X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

আবরার হত্যার ষড়যন্ত্র ক্যান্টিনে, প্রথম আঘাত করে ছাত্রলীগের রবিন

আমানুর রহমান রনি
১৪ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:৩৭আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:৪৫

 

আবরার হত্যা মামলা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বীকে হত্যার আগে অক্টোবরের শুরুতে শেরেবাংলা হলের ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ নেতা (বহিষ্কৃত) মেহেদী হাসান রবিনের নেতৃত্বে একটি সভা হয়। ওই সভায় আবরারকে ডেকে নিয়ে মারধরের সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্রলীগ নেতারা। এরপর  ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে নেওয়ার পর আবরারকে প্রথম আঘাত করে রবিন। সোমবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রবিন এ তথ্য জানায়।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে রবিনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

আবরারকে প্রথম আঘাত করে রবিন

আদালত সূত্র জানায়, আসামি মেহেদী হাসান রবিন স্বেচ্ছায় আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হয়। এরপর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান।  

জবানবন্দিতে রবিন জানায়, অক্টোবরের শুরুতে শেরেবাংলা হলের ক্যান্টিনে তার নেতৃত্বে একটি সভা করে ছাত্রলীগ। সেখানে আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমানের কাছে তারা জানতে চায় আবরার শিবির করে কিনা। তখন মিজান জানায়, আবরারকে তারও শিবির বলে সন্দেহ হয়। এরপর আবরারের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপসহ তাকে ডেকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। ওই সভায় ১৫, ১৬ ও ১৭তম ব্যাচের ৮/১০ জন ছাত্র ছিল।

রবিন জবানবন্দিতে আরও জানায়, আবরারকে ২০১১ নম্বর রুমে ডেকে নেওয়ার পর তার মোবাইল ফোন চেক করে রবিন। এরপর  আবরারের  মুখে চড় থাপ্পড়ও মারে সে। কিছুক্ষণ মারার পর রবিন চলে যায়। আর ফিরে আসার আগে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপস্থিত ১৫, ১৬ ও ১৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশ দিয়ে যায় রবিন। এরপর তারা আবরারকে স্ট্যাম্প ও লাঠি দিয়ে পেটায়।

ঘটনার দিন (৬ অক্টোবর) রবিনকে গ্রেফতারের পর গত ৮ অক্টোবর ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করে ডিবি পুলিশ। বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন। এরই মধ্যে সোমবার (১৪ অক্টোবর) তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে আবেদন করেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন,  ‘রবিন এই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। সে অন্যতম আসামি। রবিন ও তার সহযোগীরা আবরারকে ২০১১ ও ২০০৫ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে ক্রিকেট স্ট্যাম্প, লাঠি ও রশি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড মারধর করে। এই মারধরের কারণেই ঘটনাস্থলে আবরার মারা যায়। আবরারের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আসামিরা তার লাশ দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে ফেলে রাখে।’

ওয়াহিদুজ্জামানের আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘মামলা তদন্তের সময় সাক্ষ্য-প্রমাণ, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে আসামি রবিন এই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইতোপূর্বে গ্রেফতার ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অনিক সরকার অপু ও মুজাহিদুর রহমান যে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, সেখানেও রবিনের নাম এসেছে।’ এতে আরও বলা হয়েছে, ‘রিমান্ডেও রবিন স্বীকার করেছে সে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। সে আবরারকে মেরেছে।  ঘটনার সঙ্গে সে নিজে ও অন্য আসামিদের জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।’

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে যারা

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে ১৫ জন এজাহারভুক্ত আসামি, বাকি চারজন এজাহারের বাইরের। পুলিশ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনার সঙ্গে এই আসামিদের জড়িত থাকার তথ্য পেয়ে তাদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতার আসামিদের মধ্যে সকাল, জিওন, অনিক, মুজাহিদ ও রবিন  আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

রিমান্ড শেষে কারাগারে যারা

এদিকে, ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্নাকে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা কেউ আদালতে জবানবন্দি দেয়নি।

আবরারের রুমমেট মিজান কারাগারে

আবারার শিবির কিনা, এ বিষয়ে তার রুমমেট ১৬তম ব্যাচের মিজানুরের কাছে জানতে চেয়েছিল ছাত্রলীগ নেতারা। মিজানুর তাদের জানায়, আবরার শিবির হতে পারে। ছাত্রলীগকে এভাবে সহায়তার কারণে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। মিজানুর রহমানকে গ্রেফতারের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। বর্তমানে সে কারাগারে রয়েছে। তাকে পরবর্তী সময়ে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

রিমান্ডে এখনও আটজন

আবরার হত্যার আট আসামি বর্তমানে ডিবি কার্যালয়ে রিমান্ডে রয়েছে। তাদের রিমান্ড শেষ হলে আদালতে পাঠানো হবে।

গোয়েন্দা ও অপরাধ তথ্য বিভাগের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, ‘আলোচিত এই মামলার বিশেষজ্ঞের অভিমত গ্রহণ ও বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ শেষে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা সম্ভব হবে।’

উল্লেখ্য, ৬ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েট-ছাত্র আবরার ফাহাদ রাব্বিকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতারা। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. বরকত উল্লাহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।  

 

/এমএনএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিভোট ছাড়াই চেয়ার দখল করতে বগুড়া চেম্বারের কার্যালয়ে তালা
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
ফিরে দেখা: ৩ জুলাই ২০২৪
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৩ জুলাই, ২০২৫)
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় এনসিপির তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
পরীক্ষার প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, তদন্তে কমিটি
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কার দোষে শ্রমবাজার বন্ধ হয় জানালেন আসিফ নজরুল
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন
কেমন কেটেছিল ডিবি হেফাজতে ছয় সমন্বয়কের সাত দিন