X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ুর কারণে বিশ্বে ২ কোটি মানুষ অভিবাসী হওয়ার আশঙ্কা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৩ মার্চ ২০২১, ২০:৪১আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২১, ২০:৪২

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসনের বড় সংখ্যার কারণ সংঘর্ষ নয়। এর চেয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মানুষ বেশি অভিবাসিত হচ্ছে। ছোট ছোট শহর থেকে বাধ্য হয়ে মানুষ বড় শহরে বা দেশে অভিবাসিত হচ্ছে। যদিও ছোট শহরগুলো গণ-অভিবাসনের জন্য এখনও প্রস্তত নয়। তবে ২০৩১ সালের মধ্যে দুই কোটির বেশি মানুষ অভিবাসী হবে বলে ধারণা করা হয়েছে অ্যাকশন এইডের একটি গবেষণায়।

মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ আয়োজিত ‘অ্যাড্রেসিং ক্লাইমেট চেঞ্জ ইনডিউসড মাইগ্রেশন ইন বাংলাদেশ: টেকিং এ হিউমেন রাইটস বেজেড অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক সেমিনারে এই গবেষণার তথ্য তুলে ধরা হয়।

সেমিনারে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন নিয়ে খুলনা, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, নওগাঁ ও ঢাকা জেলায় পরিচালিত গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরা হয়। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের আলোকে সেমিনারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত  বক্তারা ওই অঞ্চলের বিদ্যমান সমস্যা ও সুপারিশমালা তুলে ধরেন।

অ্যাকশনএইডের এই গবেষণায় উঠে আসে মানুষের জীবিকাই অভিবাসনের মূল কারণ। দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন একটি ‍গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া জীবিকা ও অর্থনীতি এর একটি বড় কারণ। জলবায়ু পরিবর্তনের কোনও বর্ডার নেই। মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর অভিবাসী হওয়ার মাঝে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে। তারপর ধীরে ধীরে একটি বড় অংশ অভিবাসনের দিকে ধাবিত হতে থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি  জীবিকা, ঋণগ্রস্থতা, দক্ষতাহীনতা, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, উচ্ছেদ ইত্যাদি ফ্যাক্টর বড় কারণ বলে তুলে ধরা হয়।

এ অভিবাসন ঠেকাতে গবেষণায় মৌলিক অধিকার ও সেবা নিশ্চিত করা, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, বহুমুখী তথ্য সেবা কেন্দ্র চালু করা, দক্ষতা উন্নয়ন, এ খাতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কার্যকর বিনিয়োগ এবং জাতীয় অভিবাসন নীতিমালা করার কথা বলা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের পরিচালক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ সালিমুল হক বলেন, ‘অভিবাসন বর্তমানে একটি নৈমিত্তিক ঘটনা। অভিবাসনের জন্য মূলত পুশ ফেক্টর ও পুল ফ্যাক্টর দায়ী। তাছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন নতুন সংকট তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতেও ফোর্সড মাইগ্রেন্টের সংখ্যা বাড়াবে। এজন্য আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। যারা বিভিন্ন কারণে অভিবাসনে বাধ্য হয়, তাদেরকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি, তা নিয়ে ভাবতে হবে। তাদের মানবাধিকার যেভাবে রক্ষা হয়, সেভাবে তাদের সক্ষম করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ডেল্টা প্ল্যান হাতে নিয়েছে।’

তিনি অ্যাকশনএইডের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে আরও বলেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশ নয় এটি গ্লোবাল ই্স্যু। সরকারি, বেসরকারি এবং সুশীল সমাজের সবার সঙ্গে আলোচনা করে গবেষণাধর্মী তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ঐক্যমত হয়ে আমরা কপ সম্মেলনসহ সকল আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে এ বিষয়টি তুলে ধরতে পারি, যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিষয়টির সমাধানের পথ প্রশস্ত হয়।’ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেন কারও অভিবাসন না ঘটে, সেজন্য তিনি স্থানীয় পর্যায়ে বেশি কাজ করার তাগিদ দেন। এসময় তিনি দেশের তৃণমূল পর্যায় থেকে উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের  সচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন।

সেমিনারে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন অনুবিভাগ) মো. মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কী ধরনের অভিবাসন হচ্ছে, তা নিয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত এনজিও প্রতিনিধিদের  বৈঠক হয়। সরকার থেকে বাস্তুচ্যুতদের ঋণ দেওয়া হয়, তবে অনেকে ঋণ নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। আমাদেরকে যৌথ প্রয়াসে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে।’

অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘আমাদের গবেষণা ও আজকের আলোচনায় অভিযোজন, প্রশমন, জীবিকা, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি ইত্যাদি বিষয়গুলো উঠে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি ব্যক্তি ও সামষ্টিক পর্যায়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জীবন জীবিকার উন্নয়ন ঘটাতে। একটা সমন্বিত উদ্যোগ ও রোডম্যাপ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিবাসন মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে বর্তমানে কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। আমাদের উন্নয়ন যেন পরিবেশ ও জলবায়ুর জন্য হুমকির কারণ না হয়ে উঠে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।’ জলবায়ু পরিবর্তন কাউকে বিশেষ সুবিধা দেবে না, বরং সবার ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এসময় সেমিনারে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্স স্টাডিসের নির্বাহী পরিচালক আতিক রহমান, অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনারের প্রকল্প সমন্বয়ক জেসিকা ফেলারিও, ক্লাইমেট ব্রিজ ফান্ডের কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী, ন্যাচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান, ইউএন উইম্যানের জেন্ডার সমন্বয়ক দিলরুবা হায়দারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
খিলক্ষেতে নকশাবহির্ভূত ভবনে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান
যাত্রাবাড়ীতে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২
পরিকল্পনাবিহীন ডিগ্রি অর্জনের কারণে বেকার থাকতে হচ্ছে: সালমান এফ রহমান 
সর্বশেষ খবর
খিলক্ষেতে নকশাবহির্ভূত ভবনে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান
খিলক্ষেতে নকশাবহির্ভূত ভবনে রাজউকের উচ্ছেদ অভিযান
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে সারা দেশে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে সারা দেশে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ
ভাড়া বাসা থেকে আ.লীগ নেতার লাশ উদ্ধার
ভাড়া বাসা থেকে আ.লীগ নেতার লাশ উদ্ধার
দেশে বিচারাধীন মামলা ৩৭ লাখ ২৯ হাজার: সংসদে আইনমন্ত্রী
দেশে বিচারাধীন মামলা ৩৭ লাখ ২৯ হাজার: সংসদে আইনমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
পুলিশ-সাংবাদিক-আইনজীবী স্টিকারের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ
পুলিশ-সাংবাদিক-আইনজীবী স্টিকারের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