X
মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
৯ আষাঢ় ১৪৩২

উপকূলীয় বনসহ দেশের সব বনভূমি সংরক্ষণে নীতি সংস্কারের দাবি

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৩ জুন ২০২৫, ২২:০৭আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ২২:০৭

উপকূলীয় বনসহ দেশের সব ধরনের বনভূমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের স্বার্থে সরকারের বন রক্ষায় প্রণীত বিভিন্ন নীতিমালা, পরিকল্পনা ও আইন পর্যালোচনা করে একটি নীতিগত এর খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। এর মূল লক্ষ্য হলো বিদ্যমান আইনি কাঠামোর সংস্কার এবং টেকসই বন ব্যবস্থাপনা প্রবর্তনের মাধ্যমে দেশের বনভূমি ফিরিয়ে আনা।

সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘ব্লু ইকোনমি অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ প্রকল্পের অধীনে অক্সফ্যাম বাংলাদেশ, কোডেক ও বিটিএসের (ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স) সহযোগিতায় বেলার আয়োজনে একটি কর্মশালায় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

কর্মশালায় সরকারি কর্মকর্তা, আইন বিশেষজ্ঞ, পরিবেশবাদী, শিক্ষাবিদ ও উপকূলীয় এলাকার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা উপকূলীয় বনসহ দেশের সব বনভূমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বপূর্ণ মতামত ও সুপারিশ তুলে ধরেন।

কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ।

তিনি বলেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ, যেখানে উভয় উপস্থাপক তাদের নীতিমালা ও প্রযুক্তিগত সরঞ্জামগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় সাধন করেছেন। এসডিএসএস টুলের মাধ্যমে বন ব্যবস্থাপনাকে সঠিক ও নতুন মাত্রায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে এ টুলে আইনগত সংস্কার অন্তর্ভুক্ত করাও অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রচলিত আইন ও বিধিমালায় সংশোধন এনে প্রযুক্তির সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আইনগত সংশোধনের মাধ্যমে এই টুলকে একটি কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব, যা বন ধ্বংসকারী মানবসৃষ্ট অবৈধ কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং বন সংরক্ষণকে আরও শক্তিশালী, সুনির্দিষ্ট ও প্রযুক্তিনির্ভর করে তুলবো।

অক্সফ্যাম বাংলাদেশের জলবায়ু নীতি বিশেষজ্ঞ এস এম সাইফি ইকবাল বলেন, উপকূলীয় বন উজাড়ের প্রধান কারণ হচ্ছে— মানবসৃষ্ট কার্যকলাপ যেমন- অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাছ কাটা, চিংড়ি চাষ ইত্যাদি। এর ফলে প্রতিবছর ১ শতাংশ হারে ম্যানগ্রোভ বন হারিয়ে যাচ্ছে। কৌশলগত অংশীদারত্ব ও সহ-ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই ধ্বংস প্রতিরোধ করা সম্ভব।

বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদে জীববৈচিত্র্যসহ বন রক্ষার কথা বলা হলেও প্রকল্প প্রণয়নের সময় ভূমি ব্যবহার ও বন ধ্বংসের বিষয়টি সরকার মূল্যায়ন করে না।

তাসলিমা ইসলাম সুপারিশ করেন অন্যান্য আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বন আইনের সমন্বয় সাধন, ২০২৪ সালের বন নীতি সংশোধন, বনের মালিকানা পুনর্গঠন, বন উজাড়ের দায় নির্ধারণ ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং উপকূলীয় বন সংরক্ষণের জন্য আলাদা নীতি প্রণয়ন।

অস্ট্রেলিয়ান হাই কমিশনের দ্বিতীয় সচিব (উন্নয়ন) জেকব ডি লিওন বলেন, বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় আইন বিদ্যমান থাকলেও তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ দক্ষ জনবলের ঘাটতি এবং আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতা।

প্যানেল আলোচক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড ফুড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. ওয়াসিউল ইসলাম বলেন, সহ-ব্যবস্থাপনায় বনবাসীদের কার্যকর অংশগ্রহণের অভাব রয়েছে, অথচ বহু বছর ধরে প্রজেক্ট চলছে।

প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বন বিভাগের সিসিএফ সানাউল্লাহ বলেন, বন বিভাগ ও ভূমি প্রশাসনের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের মাধ্যমে বন সংরক্ষণ আরও বাস্তবভিত্তিক ও ফলপ্রসূ হবে।

উল্লেখ্য, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় একটি দেশের মোট ভূমির অন্তত ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা জরুরি। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ ও দরিদ্র দেশে জীবিকা ও দুর্যোগ মোকাবেবিলায় বনভূমির গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উপকূলীয় বনভূমির বিকল্প নেই।

 

/এএইচএস/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
খিলক্ষেতে মন্দির অপসারণে মুসল্লিদের আল্টিমেটাম, সমাধানের চেষ্টায় থানা পুলিশ
খিলক্ষেতে মন্দির অপসারণে মুসল্লিদের আল্টিমেটাম, সমাধানের চেষ্টায় থানা পুলিশ
প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ
প্রধান উপদেষ্টা ও দুদককে উকিল নোটিশ পাঠালেন টিউলিপ
পান্তের ইতিহাস, রোমাঞ্চ ছড়ানোর অপেক্ষায় হেডিংলি টেস্ট
পান্তের ইতিহাস, রোমাঞ্চ ছড়ানোর অপেক্ষায় হেডিংলি টেস্ট
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ট্রাম্প
জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ট্রাম্প
সর্বাধিক পঠিত
লালমনিরহাটে মহানবীকে কটূক্তির অভিযোগে সেলুনের কর্মী বাবা-ছেলে আটক
লালমনিরহাটে মহানবীকে কটূক্তির অভিযোগে সেলুনের কর্মী বাবা-ছেলে আটক
দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন ব্যবসায় অশনিসংকেত
দেশের সম্ভাবনাময় পর্যটন ব্যবসায় অশনিসংকেত
৫ আগস্টের পর ক্ষমতার বিরোধে দুই বন্ধু হয়ে গেলেন শত্রু, ঘটে গেলো জোড়া খুন
৫ আগস্টের পর ক্ষমতার বিরোধে দুই বন্ধু হয়ে গেলেন শত্রু, ঘটে গেলো জোড়া খুন
টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউসবোট চলাচল নিষিদ্ধ
টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউসবোট চলাচল নিষিদ্ধ
ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায় মন্দা, নেপথ্যের কারণ কী
ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায় মন্দা, নেপথ্যের কারণ কী