X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি করপোরেশন ও মালিকদের ভুলের খেসারত দিচ্ছেন দোকানিরা

রাশেদুল হাসান
০৬ নভেম্বর ২০২২, ২০:৫৯আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ১৫:২৬

নীলক্ষেত রোড সাইড মার্কেট বা তুলা মার্কেটে অবৈধভাবে নির্মিত দুই ও তিনতলা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। মার্কেটের দুই ও তিনতলায় অবৈধভাবে ১৪৮টি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া হয় ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরা এখানে টেইলারিং,  প্রিন্টিং প্রেস ও কোচিং সেন্টারসহ বিভিন্ন ব্যবসা খুলেছিলেন।

ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ করেছেন, হঠাৎ দোকানগুলো ভেঙে ফেলায় ব্যবসায়িক ও  আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। তাদের অভিযোগ, ভাড়া নেওয়ার সময় জানতেন না যে দোকানগুলো অবৈধ। মালিকদেরও অনেকে জানতেন না দোতলা ভবন অবৈধ। কারণ, যারা নির্মাণকালীন সময়ে টাকা দিয়েছিলেন তাদের অনেকে নিজের নামে থাকা বিক্রি করে দিয়েছেন।

দোকানগুলোর মালিকরা বলছেন, অবৈধ বলে ভেঙে ফেলা হলেও তাদের নামে দোকানগুলো বরাদ্দ দিয়েছিল খোদ সিটি করপোরেশন। যার সঙ্গে জড়িত ছিল তৎকালীন প্রশাসক,  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সম্পত্তি কর্মকর্তা,  কানুনগো ও সার্ভেয়ারসহ সবাই। তাদের ভুলেই শাস্তি পাচ্ছেন তারা।

সিটি করপোরেশন ও মালিকদের ভুলের খেসারত দিচ্ছেন দোকানিরা

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তৎকালীন প্রশাসক ছিলেন খলিলুর রহমান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছিলেন সুলতানুল ইসলাম আর সম্পত্তি কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন জ্যোষ্ঠ সহকারী সচিব ও বর্তমান উপ-সচিব দিদারুল ইসলাম।

জানা যায়,  ২০১২ সালে বর্তমান নীলক্ষেতের রোড সাইড মার্কেট ছিল একটি টিনের ছাউনি ঘর। যেখানে সিটি করপোরেশন ৩৬টি দোকানের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিল। ২০১৩ সালে সিটি করপোরেশনের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কিছু অসাধু ব্যক্তি মিলে টিনের ওপর  কল্পিত ছাদে প্রতি বর্গফুট ১৫ টাকা হারে ৭৪টি দোকান অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ দেন। তারা বরাদ্দপ্রাপ্তদের নিজ খরচে দোকান নির্মাণ করার অনুমতি দেন, যা আইনসম্মত নয়।

আরও জানা যায়, এই অনুমতিপত্রে তৎকালীন সম্পত্তি কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার মুরাদ হোসেন ও সৈয়দ রুমান ও কানুনগো মোহাম্মদ আলীর স্বাক্ষর রয়েছে।

লেডিস টেইলার্স ও চারুকল্প বুটিক হাউজের মালিক তাহমিনা আক্তার পিংকি বলেন, ভাড়া নেওয়ার সময় আমরা জানতাম না এটি অবৈধ। তারা কখনও বলেনি এটা ভেঙে ফেলে হবে। এমনকি আজ সকালে যখন ভাঙতে শুরু করে তখনও তারা বলছিল, ‘আমরা দেখছি’।

তিনি বলেন, আমি দুটি দোকানের জন্য প্রতিমাসে ২২ হাজার টাকা ভাড়া দিতাম। চার বছর দোকান করার পর আমার একটা সুনাম গড়ে ওঠে। এখন দোকান ভেঙে দিলো। আমাকে মালামাল সরাতে হবে, নতুন করে দোকান দেখতে হবে, অ্যাডভান্স করতে হবে, নতুন ডেকারেশন। এতে আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি বলেন,  আমি দেড় লাখ টাকা অ্যাডভান্স দিয়েছিলাম। মালিক সমিতি ও মালিকরা কেউই ফোন ধরে না। টাকা ফেরত পাবো কিনা জানি না।

