রাজধানীর বিভিন্ন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলসহ অভিজাত এলাকার স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ায় ব্যবহৃত ব্যক্তিগত গাড়ির কারণে রাস্তায় চাপ থাকে। যানজট লেগে চলাচলের ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারণ যান চালকদের। এই সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিন ধরে স্মার্ট স্কুল বাস সেবা চালুর পরিকল্পনা করছিলো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
ডিএনসিসির আওতাধীন এলাকার স্কুলগুলোতে বাস চালুর বিষয়ে ২০২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত এক সভায় কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রাথমিক কর্মকৌশল নির্ধারণ সংক্রান্ত ওই সভার পর ডিএনসিসি জানায়, ঢাকা শহরে স্কুলবাস চালু হলে যানজট কমবে, দূষণ কমবে, কার্বন নিঃসরণও অনেকাংশে কমবে। এটি বাস্তবায়নে অভিভাবকদের সদিচ্ছাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম ধাপে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চিটাগং গ্রামার স্কুল-ঢাকা, স্কলাস্টিকা স্কুল, স্যার জন উইলসন স্কুল ও বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল টিউটোরিয়াল স্কুলের এই বাস সেবা চালু করার পরিকল্পনা করা হয়। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের সদিচ্ছার অভাবে তা আর সম্ভব হয়নি।
অবশেষে প্রায় দুই বছর পর আজ মঙ্গলবার (৩ জুলাই) স্মার্ট স্কুল বাস সেবা চালুর পরিকল্পনা আলোর মুখ দেখলো। এদিন দুপুরে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ডিএনসিসি স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিসের উদ্বোধন হয়। পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি বাস দিয়ে এই সার্ভিস শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য স্কুলেও এই বাস সার্ভিস চালু করা হবে বলে জানায় ডিএনসিসি।
উদ্বোধনকালে সভাপতির বক্তব্যে ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই স্কুল বাস সার্ভিস চালুর জন্য কাজ করতে হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য বনানী এলাকায় তীব্র যানজট লেগেই থাকে। আমরা প্রাথমিকভাবে বনানী এলাকায় তাই সার্ভিসটি শুরু করার উদ্যোগ নিয়েছি৷ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার মিটিং করেছি। স্কুল বাসের সুবিধা সম্পর্কে বুঝিয়েছি। ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলসহ অন্যান্য সব সরকারি-বেসরকারি স্কুলকে আহ্বান করছি বাস সার্ভিসের আওতায় আসার জন্য। স্কুলগুলোর প্রতি শিক্ষামন্ত্রীও এই বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষায় যে বিনিয়োগ করছেন, স্কুল বাস সার্ভিস চালু করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের যুগান্তকারী অধ্যায় শুরু করেছে। আমরা অনুরোধ করবো বাস সার্ভিসটি শুধু স্কুলভিত্তিক না করে এলাকাভিত্তিক কোনও রুট পরিচালিত করা যায় কিনা। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে বাস দেওয়া কতটা সম্ভব হবে জানি না। তবে বাস শেয়ারিংটা যেন হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। আশপাশের স্কুলের শিক্ষার্থীরা বাস সার্ভিসের সুবিধা পেলে সিটি করপোরেশনের কষ্ট সার্থক হবে।
ডিএনসিসি থেকে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে এই স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস ব্যবহারের জন্য বিদ্যা নিকেতন স্কুলের ৪৬০ জন শিক্ষার্থী পাওয়া গেছে। স্কুলটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী জানুয়ারিতে তিন হাজার শিক্ষার্থী স্কুল বাস সার্ভিসের আওতায় আসবে। এজন্য ২০টি বাস প্রয়োজন হবে।
স্কুল বাস সার্ভিসটি পরিচালনা করতে শিক্ষার্থীদের যেন বেশি ব্যয় না হয় সেজন্য ডিএনসিসি থেকে একটি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও জানান মেয়র আতিকুল ইসলাম।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শবনম জাহান শিলা, হাছিনা বারী চৌধুরী ও খালেদা বাহার বিউটি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান। অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম ও ডিএনসিসির অন্যান্য কর্মকর্তারা।
যেসব সুবিধা থাকবে স্মার্ট স্কুল বাস সেবায়
বনানী বিদ্যা নিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রাথমিক ভাবে চালু হওয়া তিনটি স্কুল বাসের নাম রাখা হয়েছে জবা, গোলাপ, টগর। এই তিনটি ফুলের নামেই ৩ রুটে চলবে এ স্কুল বাসগুলো। শিক্ষার্থীদের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। ভাড়ার পরিমাণ মাসে ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
রুটগুলো হলো– কুড়িল বিশ্বরোড (পুলিশ বক্সের কাছে)- কুড়িল চৌরাস্তা-বসুন্ধরা গেট-নদ্দা কোকাকোলা-নতুনবাজার (ভাটারা থানাসংলগ্ন)-নতুনবাজার (ইউএস অ্যাম্বাসির পূর্ব পাশের ঢাকা চাকা বাসস্ট্যান্ড)-বনানী বিদ্যা নিকেতন।
১০০ ফিট রাস্তায় বসুন্ধরা গেট (২নম্বর ব্রিজ সংলগ্ন) ফ্যামিলি বাজার-ছোলমাইদ/সাঈদনগর-নতুনবাজার বাঁশতলা- শাহজাদপুর নতুনবাজার (ইউএস অ্যাম্বাসির পূর্ব পার্শ্বের ঢাকা ঢাকা বাস স্ট্যান্ড)-বনানী বিদ্যানিকেতন।
সুবাস্তু/উত্তরবাড্ডা (থানারোড)-হোসেন মার্কেট-লিংকরোড-গুদারাঘাট-গুলশান-১-টিবি গেট-ওয়ারলেস গেট-আমতলি (জলখাবার)-বনানী বিদ্যানিকেতন।
ইতোমধ্যে ডিএনসিসি স্মার্ট স্কুল বাস সার্ভিস চালুর জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৩৯টি স্থানে নিজস্ব ব্যয়ে স্কুল বাস স্টপেজ নির্মাণ করেছে। এছাড়াও স্কুল বাস সার্ভিসকে সফল করার লক্ষ্যে ডিএনসিসি প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তাও দেবে।
উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ডিএনসিসি, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) যৌথভাবে কাজ করবে। ডিএনসিসি স্মার্ট স্কুল বাসগুলোকে সব ইন্টারসেকশনে প্রাধান্য দেবে ডিএমপি। বাস সার্ভিসে বাস দেবে বিআরটিসি। এসব বাসে ট্র্যাকিং এবং আরএফআইডি সুবিধা থাকবে। ছাত্রছাত্রীদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে অভিভাবকদের জন্য অ্যাপ থাকবে। সার্ভিসটি মনিটরিং করতে অভিভাবক, স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং ডিএনসিসি’র জন্য পৃথক ড্যাশবোর্ড থাকবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে প্রতিটি বাসে থাকবে নিবেদিত ট্রিপ ম্যানেজার থাকবে এবং প্রতিটি বাসের ভেতর সিসিটিভি ক্যামেরা রাখা হয়েছে। এছাড়া ২৪/৭ হটলাইন সাপোর্ট থাকবে।