বছরে মাত্র সাড়ে ছয় কোটি টাকার জন্য জাফলং-বিছানাকান্দির নদীগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত এই ছয় বছরে সিলেটের পাথর মহালগুলো থেকে সরকার রাজস্ব আয় করেছে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অথচ এসব পাথর মহালগুলো যাদের ইজারা দেওয়া হয়েছে তারা এরচেয়ে কয়েকগুণ অর্থ আয় করেছে।'
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে বালু-পাথর উত্তোলন ও দখল-দূষণে নদ-নদীর জীর্ণদশা এবং পরিবেশ সংকট শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড বিফর্ম অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ও পানি অধিকার ফোরাম এই সভায় আয়োজন করে।
সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, নদীকে কখনও বালু মহাল, কখনও পাথর মহাল ঘোষণা করা হয়, কখনও আবার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে নির্দ্বিধায় তুলে দিচ্ছে সরকার। নদী যে একটা লাইফ লাইন তা আমরা অনুধাবন করতে পারি না।
তিনি বলেন, বালু মহালগুলো থেকে সরকার রাজস্ব পায় ২৩৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বিগত ২০ বছরে নদী ও নদী সংলগ্ন অঞ্চল থেকে ১৩০-১৪০ ফুট গর্ত করে বালু-পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে কৃষিজমি, বাড়িঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কৃষিজমি ভেঙে প্রতিবছর ৫ হাজার টন শস্য কম উৎপাদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, কী পরিমাণ বালু উত্তোলন প্রয়োজন, সে অনুযায়ী উত্তোলন করা হচ্ছে কিনা সেটা তদারকি করার কেউ নেই।
বালু তুলতে হলে বালু মহাল আইন-২০১০ চালু থাকলেও কার্যকর নয় উল্লেখ করে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ডিসির নেতৃত্বে একটি কমিটি আছে। সেই কমিটি বালু উত্তোলনে শব্দদূষণ, নদীভাঙ্গন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হলে ওটা বন্ধ করে দিবে। অথচ সেই কমিটি পরিদর্শনেই যায় না।
নদী রক্ষায় হাইকোর্টের রায়কে অভিনন্দন জানিয়ে বেলার প্রধান নির্বাহী বলেন, নদীর ক্ষতি হলে সরকার অভিভাবক হিসেবে দায়ী। হাইকোর্ট কর্মপরিকল্পনা চেয়েছে অথচ সরকার কর্মপরিকল্পনা দেয়নি করোনার অজুহাতে। কিন্তু বালু মহাল চালানোর অনুমতি ঠিকই দিচ্ছে।
নদী দূষণ সম্পর্কে সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে হাজারীবাগে বন্ধ করা ট্যানারি কারখানাগুলো এখন ধলেশ্বরী নদীকে দূষিত করছে। অন্যদিকে হাজারীবাগ থেকে এখনও পুরোপুরি ট্যানারি বন্ধ হয়নি।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন— এএলআরডি'র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ, রাজশাহী রুলফাও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আফজাল হোসেন প্রমুখ।