X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওদের কোথাও পড়ার দরকার নেই: উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের অধ্যক্ষ

রশিদ আল রুহানী
২৬ এপ্রিল ২০১৮, ২২:৪২আপডেট : ২৬ এপ্রিল ২০১৮, ২৩:২৬

উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের বিভিন্ন শ্রেণির ৯ শিক্ষার্থীকে  সম্প্রতি বাধ্যতামূলক টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এতে ওই শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়ে গেলো কিনা, জানতে চাইলে স্কুলটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন বলেন, ‘তাদের কিছুই হবে না। এমন হয় না। তাছাড়া, এমন চরম দুষ্টু ছেলে-মেয়েদের কোথাও পড়াশোনা করার দরকার নেই। তাদের দেখেই অন্যরা শিখবে।অভিভাবকরা সচেতন হবে। আমরাও সেটাই চাই।’

উল্লেখ্য, গত ২৩ এপ্রিল দুই শিক্ষার্থীকে এবং গত ২৫ এপ্রিল আরও  সাত শিক্ষার্থীকে টিসি দেওয়া হয়। স্কুলের একটি সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলা, মোবাইল ফোনে একছাত্রীর কথা বলা, দুই শিক্ষার্থীর মাঝে চাকু কেনা-বেচা, ইলেক্ট্রিক সিগারেট ব্যবহার এবং সিনিয়রিটি ও জুনিয়রিটি নিয়ে মারামারি—এসব অভিযোগ এনে ওই ৯ শিক্ষার্থীকে টিসি দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে স্কুলটির অধ্যক্ষের কক্ষে বসে বাংলা ট্রিবিউনকে সাক্ষাৎকার দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা স্কুলের পরিবেশ ঠাণ্ডা রাখতে, স্কুলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখতে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছি। এটা চলতে থাকবে।’

এই শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর টিসি দেওয়ার আগে তাদেরকে শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে আবুল হোসেন বলেন, ‘এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদেরকে শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা শোধরায়নি। স্কুলের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং হাজার হাজার শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা তাদেরকে টিসি দিয়েছি।’ তবে  তিনি এ সংক্রান্ত কোনও তথ্য প্রমাণ দিতে রাজি হননি, এমনকি ওই ৯ শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য তাদের মোবাইল নম্বর চাওয়া হলে, তিনি তা দিতেও অস্বীকৃতি জানান।

শিশু অধিকার আইন অনুযায়ী শিশুদেরকে শাস্তি দেওয়ার বিধান নেই। শিশুদের কোনও ভুলকে অপরাধ হিসেবে না ধরে, তা শোধরানোর চেষ্টা করার কথা বলা হয়েছে। তারপরও তাদের কোন আইনের কোন ধারায় টিসি দেওয়া হলো? জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, ‘এটা কোন আইনের কোন ধারায় পড়ে, সেটা আমার জানা নেই। তবে কোথাও না কোথাও তো থাকার কথা। কারণ, কেউ যদি স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করে, স্কুলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাতো নেওয়াই যায়। এটাই আমি মনে করি।’
তিনি বলেন, ‘এরা এত বেশি দুষ্টু, এদের সঙ্গে কুলিয়ে (পেরে) ওঠা খুবই কঠিন। এরা এত বেয়াদব তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। নবম শ্রেণির একছাত্রী মোবাইল ফোনে বাইরের এক ছেলের সঙ্গে কথা বলেছে।এটা আবার আমাদের জানিয়েছেন কয়েকজন অভিভাবক। এরপর ওই ছাত্রীকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে নিয়েছে।এরপর তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া, দুই শিক্ষার্থী ইলেক্ট্রিট সিগারেট নিয়ে স্কুলে এসেছে, তারা এটা কোথায় পেলো? তাদেরকে বহিষ্কার না করে কী করবো? আবার দুজন বন্ধুর একজন অন্যজনের কাছে ৩০০ টাকার বিনিময়ে চাকু বিক্রি করেছে। কী ভয়ানক ব্যাপার। এরা চাকু সঙ্গে নিয়ে ঘোরে। আবার স্কুলে সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলেছে একজন। এত বড় অন্যায় তো মেনে নেওয়া যায় না। টিফিন আওয়ারে সিনিয়রিটি ও জুনিয়রিটির দ্বন্দ্বে মারামারি করেছে কয়েকজন। এমন বিশৃঙ্খল সৃষ্টিকারীদেরকে তো স্কুলে রাখা ঠিক হবে না। এঅবস্থা দেখেও যদি টিসি না দেই, তাহলে স্কুলের পরিবেশ ঠাণ্ডা করতে পারবো না।’

টিসি দেওয়ার কারণে ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা আপনার সঙ্গে দেখা করেছেন কিনা, প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এদেরকে অন্যসময় ডাকলে আসেন না। এখন ঠিকই এসেছেন। এসে তারা বলেছেন, স্যার, এই টিসি-তো ফোর্স টিসি। এটা দিয়েতো আমাদের সন্তানদের কোথাও ভর্তি করাতে পারবো না। তখন আমি তাদের বলেছি, আমি চাই না তারা কোথাও পড়ুক। তারা সেখানকার পরিবেশও নষ্ট করবে। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থীর অপরাধ একটু কম গুরুতর ছিল, তার ফোর্স টিসি বাদ দিয়ে নরমাল টিসি দিয়েছি, যাতে সে কোথাও ভর্তি হতে পারে।’

ক্যামেরা ভেঙে ফেলার অভিযোগে টিসি দেওয়া শিক্ষার্থী এরইমধ্যে টিসি প্রত্যাহারের আবেদন করেছে। একথা জানিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, ‘দেখেন, এই ছেলেটি ক্যামেরা ভেঙেছে। সে এটা স্বীকারও করেছে। এখন বলেছে, ক্ষমা করে দিতে। কিন্তু এত বড় অন্যায় কীভাবে ক্ষমা করবো?’

ওই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আগেও কোনও অভিযোগ ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। এই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আগে কোনও অভিযোগ ছিল না।’ তবে তিনি এও বলেন, ‘টিসি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা যদি ক্ষমা চেয়ে আবেদন করে, তাহলে সেটা বিবেচনা করতেও পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি শুধু এগুলো শুধু জেনে রাখেন, এখন কিছু লিখেন না।’

ওই শিক্ষার্থীদের পরবর্তী জীবন হুমকির মুখে পড়ে গেলো কিনা জানতে চাইলে উইলস লিটল ফ্লাওয়ারের অধ্যক্ষ আবুল হোসেন বলেন, ‘তাদের কিছুই হবে না। এমন হয় না। তাছাড়া, এমন চরম দুষ্টু ছেলে-মেয়েদের কোথাও পড়াশোনা করার দরকার নেই। তাদের দেখেই অন্যরা শিখবে। অভিভাবকরা সচেতন হবে। আমরাও সেটাই চাই।’

আরও পড়ুন:

উইলস লিটল ফ্ল্যাওয়ার স্কুলে শুদ্ধি অভিযানের নামে টিসি আতঙ্ক

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
মিয়ানমার-থাই সীমান্তে আবারও বিদ্রোহীদের হামলা, থ্যাইল্যান্ডে পালাচ্ছে মানুষ
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
দেশের ৯ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি, পারদ উঠতে পারে আরও
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া