X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

৬ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা, সন্তানের লাশসহ বেরিয়ে এলেন বাবা

রাফসান জানি
০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:০৪আপডেট : ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৮:১৭





আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে শিশু সন্তানসহ বাবা রাজধানীর বাংলামটরে এক সন্তানের মরদেহসহ অন্য সন্তানের গলায় দা ধরে বাসার ভেতরে বাবা বসে আছেন—এমন তথ্যে বাড়ির সামনে অবস্থান নেয় থানা পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিস। বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। পরে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ছয় ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা শেষে বেরিয়ে আসেন বাবা নুরুজ্জামান কাজল ও বড় ছেলে সুরাইত (সাড়ে তিন বছর)। কাফনে মোড়ানো ছোট ছেলে সাফায়েতের (আড়াই বছর) মরদেহও বের করে নিয়ে আসা হয়।
বাসা থেকে বের হওয়ার মুহূর্তেই বাবা নুরুজ্জামানকে আটক করে পুলিশ। সাফায়েতের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে। আর সুরাইতকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ছেলের লাশ সকাল থেকে ছোট ছেলেকে হত্যার পর বড় ছেলেকে জিম্মি করে বাবা নুরুজ্জামান কাজল বাসায় অবস্থান করছেন—এমন কথা শোনা গেলেও হত্যার সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাংলামোটরের লিংক রোডে ১৬ নম্বর বাসার বাসিন্দা নুরুজ্জামানের স্বজনরা জানান, বাসায় নুরুজ্জামান ও তার দুই ছেলে থাকতো। তিন-চার মাস আগে স্ত্রীকে বের করে দেয় নুরুজ্জামান। এরপর থেকে বাড়িতে দুই সন্তান ও নুরুজ্জামান ছাড়া আর কেউ থাকতো না। গত কয়েকদিন ধরে জন্ডিসে আক্রান্ত ছিল ছোট ছেলে সাফায়েত।
স্বজনদের ধারণা, জন্ডিসের কারণে বুধবার সকালে সাফায়েত মারা গেছে। নুরুজ্জামানের মা আমেনা বেগম বলেন, ‘সকালে আমার ছেলে ফোন করে বলল, তোমার নাতি নাই। আমার নাতির জন্ডিস হইছিল। ডাক্তারও দেখাইছে। আমার ছেলে ওরে মারে নাই। আপনারা ভুল বলছেন।’
উৎসুক মানুষের ভিড় ছোট ছেলে সাফায়েতের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘বাসার ভেতরে সবকিছু ভাঙাচোরা, এলোমেলো। এগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে না কীভাবে মারা গেছে। পোস্টমর্টেম না করে কিছু বলা যাচ্ছে না। কোনও রক্তের দাগও প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়নি। এখানে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, তার বাবাকে আটক করা হয়েছে। ভিকটিম ও আটককৃত ব্যক্তির বাবা-ছেলে সম্পর্ক। নিশ্চিত প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। আমরা পুরো বিষয়টা মানবিকভাবে প্রমাণসাপেক্ষে দেখতে চাই।’
উৎসুক জনতা নুরুজ্জামান কাজলের স্বজনদের দাবি, পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নুরুজ্জামান কাজল তৃতীয়। বাবা মনু মিয়া। এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা তারা। বাবা মারা গেছেন আগেই। নুরুজ্জামান নিজে টাইলসের ব্যবসা করলে চার বছর আগে লস করায় বন্ধ হয়ে যায়। পারিবারিক কলহ ও বাজে ব্যবহার করে পরিবারের অন্য সদস্যদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিন মাস আগে স্ত্রীকে নির্যাতন করে তাড়িয়ে দেয় নুরুজ্জামান। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করা হয়েছিল।
অন্যদের সঙ্গে বাজে আচরণ করলেও সন্তানদের নুরুজ্জামান আগলে রাখতো বলে জানান প্রতিবেশীরা। টাইলস ব্যবসায়ী রাশেদুর রহমান সুমন বলেন, ‘দুই-তিন মাস ধরে দুই ছেলেকে নিয়ে একাই বাসায় থাকতো নুরুজ্জামান। কাউকে বাসায় যেতে দিতো না। শুনেছি মাদক গ্রহণ করতো। কিন্তু আমি নিজে কখনও মাদক নিতে দেখিনি। কেন এমনটি করলো তা বুঝতে পারছি না। তবে মাথায় একটু সমস্যা ছিল তার।’
বুধবার সকালে নুরুজ্জামান নিজেই মসজিদে গিয়ে ছেলে মৃত্যুর সংবাদ মাইকে প্রচার করেন। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন কাফনের কাপড়। এরপর পাশের মসজিদের একজন ইমামকে নিয়ে বাসায় যান। এরপর থেকে ইমাম ও মৃত সন্তানসহ দুই ছেলেকে নিয়ে ভেতরেই অবস্থান করছিলেন নুরুজ্জামান।
এরই মধ্যে পুলিশ ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে ক্ষিপ্ত হন নুরুজ্জামান। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, ‘আমাদের দেখে বলেন, আপনারা কেন আসছেন, কাউকে লাগবে না। আপনারা চলে যান।’
ঘটনার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে চলে আসেন র‌্যাবের সদস্যরা এরপর থেকে সতর্কতার সঙ্গে বাইরে অবস্থান নেয় পুলিশ। রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনাস্থলে আসি। ভেতরে ছোট একটা বাচ্চা ছিল, মসজিদের একজন হুজুর ছিলেন। তাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা কোনও ধরনের অ্যাকশনে যাইনি। কারণ, এতে ক্যাজুয়ালিটির শঙ্কা ছিল। আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছি। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে জীবিতদের সুস্থভাবে উদ্ধারের চেষ্টা করছি। সর্বশেষ আমরা দুপুরের নামাজের পর বাচ্চার জানাজার কথা বলে তাকে বাইরে নিয়ে আসার চেষ্টা করলাম। এতে কাজ হলো। সে বেরিয়ে আসলো। সঙ্গে সঙ্গে আমরা আড়াল থেকে ধরে ফেলি। কোনও ধরনের ক্যাজুয়ালটি ছাড়া অভিযান সমাপ্ত করতে সক্ষম হই।’
পুলিশের রেসকিউ টিমের তৎপরতা ঢাকা মেডিক্যাল সূত্রে জানা গেছে, দুপুর সোয়া ২টার দিকে মৃত মো. সাফায়েতের মরদেহ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করছে পুলিশ। শাহবাগ থানার এসআই চম্পক চক্রবর্তী বলেন, ‘শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাইনি। বিস্তারিত পোস্টমর্টেমের পর বলা যাবে।’
ঢামেক মর্গের সামনে মৃত সাফায়েতের চাচা নুরুল হুদা উজ্জ্বল ও ফুফু জাহানার বেগম জানান, তাদের ভাই নুরুজ্জামান কাজল তার ছেলেকে হত্যা করেছেন, এটা হতে পারে না। তাদের বিশ্বাস অসুস্থ হয়ে মারা গেছে সাফায়েত।
পুলিশের হেফাজতে বাবা নুরুজ্জামান কাজল তারা আরও জানান, নুরুজ্জামানের স্ত্রী প্রিয়া আক্তার মালিহা তিন মাস আগে কামরাঙ্গীরচরে বাবার বাড়িতে চলে গেছে। এরপর থেকে নুরুজ্জামানই দুই ছেলেকে দেখাশোনা করছিলেন।

/আরজে/এইচআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
ন্যাশনাল ব্যাংকে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন, নিয়োগ পেলেন ১০ জন 
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
স্বস্তির জয়ে শিরোপার লড়াইয়ে ফিরলো লিভারপুল
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি চায় ঢাকা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী