ঢাকার বিভিন্ন সড়কের মোড়ে সক্রিয় হয়েছে উবার, পাঠাও, ও-ভাই, সহজসহ রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর চালকরা। অ্যাপে সেবা দেওয়ার সুযোগ আপাতত না থাকলেও এখন চুক্তিভিত্তিক চলছে মোটরসাইকেল ও গাড়ি। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ ঠেকাতে গণপরিবহনের পাশাপাশি রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তসাপেক্ষে আগামীকাল (৩১ মে) থেকে গণপরিবহন চালুর অনুুুুমতি দিলেও অ্যাপ ভিত্তিক যানবাহনের বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। এ অবস্থায় বেকায়দায় পড়েছেন এই পেশার সঙ্গে যুক্ত শত শত চালক।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান মো. ইউছুব আলী মোল্লা (অতিরিক্ত সচিব) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাইড শেয়ারিং সেবার বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। গত ২৯ মে বিকালে গণপরিবহন চালুর বিষয়ে আমাদের সঙ্গে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বৈঠক হয়েছে। তবে অ্যাপভিত্তিক যানবাহন নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও হয়নি। তাই এ বিষয়ে আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না।’
কোভিড-১৯ মহামারি দেখা দেওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত অনলাইন ভিত্তিক এই সেবা বন্ধ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত চালকরা অলস সময় কাটানোর পরিবর্তে এখন চুক্তিভিক্তিক ট্রিপ দিচ্ছে।
শনিবার সকালে ঢাকার বাংলামোটর মোড়ে দেখা গেছে, মোটরসাইকেল নিয়ে কয়েকজন চালক দাঁড়িয়ে আছেন। সামনে দিয়ে কোনও পথচারী হেঁটে যাওয়ার সময় তারা জানতে চান কোথায় যাবেন। এ সময় যাত্রীদের সঙ্গে তাদের দরদাম করতে দেখা যায়। তাদের একজন পাঠাও চালক ইলিয়াস উদ্দিন। রাইড শেয়ারিং সেবা বন্ধ থাকায় অনেকদিন কর্মহীন ছিলেন তিনি। এখন বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমে চুক্তিতে চলাচল করছেন।
একই চিত্র খিলগাঁও রেলগেট এলাকায়। সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকজন। কোনও পথচারীকে সামনে পেলেই কোথায় যাবেন জানতে চান তারা। এ সময় কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তাদের দর কষাকষি করতে দেখা গেছে।
চালকদের একজন জানান, অনলাইনে সেবা প্রদান বন্ধ আছে। তাই তারা এখন ‘অফলাইনে’ কাজ করছেন। তাছাড়া দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকার কারণে তারা বাধ্য হয়ে চুক্তিভিক্তিক ভাড়া নিচ্ছেন।
মোটরসাইকেলের মতোই উবারের চালকরা গাড়ি নিয়ে চুক্তিভিক্তিক ট্রিপে বেরোচ্ছেন প্রতিদিন। এর সঙ্গে যুক্তদের নিয়ে ‘ড্রাইভার সাপোর্ট বিডি’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি গ্রুপ আছে। এতে আগে উবারের ‘শোষণ’ নীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পোস্ট থাকলেও এখন গাড়ি ভাড়া বিষয়ে বিজ্ঞাপনি পোস্ট দেওয়া হচ্ছে।
উবার ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সেলিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এখন খুব কষ্টে আছি। অনেকদিন পর আজ রাস্তায় নেমেছি। যাত্রী অনেক কম। ভাড়াও কম। উবারের চালকদের অনেকেই এখন চুক্তিভিক্তিক ভাড়া নিচ্ছেন। অনলাইনে সেবা বন্ধ থাকায় পেটের দায়ে এছাড়া কোনও পথ নেই।’
সংগঠনটির সভাপতি জানান, উবার একটি জরিপ পরিচালনা করছে। এর মাধ্যমে জানানো হচ্ছে, পথে নামার অনুমোদন পেলে মুখে মাস্ক রাখা, গাড়ির সামনের আসনে কাউকে বসতে না দেওয়া, এসি ব্যবহার না করা, যাত্রীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা এবং নিয়মিত গাড়ি জীবাণুমুক্ত করতে হবে। তারা চালকদের রাস্তায় নামার জন্য নোটিফিকেশন পাঠাবে বলে জানিয়ে রেখেছে।
এ বিষয়ে উবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া পাঠাও’র বিপণন বিভাগের পরিচালক সৈয়দা নাবিলা মাহবুবকে একাধিকবার ফোনে চেষ্টা করলেও পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।