X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিচার দাবিতে সড়ক অবরোধ: রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
৩১ জুলাই ২০১৮, ২১:২৯আপডেট : ৩১ জুলাই ২০১৮, ২১:৪০

ফার্মগেটে সড়ক অবরোধ রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকায় দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহতের ঘটনায় বিচার দাবি করে তৃতীয় দিন মঙ্গলবার রাজধানীজুড়ে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। এতে মহানগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুপুর থেকে গণপরিবহনও দেখা যায়নি।

মঙ্গলবার সকাল থেকে রাজধানীর মিরপুর রোড, বিমানবন্দর সড়ক, নাবিস্কো, মিরপুর সনি সিনেমা হলের সামনে, মিরপুর ১০, কাফরুল, মিরপুর ১৩, শিয়ালবাড়ি, বাড্ডা, সাইন্সল্যাব, মতিঝিল শাপলা চত্বর, আাগারগাঁও, শ্যামলী, রামপুরা, বাড্ডা ও উত্তরা সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে সাইন্সল্যাব, ফার্মগেট, উত্তরা ও কাফরুলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। পৃথক এসব ঘটনায় অন্তত ১০-১২ জন শিক্ষার্থী ও ৭-৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হন।

সকাল ১০টার দিকে তেজগাঁও বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষার্থীরা ফার্মগেটে প্রথমে সড়ক অবরোধ করে। এসময় নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। তারা সড়ক অবরোধ করে আধঘণ্টা বিক্ষোভ করে। পরবর্তীতে পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। তাদের একটি অংশ শাহবাগে এসে অবস্থান নেয়। এসময় কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ সড়কের গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর আবারও দুপুরে সড়কে নামে। এসময় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ তাদের সড়ক থেকে ধাওয়া করে তাড়িয়ে দেয়।

রাস্তায় প্রতিবাদমুখর শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে উত্তরার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনাস্থল শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের সামনে এসে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। এসময় পুলিশ তাদের কাউকে দাঁড়াতে দেয়নি। বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পুলিশের কড়া পাহারা ছিল। হজ্ব যাত্রীদের সুবিধার্থে কাউকে সড়কে দাঁড়াতে দেয়নি পুলিশ। এদিকে দাঁড়াতে না পেরে শিক্ষার্থীরা জসিম উদ্দিন সড়কে অবস্থান নেয়। বেলা দুইটা থেকে তারা সড়কের নিয়ন্ত্রণ নেয়। উত্তরা ইউনিভার্সিটি, মাইলস্টোন কলেজ, এছাড়াও উত্তরা হাউস বিল্ডিংয়ে বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পাঁচটি বাস ও একটি পিকআপ ভাঙচুর করেছে। পুলিশ বিক্ষুব্ধ ছাত্রছাত্রীদের ওপর লাঠিচার্জ করেছে। বিকাল ৩টা ৪২মিনিটে বুশরা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় শিক্ষার্থীরা। এরপর পুলিশের ধাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ৪টার দিকে চলে যায়।

দুপুরে মিরপুরে শিয়ালবাড়ি, সনি সিনেমা হল চত্বর, মিরপুর ১০ নম্বরের গোল চত্বর ও কাফরুলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এসব সড়কে যানচলাচল বন্ধ থাকে।

বেলা ১২টার দিকে সাইন্সল্যাবে সড়ক অবরোধ করে সিটি কলেজ, ঢাকা কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের কয়েকশ শিক্ষার্থী। তারা হিমাচল পরিবহন নামে একটি বাসেও আগুন দেয়। এসময় শিক্ষার্থীরা বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালাতে দেখা যায়। পুলিশ শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এরপর তাদের লাঠিচার্জ ও ধাওয়া দিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসের সরদারের গাড়ি ভাঙচুর করে তারা। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মিরপুর রোডের গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে থাকে।

অপরদিকে বেলা ১২টার দিকে নটরডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা শাপলা চত্বরে এসে সড়ক অবরোধ করে। তারা বিকাল ৩টার দিকে সড়ক থেকে সরে যায়। এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে নিরাপদ সড়কের জন্য বিভিন্ন ধরনের হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড তাদের বহন করতে দেখা যায়।

একই সময় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা রাজধানীর রামপুরা ব্রিজের ওপর মানববন্ধন করে। তারা সড়ক অবরোধ করতে চাইলে তাদের পুলিশ বাধা দেয়। পরে শান্তিপূর্ণ মানববন্দন করার শর্তে রাস্তার আইলাইনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান করতে দেওয়া হয়। তবে বিকাল ৩টার দিকে তারা আবারও সড়ক অবরোধ করে। এর কিছুক্ষণ পর নিরাপদ সড়ক ও দুই শিক্ষার্থীকে বাস চাপা দিয়ে হত্যার বিচারের দাবি করে সড়ক থেকে চলে যায় তারা।

বাস ভাঙচুর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শেরে বাংলা বয়েস স্কুলের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে। তারা দুপুরে শ্যামলী গিয়েও বিক্ষোভ করে ।

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এসব সড়কে বিক্ষোভ করায় মহানগরী থেকে গণপরিবহন সরিয়ে নেয় বাস মালিক কর্তৃপক্ষ। এতে দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। অনেকে অফিস থেকে পায়ে হেঁটে, রিকশাযোগে, মিনি ট্রাকে এবং অন্যান্য উপায়ে বাসায় ফিরেছেন।

দুপুরে দেড়টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত টঙ্গি-গাজীপুর থেকে কোন গাওড়ি রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারেনি। বনানী ও কাকলীতে শতাধিক মিনিবাস ও বাস পার্কিং করে রাস্তার পাশে রাখতে দেখা গেছে।

বাসে আগুন মতিঝিল থেকে মিরপুরের দিকেও গাড়ি পাচ্ছিল না সাধারণ মানুষ। এমনই একজন সালাহউদ্দিন আহম্মেদ। তিনি মতিঝিল থেকে পায়ে হেঁটে প্রেসক্লাব এসে অপর এক ব্যক্তির সঙ্গে যৌথভাবে একটি রিকশা নিয়েছেন বাসায় যাওয়ার জন্য। তার এই কষ্টতেও তিনি শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একমত। তিনি বলেন, ‘যারা মারা গেছে, তারা কারও না কারও সন্তান। আমারও সন্তান আছে। আমি চাই এর বিচার হোক।’

বনানী থেকে ইসমাইল নামে এক ব্যক্তি গাড়ি না পেয়ে হেঁটে খিলক্ষেত যাচ্ছেন। তিনি বলেন,‘আন্দোলন হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। সেদিকে কারও খেয়াল নেই।’

গাজীপুর ও গুলিস্তান রুটে চলাচল করা বলাকা পরিবহনের বাস দেখা গেছে কাকলীতে পার্কিং করে রাখা। বাস সহকারী রাসেল গাড়িতে বসে আছেন। গাড়ি না চালানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মালিক নিষেধ করেছে। সড়কে ছাত্ররা গাড়ি ভাঙচুর করে। তাই এখানে পার্কিং করে রেখেছি।’

গাড়ি সংকটের কারণে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে রিকশা চলতে দেখা গেছে। তবে বিকাল ৫টার দিকে উত্তরা ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার প্রবীর কুমার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কে এখন গাড়ি চলছে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। এখন আর কোনও সমস্যা নেই।’

 

/এআরআর/এনআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেএনএফ’র বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
কেএনএফ’র বিরুদ্ধে যৌথ বাহিনীর অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে: পরিবেশমন্ত্রী
পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে: পরিবেশমন্ত্রী
পটকা-আতশবাজি তৈরি করা ঘরটি উড়ে গেলো বিস্ফোরণে, মা-মেয়েসহ আহত ৪
পটকা-আতশবাজি তৈরি করা ঘরটি উড়ে গেলো বিস্ফোরণে, মা-মেয়েসহ আহত ৪
আবাহনীর ১০ ক্রিকেটার চট্টগ্রামে, একাদশ গঠন নিয়ে বিপাকে সুজন
আবাহনীর ১০ ক্রিকেটার চট্টগ্রামে, একাদশ গঠন নিয়ে বিপাকে সুজন
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