X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাসে সাড়ে ২৮ লাখ টাকাতেও নিরাপত্তা পাচ্ছে না হাতিরঝিল

শাহেদ শফিক
২৪ জানুয়ারি ২০২২, ২৩:০০আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:২১

ব্যস্ত রাজধানীর ঠিক প্রাণকেন্দ্রে একখণ্ড শীতল পরশ হাতিরঝিল। নগরবাসী খানিকটা দম নিতে এখানে ঘুরতে আসেন প্রতিনিয়ত। কিন্তু স্থানটির নিরাপত্তা দিতে কতটা প্রস্তুত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, (রাজউক) তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল প্রায়ই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনাও। এর নিরাপত্তার জন্য যে কর্মীবাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে তাদের দক্ষতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী। তারা কতটা দায়িত্ব পালন করছেন তা নিয়েও সন্দেহ আছে তাদের।

রাজউক সূত্র জানিয়েছে, হাতিরিঝিলের নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচ্ছন্নতা কাজে তিন শিফটে মোট ২২৭ জন কর্মী কাজ করেন। এর মধ্যে নিরাপত্তার জন্য ১৭১ জন, পরিচ্ছন্নতায় ৫৬ জন রয়েছেন। যাদের পেছনে মাসে ব্যয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে ২৮ লাখ টাকা।

হাতিরঝিলে এখন আর নিরাপদ বোধ করছেন না অনেকে

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড থেকে রাজউকের কাছে হাতিরঝিল হস্তান্তর করা হয়। এর আগে দায়িত্বে ছিল সেনাবাহিনীর উইংটি। সেসময় এর নিরাপত্তা কঠোরভাবে পালন করা হতো বলে মনে করেন এখানে নিয়মিত ঘুরতে আসা নাগরিকরা।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও এর নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে রাখার অনুরোধ জানিয়েছিল রাজউক। এজন্য নিয়ন্ত্রক মন্ত্রণালয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ বাড়াতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি।

প্রকল্পটি রাজউকের কাছে হস্তান্তরের পর এর নিরাপত্তার পাশাপাশি পরিবেশও হুমকিতে পড়েছে। ঝিলের বিভিন্ন স্থানে ময়লার স্তূপ হয়েছে। চুরি হচ্ছে ড্রেনগুলোর গ্রিল। রাত হলে প্রকল্পের বিভিন্ন এলাকায় লাগানো বাতিগুলোও জ্বলে না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজউকের কাছে হাতিরঝিলের দায়িত্ব আসার পর এখন ঝিলের একমুখী সড়কে উল্টোপথেও ঢুকে পড়ছে গাড়ি। দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

গত কয়েক দিন ধরেই হাতিরঝিলে এ চিত্র চোখে পড়েছে। এতে বেশ কয়েক জনের আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

প্রকল্প এলাকায় যেসব ঝুঁকি চোখে পড়েছে তার মধ্যে রয়েছে—সড়কে বেপরোয়া গতির গাড়ি, রাতে গাড়ি ও মোটরসাইকেলের রেস, উল্টোপথে গাড়ি চালানো, রাতের আলো-আঁধারিতে গাড়ি পার্কিং ও ছিনতাই। এসব কারণে ঝিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী কমে গেছে। কারণ তারা হাতিরঝিলে এখন আর নিরাপদ বোধ করছেন না।

হাতিরঝিল লেক

রাজউক জানিয়েছে, প্রকল্প হস্তান্তরের আগে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে জটিলতার কথা মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছিল। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ডিপিপিতে বরাদ্দ বা নির্দেশনা ছিল না। এ জন্য বছরে প্রায় ১৮ কোটি টাকা দরকার। প্রকল্প এলাকায় দোকানপাট বরাদ্দসহ অন্যান্য খাত থেকে ১০ কোটি টাকা আসে। ঘাটতি মেটাতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজউককেই এই খরচ দিতে হবে।

প্রকল্পটি নিয়ে গত ২০২০ সালের ২ জুন রাজউক চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকার সমন্বিত উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম প্রস্তাবনা পর্যালোচনায় গঠিত আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির সভা হয়।

সভায় কিছু সুপারিশ করা হয়। বলা হয়, হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি খাল পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে একটি স্টর্ম ওয়াটার বেসিন করা হয়েছে। জলাধার ও সবুজের সমারোহে প্রকল্পটি পর্যটকদের কাছে বিনোদন কেন্দ্র হয়েছে। তাই এর রক্ষণাবেক্ষণে পূর্ণাঙ্গ কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

এ লক্ষ্যে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পরিচালনার জন্য একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়। বাৎসরিক পরিচালন স্কিমও প্রস্তাব করা হয়। সম্ভাব্য আয় ধরা হয় ১০ কোটি টাকা। পরিচালনা ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৮ কোটি টাকা। চাহিদা দাঁড়ায় প্রায় ৮ কোটি টাকার। যা সরকারি কর্মসূচি ব্যয় হিসেবে সংগ্রহ করতে স্কিম তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। তখন মন্ত্রণালয় রাজউককেই এই অর্থের সংস্থান করতে বলে।

হাতিরঝিলে শিশু সন্তানকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলেন মগবাজারের বাসিন্দা সামছুন্নাহার বেগম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রায়ই দেখি হাতিরঝিলে দুর্ঘটনা ঘটছে। এর কারণ বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো। এখন উল্টোপথেও গাড়ি চলে। আগে কিন্তু এসব দেখা যেতো না। নিরাপত্তা কর্মীদেরও খুব একটা দেখা যায় না।

হাতিরঝিলের আওতায় নির্মিত ৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার এক্সপ্রেস রোড, ৯ দশমিক ৮ কিলোমিটার সার্ভিস রোড, ৪টি সেতু, ৪টি ওভারপাস, ৩টি ভায়াডাক্ট ও ২টি ইউলুপ রয়েছে। এগুলোরও রক্ষণাবেক্ষণ প্রয়োজন। দরকার জনবল, যন্ত্রপাতি ও কার্যক্রম। কিন্তু এসএসডিএসগুলো ভরাট হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিয়মিত পানি প্রবাহও ব্যাহত হচ্ছে।

জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রকল্পের নিরাপত্তা যাতে কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয় সে জন্য কাজ করছি। তবে প্রকল্প এলাকার মানুষ সচেতন না। তারা ময়লা ফেলে চলে যায়। চেষ্টা করছি এসব বন্ধ করতে। সম্প্রতি কয়েক ট্রাক ময়লা অপসারণও করেছি।

/এফএ/
সম্পর্কিত
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
সর্বশেষ খবর
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
প্রতিবন্ধী শিল্পীদের আয়োজনে মঞ্চস্থ হলো ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটক
‘শো মাস্ট গো অন’
চিকিৎসা সুরক্ষা আইন জরুরি‘শো মাস্ট গো অন’
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
ছাদে আম পাড়তে গিয়ে নিচে পড়ে শিশুর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!