বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন তার সমর্থকরা। একইসঙ্গে ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বড় একটি অংশ এই আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছেন। তারা মূল ফটক আটকানোর পাশাপাশি ডিএসসিসি সব বিভাগের অফিস গেটে তালা ঝুলিয়ে রেখেছে। যার ফলে বন্ধ রয়েছে সেবা কার্যক্রম, ভোগান্তিতে পড়েছে সেবা প্রার্থীরা।
নগর ভবনে চলমান আন্দোলনের কারণে ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, ওয়ারিশ ও চারিত্রিক সনদ, জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধসহ বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও স্থবির হয়ে পড়েছে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। অল্প বৃষ্টিতে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা। এর মাঝে বেড়েছে মশার উপদ্রব। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
ডিএসসিসির এমন পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ নগরবাসী। ক্ষোভ প্রকাশ করে আরমান হোসেন নামের দক্ষিণ সিটির বংশালের বাসিন্দা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য এক মাস ধরে সিটি করপোরেশনের বারান্দায় ঘুরছি। কিন্তু কোনোভাবেই তা করতে পারছি না। নগর ভবনের সব দরজায় তালা। কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই।
পুরান ঢাকার আরমানিটোলার বাসিন্দা শাহিদা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেয়ের পাসপোর্ট করাতে গিয়ে দেখি জন্মনিবন্ধন সনদে একটি ভুল আছে। সেটা ঠিক করতে নির্ধারিত ফরমে সংশোধন করেছি। কিন্তু ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসে জমা দিতে পারছি না। নগর ভবনে গিয়েছি, সেখানে তালা, কেউ নেই। তাই জমা দিতে পারিনি।
পুরান ঢাকার এই বাসিন্দা বলেন, নগর ভবন তালাবদ্ধ করে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এই আন্দোলনের কোনও যৌক্তিকতা নেই। দুঃখজনক বিষয় হলো সরকারের সম্মতিতেই এই আন্দোলন চলছে। যদি তা না হতো তাহলে এতদিন তো এই আন্দোলন চলার কথা না। কেউ জনদুর্ভোগের কথা ভাবছে না।
এদিকে শান্তিনগরের বাসিন্দা এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকারি কোয়ার্টারে থাকি, কিন্তু মশার যন্ত্রণায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। আতঙ্কে আছি ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে। ঠিকমতো মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে না। আগের চেয়ে মশার উপদ্রব বেড়েছে। বাচ্চাদের ডেঙ্গু হওয়ার আশঙ্কায় প্রতিনিয়ত ভয়ে আছি।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন যে দশটি আঞ্চলিক কার্যালয় আছে সেখানেও সেবা পাচ্ছেন না নগরবাসী। প্রতিনিয়ত সেবা প্রার্থীরা নগর ভবন ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে ফিরে আসছেন সেবা না পেয়ে। লালবাগের বাসিন্দা হাজী মোতালেব হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় এবং বিভিন্ন আন্দোলনে ইশরাক হোসেনের ভূমিকা অতুলনীয়। ইয়াং জেনারেশনের আইডলে পরিণত হয়েছিল সে। কিন্তু এখন ক্ষমতার লোভ পুরো নগরবাসীকে কষ্ট দিচ্ছে, যা একেবারে অপ্রত্যাশিত।
ডিএসসিসির সেবা বিঘ্নে একে অপরকে দোষারোপ করছেন আসিফ-ইশরাক
ডিএসসিসির নগর ভবন তালাবদ্ধ করে মেয়র পদে শপথ গ্রহণের চলমান আন্দোলনের কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনগণ দীর্ঘদিন ধরে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভুঁইয়া।
তিনি বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইস্যুতে স্থানীয় সরকার বিভাগ কোনও আইন ভঙ্গ করেনি। বিষয়টি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গেজেটের মেয়াদ এবং পরবর্তী সময়ে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শপথ দেওয়ার কোনও আইনি সুযোগ নেই। জোর করে নগর ভবন দখল নিয়ে শিগগিরই সরকার ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান এই উপদেষ্টা।
অন্যদিকে তার এই বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বয়স এবং অভিজ্ঞতা কম হওয়ায় তিনি জানেন না সিটি করপোরেশনের কোন দফতরে কী ধরনের সেবামূলক কাজ হয়ে থাকে। আমরা সব ধরনের জরুরি সেবা চালু রেখেছি। বরং সরকার বিভিন্ন উপায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সেবায় বাধা সৃষ্টি করছে। আমরা নগরবাসীকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, অথচ সরকার থেকেই সেই সেবায় বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছে।
ইশরাকের অভিযোগের তীর উপদেষ্টা আসিফের দিকে
গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক বিবৃতিতে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন দাবি করেছেন, তাকে মেয়র পদে শপথ না পড়ানোর জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দায়ী। এমনকি আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে মেয়র ইস্যুতে ‘অসত্য এবং বিভ্রান্তিমূলক তথ্য’ গণমাধ্যমে উপস্থাপনের অভিযোগও করেন তিনি। এ কারণে তিনি উপদেষ্টা আসিফের পদত্যাগের দাবিও জানান।
আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে ‘আর্থিক ও রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার’ অভিযোগ জানিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা তার পছন্দের এক ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগ করে আর্থিক ও রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সজীব ভূইয়া দেশের জনগণের ম্যান্ডেটকে অবজ্ঞা করেছেন। গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন—যা প্রতারণার শামিল।
আদালতের রায়ের পরেও শপথ না পড়ানোর বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল বিগত ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের ফলাফল ও পরবর্তী সময়ে ৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত গেজেট বাতিল করে আমাকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে এবং ১০ দিনের মধ্যে আমাকে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়কে নির্দেশ দেন।
এই নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন ১০ দিনের মধ্যে ২৭ এপ্রিল সংশোধিত গেজেট প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠিয়ে দেয়। সংশোধিত গেজেট পেয়ে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন ছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগের কিছুই করণীয় নেই। কিন্তু আসিফ নানান প্রশ্ন তুলে কালবিলম্ব করে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে বিরত আছে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, গত সোমবার (১৬ জুন) স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, শপথ গ্রহণের বিষয়টি বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় গেজেটের মেয়াদ শেষ হওয়ায় শপথ পড়ানো যায়নি। তার এ কথা সত্য হলে ভবিষ্যতে কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি আর শপথ পড়ার সুযোগ পাবেন না। অর্থাৎ বিজয়ী প্রার্থীর নামে গেজেট প্রকাশিত হলে পরাজিত প্রার্থী শপথ না পড়ানোর জন্য হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট মামলা দায়ের করবে। আর ওই রিট মামলা অনিষ্পন্ন থাকলে গেজেটে উল্লিখিত ৩০ দিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে কোনও জনপ্রতিনিধি শপথ পড়ার সুযোগ পাবে না।
আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বয়সে খুবই তরুণ। সামনে তাকে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। কাজেই জনগণের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান প্রদর্শন তার কাছ থেকে কাম্য। অসত্য তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা তার কাজ নয়। কারণ এত অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে যেসব জনগণ তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি, তাদের তিনি বিভ্রান্ত করতে পারবেন না।’
‘আর চুপ থাকার মতো পরিস্থিতি নেই’, বলছেন উপদেষ্টা আসিফ
নগর ভবন ইস্যুতে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে সরকারের ‘স্পষ্ট অবস্থান’ তুলে ধরেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে নির্মাণ করা গণগ্রন্থাগারের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিষয়ে বলেন, ‘আর চুপ থাকার মতো পরিস্থিতি নেই।’
আসিফ মাহমুদ আরও বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা যতটা সম্ভব, বাইরে থেকে হলেও নাগরিক সেবা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করছি। সরকার বিষয়টি জানে। তাই মন্ত্রণালয়ের এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কিছু নেই। সরকারে আমরা সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখার কথা বলি। আর তা রক্ষা করতে গেলে প্রত্যেকের কাছ থেকেই দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।
এর আগে ইশরাক হোসেনের কর্মকাণ্ডকে ‘ক্রিমিনাল অফেন্স’ আখ্যা দিয়ে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, বিএনপির সমর্থক ইশরাক হোসেন নগর ভবন দখল করে সিটি করপোরেশনের অফিস কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করেছেন। এটি একটি ক্রিমিনাল অফেন্স, পেনাল কোডে এর প্রাধান্য রয়েছে। তিনি সরকারি কাজে বাধা দিচ্ছেন, আইন অনুসারে তার বিরুদ্ধে মামলা করা প্রয়োজন।
আসিফ আরও জানিয়েছেন, ইশরাক হোসেন বৈধ কোনও দায়িত্ব পাননি, তবু তিনি সিটি করপোরেশন গেটে তালা দেওয়া ও কর্মচারীদের সঙ্গে সরাসরি আলাপ করেছেন। এভাবে ক্ষমতা প্রদর্শন করে নগর ভবন দখল করে দক্ষিণ ঢাকার দৈনন্দিন নাগরিক সেবায় বিঘ্ন ঘটানো দায়িত্বহীনতা এবং আইনের শাসনের প্রতি অবমাননাকর। এতে সরকার তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ইশরাকে ক্ষুব্ধ সরকার, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বার্তা
