সরকারের সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার সঙ্গে সমন্বয় রেখে ঢাকার যানজট নিরসন ও পথচারীবান্ধব নগরী গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) বহুমাত্রিক উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। বুধবার (৩১ জুলাই) নগর ভবনের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় তিনি এ মন্তব্য করেন।
মেয়র তাপস বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দক্ষিণ বঙ্গের ২১টি জেলা থেকে আসা বাস ঢাকার ভেতরে প্রবেশ করে উত্তর বঙ্গে যাতায়াত করছে। বাসগুলোকে যেন আর শহরের ভেতরে প্রবেশ করতে না হয়, সে জন্য পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়ের বাজার স্লুইস গেট পর্যন্ত আট সারির ইনার সার্কুলার রিং রোড (বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি সরণি) প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এরই অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে কামরাঙ্গীরচরের লোহার পুল থেকে রায়ের বাজার স্লুইস গেট পর্যন্ত আট সারির সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এই সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এই সড়কের মাঝের চার সারি এক্সপ্রেসওয়ে এবং দুই পাশে চার সারি সার্ভিস লেন হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়াও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে ১০০টি মোড় ও স্থানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর ট্রাফিক সিগন্যালিং প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান।’
রাজধানীর গণপরিবহনের শৃঙ্খলার বিষয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘নগরীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের আওতায় ইতোমধ্যে তিনটি যাত্রাপথে পরীক্ষামূলকভাবে ঢাকা নগর পরিবহন চালু করা হয়েছে। কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ঢাকা নগর পরিবহন জনগণের কাছে সমাদৃত হয়েছে। এছাড়াও নগরী থেকে আন্তজেলা বাসের চাপ কমাতে ঢাকার ভেতর থেকে বাস টার্মিনাল সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কাঁচপুরে ঢাকা নগর আন্তজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ কাজের অংশ হিসেবে ভূমি উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হয়েছে। বর্তমানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। পাশাপাশি কেরানীগঞ্জের বাঘাইরে নতুন আরেকটি আন্তজেলা বাস টার্মিনাল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়াও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। ’
পথচারীবান্ধব শহর প্রতিষ্ঠা আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে পান্থপথ মোড় থেকে সোনারগাঁও রোড ও সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ সড়ক (বাসাবো বৌদ্ধ মন্দির থেকে কালিমন্দির সড়ক) সম্প্রসারণ এবং দুই পাশে ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ফুটপাত সৃষ্টি করা হয়েছে। ১৪ ফুট থেকে ২০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সড়ক। এছাড়াও মুগদা প্রধান সড়ক ১৭ ফুট থেকে ৫০ ফুটে সম্প্রসারণের উদ্যোগ বাস্তবায়নাধীন। সামষ্টিকভাবে ঢাকা শহরের যানজট কিছুটা হলেও সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে।’
দখলদারত্বের বিরুদ্ধে দক্ষিণ সিটির কঠোর অবস্থান
ডিএসসিসি মেয়র বলেন, ‘ঢাকা শহরের রাস্তা, মার্কেটের দোকান, অলি-গলি, কাঁচাবাজার, পথচারীদের হাঁটার পথ, নর্দমা এমনকি নদী-নালায়ও ভূমিদস্যুরা পাকাপোক্ত আস্তানা গেড়ে বসেছিল। দখলদারত্ব যেন নিয়মে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু অবৈধ দখলদারত্বের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই আমরা কঠোরতা দেখিয়ে চলেছি। দখলদারদের বিরুদ্ধে আমাদের অনমনীয় মনোভাব আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যেমন দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হওয়া ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারের বেইজমেন্ট, নিউ সুপার মার্কেটসহ অনেকগুলো মার্কেটে নকশা বহির্ভূত দোকান নির্মাণকারী অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করেছি, তেমেই দখলমুক্ত করা হয়েছে বুড়িগঙ্গা আদি চ্যানেল ঘিরে গড়ে ওঠা ১৫৫টি অবৈধ স্থাপনা। আমরা আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেলে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ১০তলা ভবন, পান্না ব্যাটারি ও ম্যাটাডোর বলপেনের অবৈধ বর্ধিতাংশসহ কয়েক ডজন অবৈধ বহুতল ভবন ও স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছি।’
মেয়র আরও বলেন, ‘দখলমুক্তির ধারাবাহিকতায় আমরা দীর্ঘ এক শতাব্দী পর নলগোলা ভাওয়াল রাজবাড়ি (রাজকুঠি), ৮০ বছর পর সূত্রাপুরের মাইশা খাল, তিন দশক পর রায় সাহেব বাজার মোড়, দুই যুগ পর লক্ষ্মীবাজারে ডিএসসিসির পার্কিংয়ের জায়গা, চার দশক পর ধলপুর ক্লিনার কলোনি থেকে অবৈধ দখলদারত্বের অবসান ঘটিয়েছি। এ কারণে বিগত চার বছরে শতাধিক উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে ৫৭ দশমিক ৭২৪ একর ভূমি উদ্ধার করেছি, যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।’
দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে মেয়র তাপস বলেন, ‘সামষ্টিকভাবে আমরা বলতে পারি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অটল, অদম্য ও অনমনীয় কর্মোদ্যোগের ফলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি ঢাকাবাসীর আস্থা বেড়েছে। যে সংস্থা এক সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খেতো সে সংস্থা আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ, আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে।’
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন– করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, প্যানেল মেয়র ও ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শহিদ উল্লাহ মিনু, অর্থ ও সংস্থাপন বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সেলিমসহ কাউন্সিলর ও বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরা।