ নাথ
সংসদে প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নট্রানজিট তো অলরেডি দেওয়া আছে, ক্ষতিটা কী হচ্ছে?
সর্বশেষ খবর
ডেঙ্গুতে একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ২৩৪
ডেঙ্গুতে একদিনে হাসপাতালে ভর্তি ২৩৪
জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় আসকের নিন্দা
জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টাদের গাড়ি আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় আসকের নিন্দা
ব্রিটিশ রাজার সম্মাননা পেলেন সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি
ব্রিটিশ রাজার সম্মাননা পেলেন সিআরপি প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি
রংপুরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান
রংপুরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান
সর্বাধিক পঠিত
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
কক্সবাজারে হোটেল থেকে ৪৮ তরুণ-তরুণী আটক
কক্সবাজারে হোটেল থেকে ৪৮ তরুণ-তরুণী আটক
রেমিট্যান্সের জোয়ারে হঠাৎ ভাটার টান
রেমিট্যান্সের জোয়ারে হঠাৎ ভাটার টান
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
মামলাজটে আটকে আছে প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের পদোন্নতি
মামলাজটে আটকে আছে প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের পদোন্নতি