নগর ভবন তালাবদ্ধ করে আন্দোলন ও শপথ না নিয়েই ‘মেয়রের দায়িত্ব পালন করায়’ ইশরাকের ওপর ক্ষুব্ধ সরকার। বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ৯ জন উপদেষ্টা অংশ নিয়েছেন। সভায় নগর ভবন অচল করায় উপদেষ্টারা ইশরাকের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। সেখানে একাধিক উপদেষ্টা সরকার প্রধানকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন।
আগামী রবিবার (২২ জুন) এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে বলেও জানা যায়। কারণ, নাগরিকদের ভোগান্তি বেড়ে যাওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি দ্রুত সমাধান করতে বলেছেন।
জানা যায়, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টাসহ সবাই বিরক্তি প্রকাশ করেন। এছাড়াও মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে নগর ভবন অবরুদ্ধ করে রাখা ইশরাক যদি স্বেচ্ছায় সরে না যায়, তাহলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার আভাস দিয়েছে সরকার।
বৈঠক শেষে কয়েকজন উপদেষ্টা বলেন, ইশরাক হোসেন সিটি করপোরেশনে তালা দিয়ে কর্মচারীদের কাজে বাধা এবং মেয়রের চেয়ারে বসে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন। তারা এই বিষয়টির সুরাহা চান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে নগর ভবন সচল করার পরামর্শ আসে বৈঠকে। তবে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর দলটির সঙ্গে যে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহারের পরামর্শ গ্রহণ করা হয়নি।
বৈঠক শেষে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উপদেষ্টা বলেন, ‘অবৈধ আখ্যা দেওয়া নির্বাচনের মেয়র হতে চেয়ে ইতোমধ্যে ইশরাক সমালোচিত ও বিতর্কিত হয়েছেন। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবহার করলে ইশরাক সহানুভূতি পাবেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সরকার বিএনপিকে একটি বার্তা দেবে। তা হলো ইশরাক যদি নগর ভবনে বিশৃঙ্খলা বন্ধ না করেন, তবে সরকার স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দিকে এগোবে। জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপিসহ অধিকাংশ দল স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাইছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ যা বলছেন
মেয়র ইস্যুকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জনদুর্ভোগ এবং সমাধান না হওয়ায় সরকার, ইশরাক ও বিএনপি—সব পক্ষই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের। রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান এক আলোচনায় বলেছেন, ইশরাকের শপথ প্রক্রিয়া আটকে রাখার সিদ্ধান্ত ‘শুধু উপদেষ্টা আসিফের নয়, উপদেষ্টা পরিষদ ও প্রধান উপদেষ্টার সম্মতিতে’ নেওয়া হয়েছে।
জাহেদ উর রহমানের মতে, প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির বৈঠকের পরেও এই সংকট অব্যাহত থাকায় ‘ডি-এস্কালেশন’ না হয়ে ‘আক্রমণাত্মক’ মুখাপেক্ষী সৃষ্টি হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার পরেও বিএনপি মাঠে তাদের অবস্থান ধারাবাহিক রেখেছে। বিএনপি ও সরকার উভয়ের আলোচনার মাধ্যমে এই ইস্যুতে স্থিতিশীলতা আনা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন এই বিশ্লেষক।
ইশরাক ইস্যুতে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. কনক সারওয়ার বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচিত মেয়র ইশরাক হোসেনকে একটি সরকারি মহল ইচ্ছাকৃতভাবে শপথ গ্রহণে বাধা দিয়েছে। আদালতের স্পষ্ট রায় ও সংবিধান লঙ্ঘন করে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত আগামী জাতীয় নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
কনক সারওয়ার তার এক আলোচনায় বলেন, গত মাসে হাইকোর্ট ও পরে আপিল বিভাগ ডিএসসিসির মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের জয়কে বৈধ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দিলেও নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় (এলজিআইডি) সময়ক্ষেপণ করে। ইশরাকের শপথ না হওয়ার পেছনে এলজিআইডি উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ভূমিকাকে ‘আইনের মারপ্যাঁচ’ বলেও আখ্যা দেন কনক সারওয়ার।
অন্যদিকে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, মেয়রের ইস্যুতে সরকার, বিএনপি ও ইশরাক সবাই বাড়াবাড়ি করেছে। আইন অনুযায়ী ইশরাকের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। তবে সব পক্ষ একমত হলে ইশরাক হোসেনকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘ইশরাক অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালন শুরু করছেন। এটি সমীচীন নয়। এর ফলে খারাপ নজির স্থাপন করা হচ্ছে। বড় দল হিসেবে বিএনপিরও এটা দেখার দায়িত্ব আছে।’