শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর টানা কয়েক মাস নানান দাবিতে রাজধানী ঢাকা ছিল উত্তাল্ল। মাঝে মাঝে সকাল-বিকাল রাত শহরের প্রধান সড়কগুলো দখল নিতো বিক্ষোভকারীরা। কিছুদিন বিরতি নিয়ে সম্প্রতি নানা দাবিতে সড়কে আবারও সক্রিয় হতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদের। সড়ক আটকিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে এসব আন্দোলন-বিক্ষোভ করায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীর।
জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় একের পর এক আন্দোলন। যা সরকারের জন্য বিব্রতকর পরিস্থিতি। এসব আন্দোলনের মধ্যে ৭৬ শতাংশই হয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবীর ব্যানারে। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আন্দোলনের সংখ্যা ৩২ শতাংশ।
রবিবার (১৮ মে) সপ্তাহের প্রথম কার্য দিবসে সকাল থেকেই রাস্তা বন্ধ করে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে আন্দোলনকারীদের। এতে চারপাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়া যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ছে।
এদিন দুপুরে থেকে রাজধানীর প্রেস ক্লাব, শাহবাগ ও শ্রম ভবনের সামনের সড়কে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করেছে বিক্ষোভকারীরা। ফলে সকাল থেকে রমনা এলাকার বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচল ছিল ধীরগতি, আবার এসময় কোথাও কোথাও সড়কে দীর্ঘ যানজটও সৃষ্টি হতে দেখা গেছে। অলিতে-গলিতে ছড়িয়ে পড়েছিলো এ যানজট। এতে সবচেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে হাসপাতাল কিংবা জরুরি কজে বের হওয়া মানুষদের।
এদিকে শাহবাগ এলাকায় একটা আন্দোলন শেষ হতে না হতেই আরেকটি গ্রুপ এসে দাঁড়াচ্ছে এতে প্রভাব পড়ছে সড়কে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেঁধে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম শেষে মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার না হওয়ায় রবিবার (১৮ মে) দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানা ঘেরাও করে। পরে অবস্থান নেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এটা শেষ হতে না হতেই একই দাবিতে এদিন বিকালে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
তার আগে এদিন দুপুর থেকে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। এদিন বিকাল ৩টার দিকে বেতন-বোনাসসহ যাবতীয় বকেয়া পরিশোধের দাবিতে শ্রম ভবনের সামনে সড়কে অবস্থান করে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা। রবিবার (১৮ মে) এদিন দুপুরে নগর ভবনে সামনে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে টানা চতুর্থ দিনের অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিক্ষোভকারীর। এসব বিক্ষোভ আজ (রবিবার) সারা দিনই ছিল সড়কে যানবাহনের চাপ।
এছাড়া গত সপ্তাহে পুরোটা জুড়ে কাকরাইল, শাহবাগ এলাকা ছিল আন্দোলনকারীদের দখলে। এসব আন্দোলনের ফলে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া পরিবহন, কর্মস্থলে যাওয়ার তাড়া, কিংবা স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনগুলোকে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। রাস্তায় বাস, প্রাইভেট কার, রিকশা আর মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি যেন এক স্থবির শহরের চিত্র এঁকে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইতোমধ্যেই ভোগান্তির চিত্র ভাইরাল হয়েছে, জনমনে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়া শরীফুল ইসলাম বিকাল ২টার দিকে প্রেস ক্লাবে পার হতে গিয়ে যানজটে আটকে পড়েন। পরে রিকশা থেকে নেমে হেঁটেই গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেন। তিনি বলেন, পল্টন থেকে রিকশা নিয়েছিলাম, প্রেসক্লাবের কাছাকাছি এসেই দেখি সামনে আগানো যাচ্ছে না। তাই নেমে হাঁটা শুরু করলাম।
আরেকজন যাত্রী মোখলেছুর রহমান বলেন, ইদানীং যেভাবে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ হচ্ছে। আনাদের সাধারণদের উপায় নেই। হাতে পর্যাপ্ত সময় না নিয়ে বের না হলে ঠিক সময়ে পৌছাঁনো সম্ভব না। আমাদের সহ্য হয়ে যাচ্ছে। এখন এসবের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার প্রয়োজন, আর কী?
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (রমনা ট্রাফিক বিভাগের ডিসি) শফিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আন্দোলন-বিক্ষোভের কারণে আজ (রবিবার) সকাল থেকে পাশপাশের বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে দুপুরে পর একটু স্বাভাবিক দিকে যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণে রাখার।