মার্কেটের দুই ও তিনতলায় তিনটি দোকান ভাড়া নিয়েছিলেন নাকিবুর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমরা মাত্র তিন দিনের নোটিশ পেয়েছি, তাও মালিক সমিতির মাধ্যমে নয়। সিটি করপোরেশনের মাইকিংয়ের মাধ্যমে। আমাদের কোচিং সেন্টার ও প্রিন্টিং প্রেস সব সরিয়ে নিতে হয়েছে। এতে আমরা ব্যবসায়িক ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিচতলার এক দোকানদার বলেন, ওপর তলায় একটি দোকান ছিল আমার। দোকান যখন বরাদ্দ দেয় সেই কাগজে তৎকালীন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বাক্ষর ছিল। সিটি করপোরেশনের দোকান, তারা যদি বলে বৈধ সেটা এখন কীভাবে অবৈধ হয়। মেয়র সাঈদ খোকনের সময় আমাদের বৈধতা দেওয়া হয়। এখন বলে আমরা অবৈধ।

এই ভবনের ৩৫ নম্বর দোকানের মালিক দুলাল হোসাইন জানান, তাকে এই ভবনটি বরাদ্দ দিয়েছেন বর্তমান মার্কেট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটের নির্মাণকারী আবু শাহাদাত লাবলু।

তিনি বলেন, মার্কেটে আমি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতাম। আমি পারিশ্রমিক নেইনি। পরে লাবলু ভাই আমাকে ৩৫ নম্বর দোকান বরাদ্দ দেন। আমি এই দোকানটি ভাড়া দিয়ে মাসে সাত হাজার টাকা পেতাম। এখন আমার সংসার কীভাবে চলবে?

১৯৯৬ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নীলক্ষেত রোড সাইড মার্কেটের মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, এই মার্কেটের অবৈধ সম্প্রসারণের জন্য দায়ী বর্তমান সভাপতি আবু শাহাদাত লাবলু ও তৎকালীন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক,  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান প্রকৌশলী। আমি এই অবৈধ সম্প্রসারণ কাজে রাজি ছিলাম না। প্রধান প্রকৌশলী আমার দোকানে এসে এই কাজে রাজি হতে জোরাজুরি করেন। পরে বিভিন্ন মহলের চাপে আমি পালিয়ে যেতে বাধ্য হই।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, মার্কেকটি সামনে পেছনে জোর করে নির্মাণ করার জন্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নেন মার্কেটের মালিক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক  লাবলু। যার সঙ্গে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন।

এ বিষয়ে নীলক্ষেত রোড সাইড মার্কেট মালিক সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবু শাহাদাত লাবলু  বলেন, আমি যে টাকা টাকা নিয়েছি তার প্রমাণ আছে? না থাকলে আমি তার বিরুদ্ধে মামলা করবো।

তিনি আরও বলেন, সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে ও কমিটির সবার সিদ্ধান্তে আমি মার্কেট নির্মাণ করেছি। সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের বরাদ্দ কমিটি ভবন নির্মাণের জন্য বরাদ্দ অনুমতি,  নকশা প্রদান করে ও মার্কেটের পিছনের জায়গা খালি না রাখার নির্দেশনাও দেয়।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মুনিরুজ্জামান বলেন, যাচাই করার সুযোগ না থাকলেও যারা যে প্রক্রিয়ায় বরাদ্দ নিয়েছিলেন তারা জানতেন প্রক্রিয়াটি বৈধ নয়। তারপরও তারা কেন এভাবে নিলেন?

তিনি জানান, সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে অপরাধে জড়িত সার্ভেয়ার ও কানুনগোকে চাকরিচ্যুত করেছে। বাকিদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
সমবায় সমিতির নামে কোটি টাকার দুর্নীতি: দুদকের অনুসন্ধান শুরু
হজ ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলার শঙ্কা এজেন্সি মালিকদের
সর্বশেষ খবর
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনও পরিবর্তন হবে না: ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
ঘোড়াঘাটে মালবোঝাই দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২ জন নিহত
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