X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১
ঢাকার নিম্ন আদালত: প্রথম পর্ব

ভাগাভাগি হচ্ছে এজলাস, বিচারকাজে ধীরগতি

তোফায়েল হোছাইন
১৫ জুন ২০১৯, ২১:৫৫আপডেট : ১৭ জুন ২০১৯, ১১:৩১







ভাগাভাগি হচ্ছে এজলাস, বিচারকাজে ধীরগতি পুরান ঢাকার নিম্ন আদালতে এজলাসের সংকট রয়েছে। একই এজলাসে দুটি আদালত হওয়ায় বিচারকাজ ব্যাহত হচ্ছে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এ বিচারালয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ কারণে মামলা নিষ্পত্তির হার তুলনামূলক অনেক কম হচ্ছে। বিচারপ্রার্থীদেরও পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।
তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এজলাসের সংকট শিগগিরই কেটে যাবে। কয়েকটা নিজস্ব এজলাসের কাজ শেষের দিকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের ৬ তলায় সকালে চলে বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারিক কাজ। দুপুরের পর একই এজলাসে চলে সাইবার ট্রাইব্যুনালের কাজ। একই ভবনের ৫ তলায় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর সঙ্গে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ চলছে এজলাস ভাগাভাগি করে। একইভাবে ৫ তলায় সকালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৬ এবং দুপুরের পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৯-এর বিচারকাজ চলছে একই এজলাসে। এভাবে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পুরনো ভবনেও সকাল-বিকাল ভাগাভাগি করে চলছে বেশ কয়েকটি ট্র্যাইব্যুনালের কাজ। একই চিত্র ঢাকা মহানগর পিপি অফিস ভবনের (রেবতী ম্যানশন) তৃতীয় তলার; সেখানেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ভাগাভাগি করে চলে এক এজলাসে। এছাড়া চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেরও কয়েকটির ক্ষেত্রে একটির বিচারিক কাজ শেষে অন্যটির কাজ শুরু হয়। একইভাবে চলছে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতগুলোও।
আইনজীবীরা জানান, আদালত সংকটের কারণে তাদের মামলা পরিচালনা করতে অনেক সময় নষ্ট হয়। বিচারপ্রার্থীদেরও সারাদিন বসে থাকতে হয়।
সম্প্রতি নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল নং-১-এর সামনে রুমা নামে এক বিচারপ্রার্থী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উকিল জানিয়েছেন, সাড়ে ৩টায় বিচারক এজলাসে উঠবেন। সে জন্য অপেক্ষা করছি। অথচ উকিলের চেম্বারে আসছি সকাল ৯টায়।’
সাইবার ট্রাইব্যুনালের সামনে আবুল কালাম নামে এক বিচারপ্রার্থী বলেন, ‘রংপুর থেকে সকালে ঢাকায় আসছি মামলা হাজিরা দিতে। এখনও হাজিরা শেষ হয়নি। হাজিরা দিয়ে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় যাবো।’
সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনালের সেরেস্তা সহকারী মো. রুহুল আমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব এজলাস না থাকায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। এখানে হলি আর্টিজান, অভিজিৎ রায় হত্যা, কল্যাণপুর জাহাজবাড়ি জঙ্গি হামলা মামলাসহ অনেক চাঞ্চল্যকর মামলার বিচার চলে। কিন্তু নথিপত্রগুলো অরক্ষিত থাকছে।’ তিনি বলেন, দুটি এজলাস হওয়ায় আলাদা কোনও সেরেস্তা, কম্পিউটার, বিচারকের খাস কামরা নেই। এসব কারণে বিচারকাজ পরিচালনায় বেগ পেতে হচ্ছে। যদি নিজস্ব এজলাস থাকতো তাহলে আরও বেশি মামলার নিষ্পত্তি সম্ভব হতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ভাগাভাগি হচ্ছে এজলাস, বিচারকাজে ধীরগতি সাইবার ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী শামীম আল মামুনও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘মহানগর দায়রা জজ ভবনের ৬ তলায় বারান্দায় একপাশে ছোট একটি কক্ষে সেরেস্তা ব্যবহারের যে ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে কাজ করা যায় না। তাছাড়া এখান থেকে ফাইল টেনে নিয়ে অন্য এক এজলাসে যেতে হয়।’ তাই এজলাসের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনাল-৯-এর বেঞ্চ সহকারী মাসুদ বলেন, ‘নিজস্ব এজলাস না হওয়ায় অনেক নথি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে।’ এজলাসের সংকট দ্রুত নিরসন হওয়া উচিত বলে মত দেন তিনি।
বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজরুল ইসলাম শামীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এজলাস সংকটের কারণে অনেক ভোগান্তি পেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেকটা আদালতের বিচারিক সময় দুটো আদালতকে ভাগাভাগি করে এজলাস চালাতে হয়। যদি পুরো সময় একটা এজলাসের জন্য সময় পাওয়া যেতো তাহলে দ্বিগুণ মামলা নিষ্পত্তি হতো।’
নারী ও শিশু ট্রাইবুনাল-১-এর এডিশিনাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল বারী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এজলাস নিয়ে অনেক সাফারিং হচ্ছে। একটা এজলাসের কার্যক্রম দুপুর ২টায় শেষ হয়। এরপর আরেকটার কার্যক্রম ৩টায় শুরু হলে শেষ হয় ৫টায়। বিচারপ্রার্থীরা অনেক দূর থেকে আসে।’ তিনি বলেন, সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য এজলাস বাড়ানো উচিত।
ঢাকা বারের বর্তমান সভাপতি গাজী শাহআলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, নিম্ন আদালতে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ আদালতের এজলাসের সংকট রয়েছে। এ সংকট দূর করতে আরও একটি নতুন ভবনের প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি।
ঢাকা মহানগরের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিচারপ্রার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে সরকার আদালত বাড়িয়েছেন। ইতিমধ্যে সিজিএম (চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) একটি ভবন কমপ্লিট হয়ে গেছে। ওখানে কিছু আদালত স্থানান্তর করা হলে এ সংকট কেটে যাবে।’ সংকট সাময়িক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
র‌্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত
২০৪১ পর্যন্ত কর অব্যাহতি আদায় করতে চাই: মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম
বেসিস নির্বাচন২০৪১ পর্যন্ত কর অব্যাহতি আদায় করতে চাই: মোস্তাফা রফিকুল ইসলাম
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন দেড় শতাধিক বাংলাদেশি
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা
হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ হলো ভারতের কয়েকটি মসলা