X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

সম্রাটকে ধরতে গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী?

নুরুজ্জামান লাবু ও রাফসান জানি
২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২২:৩১আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৪:৩৪

ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট (ফাইল ছবি)

রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হবে কিনা, তা নিয়ে চলছে গুঞ্জন। গ্রেফতারের আশঙ্কায় তিনি নিজেও কয়েকদিন কাকরাইলে নিজের কার্যালয়ে অবস্থান করেছেন। তবে, এরপর কয়েকদিন ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন এই যুবলীগ নেতা। এরইমধ্যে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ব্যাংক হিসাবও তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, সম্রাটকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় রয়েছে?

গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় থাকার বিষয়টির সমর্থন মিলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কথায়ও। তারা বলছেন, এ বিষয়ে তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় রয়েছে। গ্রিন সিগন্যাল পেলেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। তাকে বর্তমানে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় যুবলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এরপর থেকেই আলোচনায় আসে যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার নাম। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষোভ প্রকাশের চারদিনের মাথায় ১৮ সেপ্টেম্বর সম্রাট-খালেদ নিয়ন্ত্রিত ক্যাসিনোগুলোতে অভিযান শুরু করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ওই দিনই গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় খালেদকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খালেদকে গ্রেফতারের খবর পেয়েই আতঙ্কে কয়েকশ’ নেতাকর্মী নিয়ে কাকরাইলের রাজমনি ঈশা খাঁ হোটেলের বিপরীতে নিজ কার্যালয়ে অবস্থান নেন সম্রাট। সেখানে কয়েকদিন থাকেন তিনি। প্রতিদিনই সেখানে শত শত নেতাকর্মী তাকে পাহারা দিয়ে রাখেন। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে তুমুল আলোচনা চলতে থাকে শেষ পর্যন্ত সম্রাটকে গ্রেফতার করা হবে কিনা। কয়েকদিনের মাথায় কার্যালয় থেকে সটকে পড়েন সম্রাট। অনেকটা আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সম্রাট এখনও ঢাকায়ই আছেন।

বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন কাকরাইলের সম্রাটের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও তার কার্যালয়ের সামনে শত শত নেতাকর্মীর ভিড় ছিল। গত কয়েকদিনে নেতাকর্মীদের সংখ্যা কমে ১৫-২০ জনে ঠেকেছে। কারণ হিসেবে নেতাকর্মীরা জানান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি সম্রাট কয়েকদিন ধরে অফিসে আসছেন না। যে কারণে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কমেছে। অফিসে না পেয়ে বাসায়ও গিয়েছিলেন কয়েকজন। তাদের একজন জানান, বাসাতেও নেই তিনি। কোথায় আছেন যুবলীগ নেতা সম্রাট, বলতে পারছেন না কেউ।

কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, অভিযান শুরুর পরদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) কাকরাইলের ওই কার্যালয়ে হাজারো নেতাকর্মী নিয়ে সারা রাত থাকেন সম্রাট। এর পরদিনও তিনি কার্যালয়ে আসেন বলে জানিয়েছেন একাধিক যুবলীগ নেতা। তবে, ২১ সেপ্টেম্বরের পর আর কাকরাইল কার্যালয়ে যাননি তিনি।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনটির প্রধান ফটকের কলাপসিবল গেটটি লাগানো রয়েছে। ভেতরে বসা তিন জন গার্ড। বাইরে ১৫-২০ জন নেতাকর্মী। কেউ কেউ প্রহরীদের সঙ্গে কথা বলে ভেতরে ঢুকছেন। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি। ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট তার কার্যালয়ে আছেন কিনা জানতে চাইলে তিন জন প্রহরী প্রথমে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিতে শুরু করেন। মুহূর্তেই তারা আবার একসুরে জানান, ‘স্যার (সম্রাট) অসুস্থ, স্যারের মাও অসুস্থ। হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করছেন। সে কারণে হয়তো অফিসে আসছেন না।’

কোন হাসপাতালে আছেন জানতে চাইলে তিন নিরাপত্তারক্ষীর কেউই কোনও জবাব দিতে পারেননি। তবে, তারা বলেন, ‘আমরা এখানে চাকরি করি। স্যার কোথায় আছেন জানি না।’

এদিকে, সম্রাটের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার বাসায় অবস্থান করছেন। আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছেন। তবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করছেন ওই সূত্রটি। তবে অন্য একটি সূত্র জানায়, সম্রাট এখনও তার কার্যালয়েই রয়েছেন। তাকে ‘হাউজ অ্যারেস্ট’ করে রাখা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিটের সদস্য ও একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও নিয়মিত ওই কার্যালয়ে অবস্থান করছেন। তবে, সম্রাটের অবস্থানের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সম্রাটের বিষয়ে তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় আছেন। গ্রিন সিগন্যাল পেলে সঙ্গে সঙ্গেই তাকে গ্রেফতার করা হবে। তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ।

সম্প্রতি সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সম্রাটের অবস্থা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘কে কোথায় আছেন সেটা বড় কথা নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো কে কতখানি অপরাধ করেছেন। যারাই অপরাধ করেছেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।’

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন স্পোর্টস ক্লাবের আড়ালে ক্যাসিনো ব্যবসা চালানোর অভিযোগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অভিযান শুরু করে র‌্যাব। বিভিন্ন ক্যাসিনো থেকে সরঞ্জামসহ নগদ টাকা জব্দ করা হয়। এসব ঘটনায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা জি কে শামীম গ্রেফতারের পর ক্যাসিনো ব্যবসার সঙ্গে ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নাম উঠে আসে। এরপরই গত ২২ সেপ্টেম্বর তার বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা জানিয়ে দেশের বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ। ২৪ সেপ্টেম্বর সম্রাট, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরীর ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে, তাদের হিসাব জব্দ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইসি)। চিঠি পাওয়ার পর দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে হিসাব জব্দ করার বিষয়ে চিঠি পাঠায় বিএফআইইউ।

/এমএনএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যুবদল নেতার ওপর হামলা: চিলমারী বিএন‌পির দুই নেতা‌কে অব‌্যাহ‌তি
যুবদল নেতার ওপর হামলা: চিলমারী বিএন‌পির দুই নেতা‌কে অব‌্যাহ‌তি
সমস্যা মানেই অসুখ নয়: মেডিক্যালাইজেশন কি বাংলাদেশের নতুন ব্যাধি?
সমস্যা মানেই অসুখ নয়: মেডিক্যালাইজেশন কি বাংলাদেশের নতুন ব্যাধি?
দুই ভাইয়ের বিরোধে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
দুই ভাইয়ের বিরোধে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল