X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীতে ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু, সতর্ক থাকার পরামর্শ

তাসকিনা ইয়াসমিন
২৮ আগস্ট ২০১৮, ০৭:৫০আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৩৯

রাজধানীতে ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু, সতর্ক থাকার পরামর্শ আবারও বেড়েছে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। এ রোগে কারও মৃত্যুর ঝুঁকি নেই; সংশ্লিষ্টরা এমন কথা বললেও এ বছর ইতোমধ্যেই এর শিকার হয়ে নয়জন মারা গেছেন। এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন বেশ কিছু রোগী। এই অবস্থার পরিবর্তনে দ্রুত মশা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সচেতনতার ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই আগস্ট মাসে এক হাজার ৫৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। গত জুলাই মাস থেকে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট দুই হাজার ২৭১ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

তিনি বলেন, নয়জনের মধ্যে পাঁচজন নারী, একজন পুরুষ ও তিনজন শিশু রয়েছে। গত ৯ জুন রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ৩৪ বছরের এক নারী মারা যান। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে ২৪ জুন ৩১ বছর বয়সী এক নারী মারা গেছেন। বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে ৩০ জুন ২৬ বছরের এক নারী, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ১৫ জুলাই এক বছর সাত মাস বয়সী এক শিশু, ৮ জুলাই ঢাকা শিশু হাসপাতালে একজন, ১৬ জুলাই একই হাসপাতালে ৯ বছরের এক শিশু, বারডেম হাসপাতালে ২৬ জুলাই ২৭ বছরের একজন, পপুলার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮ আগস্ট ৫৫ বছরের এক নারী এবং একই দিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫৪ বছরের এক নারী মারা গেছেন।

কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, গত ১ জানুয়ারি থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হন ৭০৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী।

বর্ষা মৌসুমে মশার প্রকোপ বেশি হয় উল্লেখ করে এর আগে গত মে মাসে রাজধানীর ১৯টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া বিস্তারে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এরপর সিটি কর্পোরেশন মশার লার্ভা নির্মূলে বেশ কিছু অভিযান চালায়। এরপরও এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনায় সচেতনতার অভাবকে দায়ী করছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)-এর সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাওয়ার কথা না। আমরা যারা ডেঙ্গু নিয়ে কাজ করি তারা জানি, আমরা মশা মারার জন্য বলি। কিন্তু মানুষ কি আদৌ সচেতন হয়? আমরা যখন হৈ চৈ করি তখন প্রশাসন কিছুটা চেষ্টা করে। বাকিটা সময় চুপ থাকে। আমি বেশ কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবাই নিজ বাসা থেকেই আক্রান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রশাসনের যেমন উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন, তেমনি ব্যক্তির নিজ বাসাও নিরাপদ রাখা প্রয়োজন।

এর আগে আইইডিসিআর থেকে বলা হয়, ঢাকায় প্রতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। এ সময়কে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম ধরা হয়। এ বছরের জানুয়ারিতে আগাম বৃষ্টি হওয়ায় মশার উপদ্রব আগে থেকেই বেড়ে গেছে।

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়া ইশাতির মাকসুরা জাহান (১৫) নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অসুস্থতার ধকল কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে সে। তার মা দিনার সুলতানা বলেন, মেয়ের জ্বর হওয়ার পর কিছুতেই কমছিল না। জ্বর ১০৩-১০৪ থাকছিল। পরে তাকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডা. বজলুল করিমের অধীনে সব মিলিয়ে ১২ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পর তার ডেঙ্গুজনিত প্লাটিলেট কমে যাওয়া বন্ধ হয়।

ডেঙ্গু খুবই কষ্টকর একটি রোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যখন ওর কয়েক ব্যাগ রক্ত দেওয়ার পরও প্লাটিলেট বাড়ছিল না তখন আমরা খুব ভয় পেয়ে যাই। তার রক্তের প্লাটিলেট ২০ হাজারে নেমে এসেছিল। এখন আল্লাহর রহমতে মেয়ে বেশ ভালো আছে। ও তখন কিছুই খেতে পারছিল না। যা খেত বমি হয়ে যেত। বমির ভয়ে সে খেতে চাইত না। এ কারণে সে আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এখন চিকিৎসক তাকে রেস্টে থাকতে বলেছে। প্রতিদিন আড়াই লিটার পানি খেতে বলেছে। সবারই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতন হওয়া উচিত।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের এখানে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে এবং এখনও অনেকে ভর্তি আছে। এখানে একজন শিশু মারা গেছে। গত জুন মাসে ৩৮ জন ভর্তি হয়েছে, তারা সবাই ডিসচার্জ হয়ে গেছে। জুলাই মাসে ১০৭ জন ভর্তি হয়েছিল। তারা প্রত্যেকেই ডিসচার্জ হয়ে চলে গেছে। আগস্ট মাসে এ পর্যন্ত ৯০ জন ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে ৭৭ জন ডিসচার্জ হয়ে গেছে। একজন শিশু মারা গেছে। এখন ১২ জন ভর্তি আছে।

তিনি বলেন, গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে কেউ হাসপাতালে এ রোগে ভর্তি হয়নি। মার্চে দুইজন ভর্তি হয়েছিল। এপ্রিলে কেউ ভর্তি ছিল না। মে মাসে ছয়জন ভর্তি হয়েছেন। অর্থাৎ, এ পর্যন্ত মোট ২৪৩ জন ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন মারা গেছে। ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় রয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর পরিচালক ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে এখন ডেঙ্গু রোগীর চাপ নেই। আমরা এই রোগীদের জন্য আলাদা করে চারটি বেড প্রস্তুত রেখেছি। মোট ২৩/২৪ জনের মতো রোগী আমরা পেয়েছি। তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ডেঙ্গু রোগী এখন বেড়েছে। প্রতিদিন ২০-২৩ জন জ্বরের রোগী থাকলে এরমধ্যে ডেঙ্গু রোগী থাকে ৮-১০ জন। এই মুহূর্তে আমার হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ১৮-২০ জন।

তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা আউটডোর করেছি। যারা জ্বর নিয়ে আসছে তাদের মধ্যে ডেঙ্গু রোগী হলে আলাদা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ইনডোরে কোনও আলাদা ব্যবস্থা করা হয়নি।

বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নিজের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে নিজের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিতে হবে। শোয়ার সময় মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে, যেন মশা না কামড়ায়। মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য যা যা করা দরকার তা করতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি প্রশাসনেরও সচেতনতা প্রয়োজন।

/এমপি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
এই গরমে শিরোনামহীনের শীতল সুর!
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি জয়া
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি গণতন্ত্রে অকার্যকর ডামি রাজনৈতিক দল: ওবায়দুল কাদের
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
চারতলা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে মাদ্রাসাছাত্রীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
ব্রাজিল থেকে গরু আমদানি প্রসঙ্গে যা বললেন রাষ্ট্রদূত
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী