X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

৯৯৯ নম্বরে কল, বাসায় ছুটে গিয়ে আত্মহত্যা ঠেকালো পুলিশ!

নুরুজ্জামান লাবু
১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০৮আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:১৬

জরুরি সেবা ৯৯৯ মধ্যরাত। ভাই থাকেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। আর বড় বোন ও মা পটুয়াখালীতে। রাতেই হঠাৎ বোনকে ফোন করে আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের কথা জানান ভাই। তার আর এই জীবন ভালো লাগছে না। ঘরেই দড়িতে ঝুলে নিজের প্রাণ কেড়ে নিতে চান তিনি। একইসঙ্গে তিনি পরিবারের সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। এসব কথা শুনে মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে বোনের। উপায় না দেখে তিনি ফোন করেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে। পুলিশের কাছে ভাইকে বাঁচানোর আকুতি জানান।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্রুত মোহাম্মদপুর থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান। তারা রাতে টহলে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইউসুফ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ ঘটিয়ে দেন বোনের। পুলিশ গিয়ে হাজির হয় মোহাম্মদপুরের চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের এক নম্বর এভিনিউয়ে তার ভাইয়ের বাসায়। তাকে আনা হয় থানায়। তারপর রাত থেকে রবিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউন্সেলিং করা হয় তাকে। সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নথিভুক্ত করে তাকে আবার স্বজনদের হেফাজতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তব্যরত সদস্যরা বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারা নিজেদের জন্য আনন্দের মনে করছেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মিরাজুর রহমান পাটোয়ারী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৯৯৯ এখন সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে। আমরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে মানুষকে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’
মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ জানায়, অনিক (ছদ্মনাম) নামে ওই ব্যক্তি ডগ ট্রেনার হিসেবে কাজ করেন। স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে তিনি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এছাড়া হতাশা গ্রাস করেছিল তাকে। শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) গভীর রাতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পাওয়ার সময় চন্দ্রিমা হাউজিং এলাকায় টহল ডিউটিতে ছিলেন এসআই ইউসুফ আলী। তাকে দ্রুত ওই বাসায় যেতে বলা হয়। তিনি ওই বাসায় গিয়ে অনিককে উদ্ধার করেন।
মোহাম্মদপুর থানার এসআই ইউসুফ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে ঘটনার বিবরণ দিলেন, ‘আমি রাতের ডিউটিতে ছিলাম। ৯৯৯ নম্বর থেকে ফোন পেয়ে দ্রুত চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের একটি বাসায় গিয়ে দারোয়ানকে ডেকে তুলি। তারপর নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে গিয়ে নক করলে ওই তরুণ দরজা খুলে দেয়। তাকে নিচে আসতে বলা হলে তিনি নেমে আসেন। পরে তাকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে আসি। রাতেই তাকে কাউন্সেলিং করা হয়েছে। দিনের বেলা আমাদের অন্য কর্মকর্তারা তার সঙ্গে কথা বলেছে। পরিবারের সদস্যদের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে তাকে।’

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই তরুণ মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত ছিল। স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য ও সামাজিক রীতিনীতি তার ভালো লাগতো না। এ কারণে তিনি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। তাকে মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে আমরা তার পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছি। তার দীর্ঘমেয়াদী কাউন্সেলিং প্রয়োজন।’

মোহাম্মদপুর থানা হেফাজতে থাকা ওই তরুণের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমি মূলত সামাজিক নানারকম বাধা-নিষেধ মানতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছিলাম। চারদিকে বিভিন্ন মানুষের কথাবার্তা আমার ভালো লাগে না। আমি থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট পড়লে, চুল বড় রাখলে কিংবা মাথা ন্যাড়া করলে লোকে নানান কথা বলে। দেশের সামাজিক ব্যবস্থা মানতে পারছিলাম না। এজন্যই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

ওই তরুণ দেশের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন বলেও বাংলা ট্রিবিউনকে জানান। সেটাও ঠিকঠাক মতো হচ্ছিল না। এ কারণে তার মেজাজ বিগড়ে গিয়েছিল। তার কথায়, ‘যেকোনও মূল্যে এই দেশ ছাড়তে চাই। দেশে থাকলে সামাজিক রীতিনীতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে গেলে আবারও সমস্যা হতে পারে আমার।’

স্বজনরা জানান, ওই তরুণের দুই ভাইবোন। তিনি ছোট। বাবা আগে জনতা ব্যাংকে চাকরি করতেন। কিছুদিন আদালতে ওকালতিও করেছেন। গত সেপ্টেম্বরে তিনি মারা যান। এরপর পরিবারের সদস্যরা পটুয়াখালীতে চলে যায়। স্ত্রীকে নিয়ে ওই তরুণ ঢাকায় একসঙ্গে থাকতেন।

মনোমালিন্যের কারণে কয়েকদিন ধরে স্ত্রী আলাদা থাকছেন বলে জানান ওই তরুণের বোন। দুই বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। তার স্ত্রী শোবিজ মিডিয়ার প্রোডাকশন হাউজে কাজ করেন। এজন্য তাকে মাঝে মধ্যে আউটডোর শুটিংয়ে বাইরে থাকতে হয়। তাদের কোনও আর্থিক টানাপড়েন নেই। তার ভাই একটু জেদি স্বভাবের। নিজের কাছে যা ভালো মনে হয় সেটাই ঠিক বলে ধরে নেন। এ কারণে তার বন্ধুর সংখ্যাও কম। এসব কারণে তিনি বিষণ্নতায় ভুগছিলেন।

বড় বোন আরও জানিয়েছেন, মধ্যরাতে ফোন করে ভাইয়ের আত্মহত্যার সিদ্ধান্তের কথা শুনে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। পরিচিত কাউকে পাচ্ছিলেনও না ভাইয়ের বাসায় পাঠাবেন। তখনই তার মনে পড়ে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের কথা। পুলিশ এত দ্রুত সাড়া দেবে তা ভাবেননি তিনি। এজন্য পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। তার কথায়, ‘আমরা বেশিরভাগ সময়ই পুলিশের সঙ্গে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাই। কিন্তু আমার ভাইকে বাঁচাতে এত দ্রুত পুলিশ যাবে তা ভাবিনি। তাদের অনুরোধ করার কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশ গিয়ে আমার ভাইকে বাসা থেকে নিয়ে আসে। আমরা পুলিশ সদস্যদের অনুরোধ করেছিলাম অভিভাবক না যাওয়া পর্যন্ত যেন তাকে থানায় রাখা হয়। তারা তাই করেছে। সকালে পটুয়াখালী থেকে আমার মা ঢাকায় গেছেন। এছাড়া অন্যান্য আত্মীয়স্বজন গিয়ে তাকে নিয়ে এসেছে। আমরা তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবো।’

পুলিশ জানিয়েছে, কেউ আত্মহত্যা করতে চাইলে পেনাল কোডের ৩০৯ ধারা অনুযায়ী তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের দণ্ড হিসেবে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড হতে পারে। মোহাম্মদপুর থানার একজন কর্মকর্তা জানান, এক্ষেত্রে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করতে পারতো। কিন্তু মানবিক কারণে তা করা হয়নি। 

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
বাড়লো ব্রয়লার মুরগির দাম, কারণ জানেন না কেউ
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন তাইওয়ানের প্রতিনিধি
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
ইউক্রেনের শান্তি পরিকল্পনা অর্থহীন: ল্যাভরভ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়