রাজধানীর মিরপুরের একটি বাড়িতে গুপ্তধনের সন্ধানে মাটি খুঁড়ছে প্রশাসন ও পুলিশ। বাড়িটির মাটির নিচে কমপক্ষে দুইমণ সোনা আছে এমন দাবি ওঠায় তথ্যটির সত্যতা নিশ্চিত করতে বাড়ির মেঝে খুঁড়ে দেখা হচ্ছে । শনিবার (২১ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে মিরপুর-১০ এর সি ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের ১৬ নম্বর বাড়িতে এই অভিযান চলছে বলে জানায় মিরপুর থানা পুলিশ।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চলতি মাসের ১০ জুলাই আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তি মিরপুরের এই বাড়িতে গুপ্তধন আছে মর্মে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। বিষয়টি ঢাকা জেলা প্রশাসককে জানানো হয়। এরপর ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর উপস্থিতিতে বাড়ির মাটি খনন কাজ পরিচালিত হচ্ছে।’
ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ার উজ জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল ১০টা থেকে এখানে মাটি খননের কাজ চলছে। বাড়ির ভেতরে দুটি রুমে খননের কাজ চলছে। ৮-১০ ফুট খননের পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
বাড়ির মালিক মনিরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০১০ সালে সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই বাড়িটি গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কিনেছিলাম। তারপর থেকে এই বাড়ি দেখাশোনার জন্য শফিকুল ইসলাম ও সুমন নামে দুজন কেয়ারটেকার রাখা হয়। তারাই এখানে থাকতো। পাশাপাশি বাড়িটিতে ঘর ভাড়াও দেওয়া হয়। সম্প্রতি বাড়িটি ভেঙে নতুন করে কনস্ট্রাকশনের কাজ করা হবে বলে ভাড়াটিয়াদের চলে যেতে বলা হয়। এরপর চলতি ১২ জুলাই রাতে কয়েকজন লোক বাড়ির ভেতরে জোরপূর্বক প্রবেশের চেষ্টা করেন। তারা বলেন, এই বাড়ির মাটির নিচে গুপ্তধন গচ্ছিত রয়েছে। তাদের মধ্যে আবু তৈয়ব নামে একজনও ছিল।’
পুলিশ সূত্র জানায়, কক্সবাজারের টেকনাফের বাসিন্দা আবু তৈয়ব চলতি ১০ জুলাই মিরপুর মডেল থানায় একটি জিডি করেন। সেখানে উল্লেখ করেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার আত্নীয়রা এই বাড়িতে বসবাস করতেন। সেসময় প্রায় দুই মণ স্বর্ণালঙ্কার এই বাড়ির মাটির নিচে গচ্ছিত রেখে তারা পাকিস্তান চলে যান। এরপর ওই জিডির ভিত্তিতে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর সি ব্লকের ১৬ নম্বর রোডের দুই পাশে বাঁশ দিয়ে আটকে গুপ্তধন উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। পৌনে ২ কাঠা প্লটের মধ্যে বাড়িটি। দুই পাশে মোট ৭টি ঘর রয়েছে। একটি রান্নাঘর ও পাশে টয়লেট। বাড়ির ভেতরের বাম পাশে পাশাপাশি দুটি ঘরে চলছে মাটি খোঁড়ার কাজ৷ এখানে খননের জন্য অন্তত ২০ জন দিনমজুর কাজ করছেন। ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশনায় মিরপুর থানা পুলিশ এই অভিযানটি পরিচালনা করছে।
দিনমজুর মো. এরশাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আড়াই ফুট গভীর পর্যন্ত মাটি খনন করা হয়েছে। অপর পাশের ঘরে তিন ফুট খনন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘উপরে সব নতুন বালু মাটি। ঘরের ৪ ফুট পর্যন্ত খনন করা হলে লাল মাটি পাওয়া যাবে বলে ধারণা করছি।'
কী পরিমাণে স্বর্ণালংকার গচ্ছিত রয়েছে জানতে চাইলে ওসি দাদন ফকির বলেন, ‘আবু তৈয়ব দাবি করেন, এখানে দুমণ স্বর্ণালংকার রয়েছে। তবে কেউ বলেন দুই কেজি আবার কেউ বলেন ৬০ কেজি। আমরা খনন করছি। যদি কোনও গুপ্তধন থাকে এবং আমরা উদ্ধার করতে পারি, তবে নির্দিষ্ট করে এর পরিমাণ জানা যাবে।’