‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ ব্যানারে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রায় পুলিশের বাধা ও সংঘর্ষের ঘটনায় ডিএমপির রমনা বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) আবদুল্লাহ আল মামুনকে প্রত্যাহার ও জড়িতদের বিচার দাবি জানিয়েছে ধর্ষণের বিচারের দাবিতে তৈরি হওয়া প্ল্যাটফর্মটি।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আয়োজকরা বলেন, দেশে খুন, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধপ্রবণতাসহ নারী নিপীড়নের মাত্রা অনেক বেড়েছে। ধর্ষণ ও নিপীড়ন নিত্যনৈমিত্তিক খবরে পরিণত হয়েছে। ধর্ষণ ও শারীরিক নিপীড়নের পাশাপাশি পথে-ঘাটে, সাইবার স্পেসে শারীরিক-মানসিক হেনস্তা, ক্যাট-কলিং, ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা দেশজুড়ে নারীদের জন্য এক অসহনীয় এবং অনিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত জনগণের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইডেন শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ৯ দফা দাবিতে পদযাত্রা ও প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়ার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ প্রথমে হামলা করে। তারপর ডিএমপির রমনা বিভাগের সিভিল ড্রেসে থাকা এসি মামুন ন্যাক্কারজনকভাবে পেছন থেকে অতর্কিত হামলা চালান। এই হামলায় পুলিশ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করেছে। নারীদের হেনস্তা করেছে, সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন; যা আওয়ামী আমলের পুলিশি রাষ্ট্রেরই চিহ্ন বহন করে।’
তিনি বলেন, ‘এই হামলায় সুমাইয়া আক্তার, মেঘমল্লার বসু, আহমেদ আরাফ, তাসমিয়া নেবুলা, সাজেদুল ইসলাম, অংঅংসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হন। ধর্ষণ ও নারী নিপীড়নবিরোধী একটা মিছিলকে আটকানোর জন্যে ডিএমপি প্রথমে কোনও নারী পুলিশ রাখেনি, পুরুষ পুলিশরা নারী শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস কায়দায় হামলা করে। আন্দোলনকারীরা আত্মরক্ষার্থে পুলিশকে মোকাবিলা করেছে এবং কয়েকজন পুলিশ সদস্যও এতে আহত হন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পুলিশি হামলার পর আমরা দেখলাম, ন্যায্য আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে একদল মানুষ সঙ্ঘবদ্ধভাবে উসকানিমূলক অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। বিভিন্ন ছবি ও খণ্ডিত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে এই হামলাকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই মিথ্যা, খণ্ডিত, অপপ্রচারে অনেকেই বিভ্রান্তও হয়েছেন। বিভ্রান্ত না হয়ে সবাকেই ধর্ষণ ও সব ধরনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাই।’
সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘বুধবার বিকালে আমরা লক্ষ্য করলাম, পুলিশ রমনা মডেল থানায় সেই আন্দোলনকারী এবং আহত এক সাংবাদিকসহ ১২ শিক্ষার্থী এবং ৭০ থেকে ৮০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির নামে দাঙ্গা সৃষ্টির মিথ্যা মামলা করেছে। আরও অবাক হতে হয়, যখন দেখি সেই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিল না, এমন কয়েকজনের নামেও মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ক্ষমতার অপব্যহার করে গণহারে এই মামলা করেছে। আমরা এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশেরে জানানো দাবিগুলো হলো– ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সংগঠকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অন্যায্য মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; নারী আন্দোলনকারীসহ একাধিক আন্দোলনকারীদের শারীরিকভাবে নিপীড়ন এবং শান্তিপূর্ণ ও ন্যায্য আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করা পুলিশ কর্মকর্তা এসি মামুনের অপসারণ এবং তদন্ত সাপেক্ষে হামলায় জড়িত অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা আনতে হবে; স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, ধর্ষক-নিপীড়কদের বিচারসহ ৯ দফা মেনে নেওয়া এবং সংঘবদ্ধ ও উসকানিমূলক অপপ্রচার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।