প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতি বছর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনগুলোকে অনুদান দেওয়াসহ ৮টি সুপারিশ জানিয়েছে প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন।
বুধবার (২৫ জুন) বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান হলে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের গুরুত্ব’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব সুপারিশ জানানো হয়। এডিডি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সহযোগিতায় যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে বি-স্ক্যান, ডিডাব্লইউএস, এনসিডিডাব্লিউ এবং এনজিডিও।
সভায় লিখিত বক্তব্যে এনজিডিও’র সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হতে চলেছে। সে কারণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ দেশের অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী মানুষ এখনও পূর্ণ ও কার্যকরী অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। কেবল তাই নয়, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বাসস্থান ও প্রবেশগম্যতার কারণে মানবাধিকারের পাশাপাশি মৌলিক অধিকার ও মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান বলেন, আইন ও বিধিমালা নিয়ে শুধু দিবসগুলোতেই আলোচনা সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। কমিটিগুলোকে ছোট ও কার্যকর করে সদস্যদের সক্রিয় করা প্রযোজনা। সমাজসেবা অধিদফতরের অফিসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি সেল উদ্বোধন করা হবে। মন্ত্রনালয় থেকে রোগী কল্যাণ সমিতিতে আয়কর রেয়াত করা হয়েছে। আগামী বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ আরও দৃশ্যমান এবং আগামী বছরের মধ্যে ওপিডিগুলোর ম্যাপিং করার প্রতিশ্রুতি দেন।
বি-স্ক্যানের পরিচালক ইফতেখার মাহমুদ বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর বিষয়গুলো যেভাবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়, প্রতিবন্ধী মানুষের বিষয়গুলো সেভাবে বিবেচনা ঘাটতি রয়েছে।
এসময় গ্রাম উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব কুমার মালো বলেন, উপজেলায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো অনুদান পায় না। জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের ১৪তলা বিল্ডিং করে রাখলেও, প্রতিবন্ধীদের তেমন উন্নয়ন হচ্ছে না।
এসময় তাদের ৮ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়
১। মূল ধারার উন্নয়ন সংগঠনগুলোর কাজে কৌশলগত বা বাস্তবায়নকারি সংগঠন হিসেবে অংশীদারত্ব বৃদ্ধি করা।
২। সব ধরনের উন্নয়ন প্ল্যাটফর্ম বা নেটওয়ার্কে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনকে যুক্ত করা।
৩। সব ধরনের উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে সংশ্লিষ্ট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠনগুলোকে দাওয়াত দেওয়া।
৪। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনে অনুদান করা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বাৎসরিক তথ্য প্রকাশ করা।
৫। উল্লেখযোগ্য অনুদান দেওয়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহিত করতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় থেকে পুরস্কৃত করা।
৬। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাইরে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনকে যুক্ত করা এবং অনুদানের ব্যবস্থা করা।
৭। জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের অনুদান দুই থেকে তিন বছরের পরিবর্তে প্রতিবছর দেওয়া।
৮। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি উন্নয়ন অধিদফতর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতি বছর প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সংগঠনগুলোকে অনুদান দেওয়া।
বি-স্ক্যান এর সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুবের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সিবিএম গ্লোবাল বাংলাদেশের দেশস্থ পরিচালক মো. জাহিদুর রহমান, সাইটসেভার্সের দেশস্থ পরিচালক অমৃতা রেজিনা রোজারিও, সিএসআইডি এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের (জেপিইউএফ) পরিচালক ফজলে ছিদ্দীক মো. ইয়াহিয়া, এডিডি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ প্রোগ্রাম লিড গোলাম ফারুক হামিম প্রমুখ।