সুন্দরবনে আগুনের ঘটনায় দেশের বিশিষ্ট ১১ নাগরিক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বুধবার (৮ মে) এক বিবৃতিতে তারা এই উদ্বেগ জানান। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী নাগরিকদের পক্ষে ধরিত্রী রক্ষায় আমরার (ধরা) সদস্য সচিব শরীফ জামিল এ তথ্য জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, গত ৪ মে বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই দিন সুন্দরবনের লতিফের ছিলা নামে জায়গায় স্থানীয় জেলেরা এই আগুন দেখতে পান। সবশেষ জানা গেছে, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও প্রশাসনের সমন্বিত প্রচেষ্টায় তিন দিন পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে সুন্দরবনের ওই এলাকার যৌগিক বাস্তুতন্ত্র, বন্যপ্রাণী এবং বনজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কী কারণে সুন্দরবনের গভীরে বার বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে, তা স্পষ্টভাবে এখন পর্যন্ত জানাতে পারেনি বন কর্তৃপক্ষ। এটা দুঃখজনক এবং উদ্বেগের বিষয়। সুন্দরবনে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। যেহেতু ধারাবাহিকভাবে এমন ঘটনা ঘটছে, তাই এর কারণ অনুসন্ধান এবং তা মানবসৃষ্ট হলে দায়ীদের চিহ্নিত করতে সঠিক তথ্য উদ্ঘাটন জরুরি।
ওই ১১ নাগরিক জানান, গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৬ বার আগুন লাগে। সরকারি হিসাবে এতে প্রায় ৭৫ একর বনভূমি ধ্বংস হয়। বনজীবীদের ফেলে আসা আগুন থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে বলে ২৪টি তদন্ত প্রতিবেদনে ১৫ বার উল্লেখ করা হয়েছে। সুন্দরবনের জমি দখল ও প্রাণবিনাশী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে এই অগ্নিকাণ্ডের কোনও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার। এশিয়ার ফুসফুস খ্যাত সুন্দরবনে মানবসৃষ্ট অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে বনবিভাগ এবং অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, পরিবেশকর্মী, সুন্দরবন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি আমরা। আগুনের মতো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ সুন্দরবনের ভেতরে যেকোনও সম্ভাব্য দুর্ঘটনা মোকাবিলায় বিজ্ঞানভিত্তিক আগাম প্রস্তুতি ও তড়িৎ পদক্ষেপের জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন– সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধুরী, খুশী কবির, ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ড. ইফতেখারুজ্জামান, শারমিন মুরশিদ, এমএস সিদ্দিকী, অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান এবং শরীফ জামিল।