X
বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
৫ চৈত্র ১৪৩১

জাতিসংঘের প্রতিবেদনটি উদ্বেগজনক: ইউনিসেফ বাংলাদেশ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:২১আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫:২১

গত বছরের জুলাই ও আগস্টে বাংলাদেশে সংঘটিত ঘটনা সম্পর্কে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক অফিসের প্রতিবেদনটিকে হৃদয়বিদারক ও উদ্বেগজনক বলে মনে করেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন।

সেখানে উল্লেখ করা হয়, প্রতিবেদন অনুযায়ী ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১ হাজার ৪০০ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে শতাধিক শিশু ছিল। ইউনিসেফ এসব মৃত্যুর অনেকের বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রতিবেদন করেছে এবং মোট কত শিশু নিহত বা আহত হয়েছে, তা স্পষ্ট করার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

রানা ফ্লাওয়ারস বলেন, এ সময় নারীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের হুমকিসহ নানা ধরনের জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। শিশুরাও এই সহিংসতা থেকে রেহাই পাইনি। তাদের অনেককে হত্যা ও পঙ্গু করে দেওয়া হয়। নির্বিচারে গ্রেফতার, অমানবিক অবস্থায় আটক করে রাখা এবং নির্যাতনও করা হয়েছে। ধানমন্ডিতে ২০০টি ধাতব গুলি ছোড়ার কারণে ১২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যায়। আরেকটি ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে। সেখানে ছয় বছর বয়সী এক কন্যাশিশু তার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে সংঘর্ষ দেখার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়। এই বিক্ষোভের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন ৫ আগস্টে পুলিশের গুলি চালানোর বর্ণনা দিয়ে আজমপুরের ১২ বছর বয়সী এক ছেলে বলে ‘সব জায়গায় বৃষ্টির মতো গুলি চলছিল’। সে অন্তত এক ডজন মৃতদেহ দেখতে পেয়েছিল সেদিন। 

তিনি বলেন, এই ঘটনাগুলো আমাদের সবাইকে আতঙ্কিত করে তুলছে। বাংলাদেশের শিশুদের সঙ্গে আর কখনই যেন এমনটি না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে ইউনিসেফ বাংলাদেশের সব মানুষের কাছে আহ্বান জানিয়েছে।

প্রাপ্ত ফলাফলের আলোকে এবং এই ঘটনা বিষয়ক ইউনিসেফের আগের বিবৃতিগুলির জেরে, বাংলাদেশের সব নীতিনির্ধারক, গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের শিশু, যুবসমাজ এবং পরিবারগুলিকে শারীরিক ও মানসিক ক্ষত সারিয়ে উঠতে এবং আশা সঞ্চার করে এগিয়ে যেতে সহায়তা করার লক্ষ্যে ইউনিসেফ আহ্বান জানায়।

এ জন্য তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে জরুরিভাবে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে ইউনিসেফ। সেগুলো হলো– যেসব শিশু প্রাণ হারিয়েছে তাদের পরিবারের জন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন; যারা এখনও আটক অবস্থায় আছে এবং যাদের জীবন কোনও না কোনোভাবে এই ঘটনাগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, তাদের সবার জন্য পুনর্বাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবাইকে একজোট হতে হবে; এই সময়টাকে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সার্বিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সব রাজনৈতিক নেতা, দল ও নীতিনির্ধারকদের পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একজোট হতে হবে, যাতে বাংলাদেশের কোনও শিশুকে আর কখনও এমন বিচার বহির্ভূতভাবে ও যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাবে আটক থাকতে না হয়।

জবাবদিহি ও সংস্কারের এই আহ্বানে ইউনিসেফ যেসব কাজে সহায়তা দিতে চায় তার মধ্যে আছে–

১. শিশুদের প্রতি সহিংসতা, নির্যাতন ও বেআইনিভাবে আটকে রাখার ক্ষেত্রে স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করা।

২. বিচার খাতের সংস্কার নিশ্চিত করার মাধ্যমে শিশু সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আদলে বাংলাদেশের আইনি কাঠামোকে সাজিয়ে তোলা।

৩. ভবিষ্যতে শিশু অধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধের জন্য স্বাধীন পর্যবেক্ষণ ও নীরিক্ষণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাসহ শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা।

৪. আমরা সবাই শিশুদের উপযুক্ত এমন বিচার ব্যবস্থা চাই, যেটি শিশুদের অপরাধী হিসেবে দেখবে না, শিশুদের হুমকি হিসাবে বিবেচনার পরিবর্তে তাদের কথা ও ব্যাখ্যা বুঝবে; তাদের যত্ন, সুরক্ষা এবং পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে সে মোতাবেক কাজ করবে। 

৫. যেসব শিশু আদালতে অপরাধ করেছে বলে সাব্যস্ত হয়েছে, তাদের আটক করে না রেখে এর বিকল্প ব্যবস্থা বের করতে হবে; শাস্তি যা শিশুর স্থায়ী ক্ষতি করে, তার পরিবর্তে বিভিন্ন ডাইভারশন প্রোগ্রাম, প্রবেশন এবং পুনর্বাসনমুখী বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে।

৬. শিশু-সংবেদনশীল আইনি প্রক্রিয়াগুলি নিশ্চিত করবে; যেখানে শিশুদের জন্য বিশেষ আদালত, আইনি সহায়তা এবং শিশু-সংবেদনশীল তদন্ত ব্যবস্থা থাকবে।

৭. শিশু ভুক্তভোগীদের রক্ষা করবে; ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে জবাবদিহির ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে, যাতে ভবিষ্যতে শিশুদের অধিকার এমন লঙ্ঘন না হয়।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ এখন বড় এক পরিবর্তন, প্রত্যাশা ও রূপান্তরের দ্বারপ্রান্তে। সংস্কার কমিশনগুলি বর্তমানে পুলিশ, আদালত ও বিচার ব্যবস্থার পুনর্নির্মাণে কার্যকরী উপায় খুঁজে বের করতে যেভাবে কাজ করছে, তাতে তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও আরও ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ তৈরির সুযোগ রয়েছে।

/এসও/আরকে/
সম্পর্কিত
ভারতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যবস্থা চায় জামায়াত
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরে এক ঢিলে তিন পাখি
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ অনুসরণীয় উদাহরণ তৈরি করেছে: গুতেরেস
সর্বশেষ খবর
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে, আশা তারেক রহমানের
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকেই সর্বাধিক অগ্রাধিকার দেবে, আশা তারেক রহমানের
কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক সাদ্দাম গ্রেফতার
কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক সাদ্দাম গ্রেফতার
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় দুজনকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় দুজনকে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ
জামায়াতের আমিরের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
জামায়াতের আমিরের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
সর্বাধিক পঠিত
প্রশাসনে চলছে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা
প্রশাসনে চলছে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা
সরকারের হস্তক্ষেপে ৭৫% কমলো এয়ার টিকিটের মূল্য
সরকারের হস্তক্ষেপে ৭৫% কমলো এয়ার টিকিটের মূল্য
নাজমুল হাসান পাপনের দেখা মিললো লন্ডনে
নাজমুল হাসান পাপনের দেখা মিললো লন্ডনে
রাজধানীতে ধর্ষণের অভিযোগে যুবককে গণপিটুনি, আহত ১২ পুলিশ
রাজধানীতে ধর্ষণের অভিযোগে যুবককে গণপিটুনি, আহত ১২ পুলিশ
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় প্রাথমিকের শিক্ষক গ্রেফতার
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় প্রাথমিকের শিক্ষক গ্রেফতার