X
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

সাকরাইন ঘিরে ঘুড়ি-নাটাই বিক্রির ধুম পুরান ঢাকায়

আতিক হাসান শুভ
১২ জানুয়ারি ২০২৪, ২০:০০আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:১৫

সাকরাইন উৎসব মানে আকাশে ঘুড়ি-নাটাইয়ের খেলা। বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসাবে পৌষ মাসের শেষ দিন ‘সাকরাইন’ উদযাপন করা হয় পুরান ঢাকায়। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ছোট-বড় সবাই মেতে ওঠে এই উৎসবে। এ বছর ১৪ জানুয়ারি পালিত হবে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসব। সাকরাইনকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় ঘুড়ি-নাটাই বিক্রির ধুম পড়েছে। ঘুড়ি তৈরির কারখানা থেকে প্রতিদিনই হাজার-হাজার পিস ঘুড়ি আসছে দোকানগুলোতে। দক্ষ কারিগরদের সুনিপুণ হাতে তৈরি এসব ঘুড়ি ছড়িয়ে পড়েছে পুরান ঢাকার অলিগলিতে।

পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারের গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকানে ঘুড়ি-নাটাই বিক্রির হিড়িক। বিক্রেতারা সকাল থেকে রাত অবধি ব্যস্ত সময় পার করছেন ঘুড়ি, নাটাই ও এ ধরনের অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রিতে। সাকরাইনকে কেন্দ্র করে শাখাঁরীবাজারের দোকানগুলোর সামনে ফুটপাতে বসেছে ভ্রাম্যমাণ ঘুড়ি, নাটাই ও সুতার দোকান। এসময় ১৫-৬০ বছর তরুণ-প্রবীণদের দেখা যায় ঘুড়ি, নাটাই, সুতা কিনতে। এদের মধ্যে সবাই যে নিজের জন্য ঘুড়ি বা নাটাই কিনতে এসেছে তা কিন্তু নয়, অনেকে তার সন্তানের জন্য এবং দাদারা এসেছে তার নাতি-নাতনিদের জন্য নাটাই ও ঘুড়ি কিনতে।

ঢাকার অন্যান্য এলাকা থেকেও অনেকে ঘুড়ি ও আনুসঙ্গিক সরঞ্জাম কিনতে আসছেন পুরান ঢাকায়

চকবাজার থেকে শাঁখারীবাজারে ঘুড়ি কিনতে আসা শিপন (২১) বলেন, আর একদিন পরেই সাকরাইন উৎসব। ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবকে ঘিরে পুরান ঢাকার কিশোর-কিশোরীরা অনেক আগেই ঘুড়ি নাটাই ও ধারালো সুতা সংগ্রহ করেছে। আমিও এখানে ঘুড়ি কিনতে এসেছি। এই উৎসব আমাদের জন্য অনেক স্পেশাল। ছোটবেলা থেকেই অনেক আনন্দের সঙ্গে আমরা এই উৎসব পালন করে আসছি। এই দিনে আমরা আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় ঘোরাফেরা করি। বিকালে ঘুড়ি ওড়াই। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বাসার ছাদে গান-বাজনা করে পার্টি করি।

ঘুড়ি ও নাটাই কিনতে আসা রাফি (১৯) বলেন, সাকরাইন একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব। এই দিনে আমরা বন্ধুরা মিলে বাসার ছাদে ঘুড়ি ওড়াই। তাই আজ আমিও ঘুড়ি কিনতে এসেছি। আমি বাঁশের নাটাই ৩০০ টাকা দিয়ে নিলাম। সঙ্গে ২০০ টাকা দিয়ে ১৫টা ঘুড়ি কিনলাম বিভিন্ন রকমের। আট টাকা থেকে শুরু করে ৫০/৬০ টাকায়ও ঘুড়ি বিক্রি হচ্ছে। কিছু ঘুড়ি দেড়-দুইশ’ টাকা দামেরও আছে। বিভিন্ন ধরনের নাটাই, যেমন বাঁশের ও স্টিলের নাটাই বিক্রি হচ্ছে। ছোট নাটাইগুলো বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, মাঝারি নাটাই বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বড় নাটাই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা করে।

