বিটিআরসি লাইসেন্স সংস্কারের নামে দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান বন্ধের অযৌক্তিক পলিসি গ্রহণ করতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাসোসিয়েশন অব আইসিএক্স অপারেটরস অব বাংলাদেশের (এআইওবি) জেনারেল সেক্রেটারি লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমিনুর রহমান (অব.)।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে এসোসিয়েশন অব আইসিএক্স অপারেটরস অব বাংলাদেশ আয়োজিত ‘নতুন নীতিমালার নামে আইসিএক্স ধ্বংস নয়, সম্ভাবনার দ্বার খুলুন ও কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লে. কর্নেল আমিনুর রহমান (অব.) বলেন, বিটিআরসি লাইসেন্সের সংস্কারের নামে এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে দেশের টেলিকম অবকাঠামো, জাতীয় নিরাপত্তা, ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব এবং হাজার হাজার কর্মীর কর্মসংস্থান চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। আমাদের মতো সহস্রাধিক প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকের চাকরি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এতে হাজার হাজার পরিবারের জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে এবং দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে খসড়া টেলিযোগাযোগ নীতি ২০২৫ -কে জাতীয় স্বার্থ, কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি বলে অভিযোগ করেছে এআইওবি। এসময় জানানো হয়, টেলিযোগাযোগ নীতি ২০২৫ কার্যকর হলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যত টিকে থাকতে পারবে না, যা একটি সম্ভাবনাময় খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। এর ফলে বিদেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ঝুঁকি তৈরি হবে। প্রস্তাবিত কাঠামো অনুযায়ী টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রণ মূলত বিদেশি বড় কোম্পানিগুলোর হাতে চলে যাবে। যার ফলে বিদেশি কোম্পানিগুলোর নির্ভরতা কমানোর আর কোনও সুযোগ থাকবে না। এর ফলে ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তার ওপর আঘাত আসবে। টেলিকম নেটওয়ার্কে বিদেশি নিয়ন্ত্রণের ফলে দেশের সাইবার নিরাপত্তা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় তথ্য ব্যবস্থাপনা হুমকির মুখে পড়বে, যা দেশের সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি।
আইসিএক্সের কাজ হলো—ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে বা আইজিডাব্লিউগুলোর মাধ্যমে বিদেশ থেকে যেসব কল আসে তা মোবাইল ও অন্যান্য টেলিফোন (এএনএস বা অ্যাকসেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস) অপারেটরের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
একটি মোবাইল কল থেকে আইসিএক্স কত টাকা পায় তা তুলে ধরে এআইওবির কোষাধ্যক্ষ ও জীবনধারা সলিউশন লিমিটেডের গ্রুপ সিইও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. খুরশিদ আলম (অব.) বলেন, মোবাইল কলের ২ টাকা ৪০ পয়সার মধ্যে আইসিএক্স পায় ৪ পয়সা। দুই পয়সা বিটিআরসিকে দিয়ে দিতে হয়৷ এই দুই পয়সার মধ্যে ১ পয়সা লাইসেন্স, ট্যাক্স, ভ্যাট বাবদ চলে যায়। আমাদের কাছে থাকে কেবল এক পয়সা।
এসময় অন্যান্য বক্তারা জানান, নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে অবৈধ ভিওআইপি ও রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নীতির দুর্বলতা অবৈধ ভিওআইপি কার্যক্রমকে বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে সরকার বিপুল রাজস্ব হারায়। এছাড়াও নতুন নীতির ফলে গ্রাহক পর্যায়ে খরচ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও রয়েছে। প্রতিযোগিতা হ্রাস পেলে কল রেট ও ইন্টারনেট ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, যা সরাসরি সাধারণ জনগণের ওপর আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে।