X
শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫
৫ আষাঢ় ১৪৩২

‘রোহিঙ্গাদের ঢল নামার তথ্য আগে থেকেই বাংলাদেশের কাছে ছিল’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১৯ জুন ২০২৫, ২০:২১আপডেট : ১৯ জুন ২০২৫, ২২:৪৬

২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার তথ্য আগে থেকেই বাংলাদেশের কাছে ছিল। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী স্রোত নামার অন্তত দুই সপ্তাহ আগে মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাস সরকারকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিল। একইসঙ্গে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে জানান ওই সময়কার মিয়ানমারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. সুফিউর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে নীতি গবেষণা কেন্দ্র আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা, রাখাইন ও মিয়ানমারের পরিপ্রেক্ষিত: বাংলাদেশের ঝুঁকি’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। সেমিনারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসির, গবেষক ও শিক্ষক মাহবুবুল হক ও ডেইলি স্টারের কূটননৈতিক প্রতিবেদক পরিমল পালমা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নীতি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান নির্বাহী ড. শাকিল আহমেদ।

সাবেক রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান বলেন, ‘আমরা দূতাবাস থেকে নির্দিষ্টভাবে তথ্য দিয়েছিলাম। রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা হয়েছিল ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট। আমি আমার নিজের লেখা একটি চিঠি ১১ আগস্ট (ঢাকায়) পাঠিয়েছিলাম। সেটির শিরোনাম ছিল ‘নিউ ফেজ অব ভলাটিলিটি ইন রাখাইন অ্যান্ড ইটস পসিবল ইমপ্লিকেশন।’

তিনি বলেন, ‘এটি একটি লম্বা চিঠি। এর শেষ প্যারাতে বলেছি, আমাদেরকে আরেকটি রোহিঙ্গা ঢলের মুখোমুখি হতে হবে। এবারের ঢলে বুথিডং এবং রাথিডং গ্রামের রোহিঙ্গারা থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে যে দুটি রোহিঙ্গা ঢল এসেছিল, সেগুলো এসেছিল মংদু থেকে এবং সেটি বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে খুব কাছে। কিন্তু বুথিডং এবং রাথিডং বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরে। আমি নির্দিষ্ট করে এটি বলতে পেরেছি।’

সাবেক রাষ্ট্রদূত সুফিউর রহমান বলেন, ‘আমি তখন বলেছিলাম, উত্তর রাখাইনে উত্তেজনা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারকে যেন অনুরোধ করা হয়। একইসঙ্গে রোহিঙ্গা ঢল ঠেকানোর জন্য যা যা করা দরকার, সেই পদক্ষেপ নিতে বলেছিলাম। সীমান্তে কঠোর নজরদারিও বাড়াতে বলেছিলাম।’

তিনি জানান, ২৫ আগস্ট (২০১৭) যেদিন হামলা হলো, সেদিন আমি জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের আগে রাখাইনে সেফ জোন ঘোষণা করার জন্য বলেছিলাম। আন্তর্জাতিকভাবে রাশিয়া ও চীনের বিরোধিতার কারণে সেফ জোন ঘোষণা করা যায়নি। কিন্তু তখন আমরা যেটি করেছিলাম, বাংলাদেশের রাষ্ট্র পলিসিতে সেফ জোনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম।

মানবিক করিডর

এখন যে মানবিক করিডরের বিতর্ক হচ্ছে– সেটি না জেনেই করা হচ্ছে বলে জানান সুফিউর রহমান।

তিনি বলেন, ‘এটির প্রস্তাব ২০১৭ সালেই দেওয়া হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল— আমরা মংদু ও বুথিডংয়ে ত্রাণ পণ্য সরবরাহ করবো। এই পণ্য সিতওয়ে বা মংদু থেকে নিতে হবে। এখন যে অঞ্চল দিয়ে এই সরবরাহ যাবে, সেটি নিরাপদ হতে হবে এবং মানবিক কর্মীদেরও নিরাপত্তা দিতে হবে।’

এই প্রস্তাবটি ছিল সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের জন্য এবং এটি দেওয়া হয়েছিল রোহিঙ্গাদেরকে মিয়ানমারে ধরে রাখার জন্য। সুতরাং, মানবিক করিডর বললেই মাথায় আগুন লেগে যাওয়ার কোনও কারণ নেই বলে তিনি জানান।

সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, ‘তখন জাতিসংঘ এটি করতে রাজি না হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার আইসিআরসি’র (রেড ক্রস) মাধ্যমে এই মানবিক করিডর করতে চেয়েছিল। আইসিআরসি’র কাজ হচ্ছে সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে যারা যুদ্ধ করছে না, তাদেরকে রক্ষা করা। আমরা যদি রোহিঙ্গাদের তখন নিরাপত্তা দিতে পারতাম, তাহলে ১১ লাখ রোহিঙ্গার এই বোঝা বইতে হতো না।’

‘মানবিক করিডর একটি ক্ষেত্রে সফল হয়নি বলে সব সময়ে জন্য খারাপ হয়ে গেছে, এটি সে ধরনের বিষয় নয়। আমি অত্যন্ত হতাশ, মানবিক করিডর নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এটি হওয়া উচিত ছিল না,’ বলে তিনি জানান।

সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ভুল ছিল

২০১৭ সালে বাংলাদেশে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া ভুল ছিল। এ কারণে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি এবং আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।

তারই ধারবাহিকতা এখনও রয়ে গেছে। বাংলাদেশের তরফ থেকে অপর্যাপ্ত উদ্যোগ বা অসৃজনশীল কূটনীতির ঝুঁকি রয়েছে বলেও জানান সুফিউর রহমান।

তিনি বলেন, ‘রাখাইনে সব জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষাকে বিবেচনায় না নিলে— ভবিষ্যতে প্রভাব বিস্তারকারী রাজনৈতিক সত্ত্বার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে পারে।’

কালাদান প্রকল্প

সুফিউর রহমান ২০১৫ সালে যখন মিয়ানমারে রাষ্ট্রদূত ছিলেন, তখন কালাদান প্রকল্পে বাংলাদেশকে যুক্ত করার জন্য তিনি মিয়ানমারকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বান্দরবনের থানচির উত্তরে মোদক পাহাড় থেকে ১৪ কিলোমিটার দুরে রাস্তা তৈরি করলে কালাদান প্রকল্পের নির্মাণাধীন রাস্তার সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হতে পারতো। সেটি হলে ভারতমুখী স্থল-নির্ভরশীলতা থেকে বাংলাদেশ বের হয়ে আসতে পারতো বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ‘সব বিষয়কে নেতিবাচকভাবে দেখা ঠিক নয়। ওই সময়ে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, কিন্তু ২০১৬ ও ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা ঢলের কারণে সেটি (কালাদান প্রকল্পে যুক্ত হওয়া) আর অগ্রসর হয়নি।’

/এসএসজেড/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
বিজিবির ‘চ্যালেঞ্জে’ পুশইন করা ব্যক্তিকে ফেরত নিতে বাধ্য হলো বিএসএফ
ভারতে ঢুকে পড়া কিশোরকে ফেরত দিয়েছে বিএসএফ
আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা: ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিবেদন
সর্বশেষ খবর
ইডেনের সেই ছাত্রীকে কারাগারে বিয়ে করেছেন নোবেল
ইডেনের সেই ছাত্রীকে কারাগারে বিয়ে করেছেন নোবেল
ইরান যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প: হোয়াইট হাউজ
ইরান যুদ্ধে জড়ানোর বিষয়ে আগামী দুই সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেবেন ট্রাম্প: হোয়াইট হাউজ
হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ১০ মাস পর হত্যা মামলা, বেরোবির শিক্ষক কারাগারে
হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর ১০ মাস পর হত্যা মামলা, বেরোবির শিক্ষক কারাগারে
প্রয়াত সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়
প্রয়াত সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়
সর্বাধিক পঠিত
আর চুপ থাকার পরিস্থিতি নেই, ইশরাক ইস্যুতে উপদেষ্টা আসিফ
আর চুপ থাকার পরিস্থিতি নেই, ইশরাক ইস্যুতে উপদেষ্টা আসিফ
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে মহাজোটের ২ শরিককে আমন্ত্রণ, নুর ও ইরানের ক্ষোভ
ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে মহাজোটের ২ শরিককে আমন্ত্রণ, নুর ও ইরানের ক্ষোভ
নানার সূত্রে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি জায়ান হাকিম
নানার সূত্রে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি জায়ান হাকিম
ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প
ইরানে হামলার পরিকল্পনায় অনুমোদন দিয়েছেন ট্রাম্প
যেন আকাশ ভেঙে পড়ছিল, ইসরায়েলি হামলার বর্ণনায় তুর্কি সীমান্তে ইরানিরা
যেন আকাশ ভেঙে পড়ছিল, ইসরায়েলি হামলার বর্ণনায় তুর্কি সীমান্তে ইরানিরা