অলিতে গলিতে দোকানগুলোয় শোভা পাচ্ছে হরেক রকম ঘুড়ি

ছেলেমেয়েদের জন্য সিদ্দিক বাজার থেকে শাঁখারীবাজারে ঘুড়ি নাটাই কিনতে আসা তৌকির আহমেদ (৩৮) বলেন, আমরা যদিও ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা না, তবে দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে এখানকার উৎসব আমেজ আমাদের বেশ আনন্দ দেয়। ছেলেমেয়েরাও অনেক আনন্দ পায়। তাই সাকরাইন এলে প্রতিবছরই ছেলেমেয়ের জন্য নাটাই-ঘুড়ি কিনে নিয়ে যাই। ওরা ওদের বন্ধুদের সঙ্গে খেলা করে। আমার দুই ছেলেমেয়ের জন্য দুইটা নাটাই ও বিভিন্ন রকমের ১০টা ঘুড়ি কিনলাম। ঘুড়ি নাটাইয়ের দামের ব্যাপারে এই ক্রেতা বলেন, গতবারের তুলনায় এবার ঘুড়ি ও নাটাইয়ের দাম একটু বেশি নিয়েছে। এবার ১০টা ঘুড়ি নিলাম ২০০ টাকা দিয়ে, যা গতবার আমি ১২০ টাকা দিয়ে কিনেছি। নাটাই নিয়েছে আড়াইশ’ টাকা, গত বছর কিনেছি দেড়শ’ টাকা দিয়ে।

নানা রকমের ঘুড়ি কিনছেন ক্রেতারা

ঘুড়ি বিক্রি প্রসঙ্গে শাঁখারীবাজারের মাতাশ্রী বিপণি বিতানের দোকানি চয়ন সুর (১৯) বলেন, করোনার পর দুই-তিন দফায় কাগজের দাম বেড়েছে। তার সঙ্গে এখন কারিগরদেরও বেশি পারিশ্রমিক দিতে হয়। তাই ঘুড়িপ্রতি দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। এতে সাকরাইন উপলক্ষে বিক্রিতে কোনও প্রভাব পড়েনি। বরং গত দুদিন ধরে ঘুড়ি-নাটাই কিনতে আসা কাস্টমারের চাপে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শাঁখারীবাজারে গলির ফুটপাতে টেবিল পেতে রঙবেরঙের ঘুড়ি ওড়ানোর ধারালো সুতো বিক্রি করছেন করুণা রানী সাহা (৪৫)। তিনি বলেন, সাকরাইন উৎসবকে কেন্দ্র করে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় সুতা বিক্রি করতে বসেছি। পেছনে স্বামীর দোকান আছে, সেখানে ঘুড়ি ও ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতা বিক্রি করতো। কিন্তু সাকরাইনের বেচাবিক্রির চাপ এত বেশি যে তার ছোট দোকানে একা বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই আমি তাকে সাহায্য করতে টেবিল-চেয়ার নিয়ে দোকানের সামনে সুতা বিক্রি করছি।

গতবারের চেয়ে এবার ঘুড়ির দাম একটু বাড়লেও বিক্রি কমেনি

প্রসঙ্গত, ঢাকায় পৌষ সংক্রান্তির দিনকে বলা হয় সাকরাইন। অনেকের কাছে এটি 'হাকরাইন' নামেও পরিচিত। আদি ঢাকার মানুষের কাছে সাকরাইন পিঠাপুলি খাবার উপলক্ষ, আর সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতার দিন। সাকরাইন একান্তই ঢাকার নিজস্ব উৎসব। এই উৎসব বাংলাদেশের আর কোথাও পালিত হয় না। এটা ঢাকার জনপ্রিয় ও দীর্ঘ সাংস্কৃতিক চর্চার ফল।

শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, গোয়ালনগর, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, লালবাগ ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে বিপুল উৎসাহের মধ্যে ছোট, বড় সবাই মেতে ওঠেন এ উৎসবে। সাকরাইনের দিন বিকালে এসব এলাকায় আকাশে রঙবেরঙের ঘুড়ি ওড়ে। ছাদে কিংবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। অধিকাংশ সময়ে ভোঁ কাট্টা'র (ঘুড়ি কাটাকাটি) প্রতিযোগিতা চলে। একজন অপরজনের ঘুড়ির সুতা কাটার কসরৎ করে।

ছবি: প্রতিবেদক

/এফএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বেড়িবাঁধে উন্নত নিরাপত্তা ও গতিশীলতা: মেয়র আতিকের কাছে ইউল্যাবের আবেদন
মিল্টনের আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রিতদের এখন কী হবে
সর্বশেষ খবর
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
ছেলের মৃত্যুর ৪ দিনের মাথায় চলে গেলেন বাবা, গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
গাজা ও ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
অনেক নার্ভাস ছিলেন সাইফউদ্দিন
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
বকশিবাজার মোড়ে বাসের ধাক্কায় পথচারী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা