প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন সরকারি কর্মচারী ও অন্যান্য পেশাজীবী সংগঠন। ফলে জনসেবা বিঘ্নিত হচ্ছে এবং জনভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও স্পষ্ট কোনও সমাধানের দিকনির্দেশনা আসেনি।
রবিবার (২৫ মে) সচিবালয়ে ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ’-এর ব্যানারে কর্মচারীরা ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’-এর খসড়া অনুমোদনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন। তারা এটিকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যা দিয়ে রেশন ও সচিবালয় ভাতা চালুরও দাবি জানান। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর ও মহাসচিব নিজাম উদ্দিন আহমেদ। আন্দোলনকারীরা আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের সঙ্গে আলোচনা করলেও কোনো সমাধান পাননি বলে জানান।
এদিকে, একই দিন বেলা ১১টা থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে অবস্থান নেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থক ও সিটি করপোরেশনের কিছু কর্মচারী। তারা ইশরাককে মেয়র হিসেবে শপথের দাবি জানাচ্ছেন। নগর ভবনের ফটকগুলোতে তালা ঝুলিয়ে ‘ঢাকাবাসীর’ ব্যানারে মিছিল করা হচ্ছে। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বাবু জানান, আদালতের রায়ের ভিত্তিতে এখনও শপথ না হওয়ায় তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে নগর ভবনের সব ধরনের নাগরিকসেবা বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে, দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাত দফা দাবিতে—অভিন্ন চাকরি বিধি বাস্তবায়ন, হয়রানি বন্ধ ও মামলা প্রত্যাহার—সহ অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রধান মুফতি ফয়জুল করিম রবিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দেখা করেন। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎসেবা চালু রেখে তারা ঢাকায় শহীদ মিনারে অবস্থান করছেন এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।
এছাড়া, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা সোমবার (২৬ মে) থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি শুরু করতে যাচ্ছেন। গত ৫ মে থেকে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি দিয়ে শুরু হওয়া এ আন্দোলন ধাপে ধাপে অর্ধদিবস কর্মসূচি পর্যন্ত গড়িয়েছে। এবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ ও মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি জানিয়েছেন, আদালতের আদেশ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড দেওয়া হলেও সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেড প্রস্তাব করা হচ্ছে, যা তারা মানতে নারাজ। তারা জানিয়েছেন, প্রয়োজনে আরও কঠোর আন্দোলনে যাবেন।
এভাবে একাধিক জায়গায় একযোগে আন্দোলন ও অবস্থান কর্মসূচির কারণে সেবা কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটছে। এখনই সরকারের পক্ষ থেকে সমাধানমুখী কোনো সিদ্ধান্ত না এলে পরিস্থিতি আরও জটিল হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।