পবিত্র ঈদুল আজহার দীর্ঘ ছুটির শেষ দিন আজ শনিবার (১৪ জুন)। শেষ মুহূর্তে কর্মজীবী মানুষ কর্মস্থলে ফেরার জন্য রাজধানীমুখী হচ্ছেন। ঈদের পর থেকেই রাজধানীতে ফেরার ঢল শুরু হলেও আজ যাত্রীচাপ সবচেয়ে বেশি। রাজধানীর গাবতলীসহ বিভিন্ন আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে দেখা গেছে ফেরতযাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা যাত্রীরা বলছেন, পুরো সড়কে খুব বেশি না হলেও তাদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যমুনা সেতুতে।
অন্যদিকে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফেরার পথে যানজট খুব বেশি না থাকলেও রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে যানবাহনের ধীরগতি রয়েছে। এসব রুটে ঢাকায় আসা যাত্রীরা বলছেন, টিকিটের জন্য তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কর্মস্থলে ফিরতে আসা মানুষ বাস থেকে দল বেঁধে নামছেন। কিছু সময় পরপর বিভিন্ন জেলা থেকে বাস এসে পৌঁছাচ্ছে।
দিনাজপুর থেকে ঢাকায় ফেরা বেসরকারি চাকরিজীবী আবু ইবনুল আজিজ জানান, ‘আজ ছুটির শেষ দিন। সকাল ৮টায় ঢাকায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও এসেছি সাড়ে ১২টায়। যমুনা সেতুতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়েছে। চার লেনের গাড়ি এসে দুই লেনে আটকে যাচ্ছে, বাসগুলো নিয়ম মানছে না। ফলে সেখানে বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। তার ওপর তীব্র গরমে যাত্রা আরও কষ্টকর হয়ে উঠেছে।’
একই রুটে যাত্রা করেছেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নাইব হাসান নিয়ম। তিনি বলেন, ‘আমার অফিস শুরু সোমবার, তাই একদিন আগেই ফিরছি। আগেও ঈদে বাড়ি গিয়েছি, কিন্তু যমুনা সেতুতে এত ভোগান্তি কখনও হয়নি। টোল প্লাজায় ৪-৫ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে নজর দেওয়া, তাহলে আমাদের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হবে না।’
অন্যদিকে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা পোশাক শ্রমিক ইমন আলী বলেন, ‘আগামীকাল থেকে অফিস, তাই আজই ফিরেছি। দীর্ঘ ছুটিতে পরিবারের সঙ্গে ভালো সময় কাটিয়েছি। তবে ফেরার পথে তেমন কোনো সমস্যায় পড়িনি।’
এদিকে ঈদের সময় ছুটি না পাওয়া কিছু মানুষ এখনও পরিবারের কাছে যাচ্ছেন। তাদেরই একজন বাসচালক মো. আলমাস। তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় ছুটি পাইনি, ডিউটি করতে হয়েছে। এখন ছুটি পেয়েছি, তাই বাড়ি যাচ্ছি। আমার বাড়ি মাদারীপুর।’
রংপুরগামী ডিপজল এন্টারপ্রাইজের চালক মো. মাসুদ বিশ্বাস বলেন, ‘এখন যাত্রী কম, তাই শুধু গাড়ি চালু রাখার জন্যই যাত্রী নিয়ে যাচ্ছি। ফিরতি পথে বাস ফুল হয়েই আসছে।’
গাবতলীর কোটালীপাড়া স্টার এক্সপ্রেসের কাউন্টার মাস্টার আল মাসুদ বিন বাপ্পী বলেন, এবার কোরবানির ঈদে ভালোসংখ্যক যাত্রী পেয়েছি। সময়মতো যাত্রীদের পৌঁছাতে পেরেছি। রোজার ঈদের তুলনায় এবার যাত্রীর চাপ বেশি ছিল। আজ ছুটি শেষ হচ্ছে, ফলে ফিরতি যাত্রায় বাসগুলো সিটভর্তি যাত্রী নিয়েই ঢাকায় আসছে। তবে এখনও কিছু মানুষ ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন, সংখ্যাটা কম—প্রতিটি বাসে ১২-২০ জন করে যাত্রী হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ঈদযাত্রার শুরুতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে কয়েকগুণ যানবাহনের চাপ দেখা দেয়। গত ৪ জুন (বুধবার) মধ্যরাত থেকে এ সড়কে যানজট শুরু হয়। ৫ জুন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়, যার ফলে ঘরমুখো মানুষ পড়েন চরম দুর্ভোগে।
আর রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে, পশ্চিম অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় প্রবেশ করছে গণপরিবহন। প্রতিটি বাসই যাত্রীতে পূর্ণ। ঢাকার প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী বা সায়েদাবাদে বাস থেকে যাত্রীরা নেমে লোকাল পরিবহন, রিকশা, সিএনজিতে করে বাসায় ফিরছেন। সেজন্য রাজধানীর প্রবেশমুখ যাত্রাবাড়ী থেকে কাজলায় রয়েছে যানজট। তবে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে সায়েদাবাদ রোডে খুবই ধীর গতিতে পার হতে পারছে।
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইল থেকে এসেছে আলী ইমাম। তিনি বলেন, এবার দীর্ঘ ছুটিতে বাড়ি ছিলাম। কাল (রবিবার) থেকে অফিস শুরু। সেজন্য আজই পরিবারসহ ফিরেছি।
দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে জেলা কুমিল্লা থেকে ফিরেছে সাইফুর রহমান। তিনি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, কাল থেকে ক্লাস চলবে, তিশা পরিবহনের বাসে এসেছি। এখান থেকে আরেকটা বাসে করে বাসায় ফিরবো। বাসের জন্য অপেক্ষায় করছি।
যাত্রার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দুই ঘণ্টা সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে টিকেট কেটেছি। বাসই নেই।
যাত্রাবাড়ী থানার ট্রাফিকের সার্জেন্ট আল আমিন বলেন, গতকাল (শুক্রবার) জুমার নামাজের পর থেকে ঢাকার বাইরে থেকে পরিবহন বেশি আসছে। এখনও (শনিবার দুপুর) সেই চাপ আছে। আমরা ৩০ থেকে ৩৫ জন সার্জেন্ট ও কনস্টেবল আছি। যানজট যাতে না বাঁধে, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। এ চাপ আজ রাত ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একসঙ্গে অনেক বাস আসছে। প্রবেশ মুখে থামিয়ে অল্প অল্প করে ছাড়া হয়। একসঙ্গে সব ছাড়লে সব আটকে যাবে।
সায়েদাবাদ এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আমিনুর রহমান বলেন, আগামীকাল থেকে সব প্রতিষ্ঠানই খোলা থাকবে। সেজন্য গতকাল বিকাল থেকে এ এলাকায় যাত্রীদের চাপ বেশি।