X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

দখল-চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া কাউন্সিলর মঞ্জু

নুরুজ্জামান লাবু
৩১ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:৫৬আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৩৮

গ্রেফতারের পর কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু দখল আর চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু। টিকাটুলী এলাকার রাজধানী মার্কেটের স্বঘোষিত এই সভাপতি প্রতিটি দোকান থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করতেন। একাধিক বাড়ি দখল করেছেন তিনি। এমনকি গ্লোব নিবাসের যে ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন সেটিও দখল করা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। মাদক ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ থাকা মঞ্জু এলাকায় ক্যাডার বাহিনী নিয়ে দাপিয়ে বেড়াতেন। তার দখল-চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ ছিল স্থানীয় লোকজন।
মঞ্জুকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে স্থানীয় লোকজন আনন্দ মিছিল করে। রাজধানী মার্কেট এলাকায় বিতরণ করা হয় মিষ্টি। এদিন দুপুর ১২টার দিকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে বিতর্কিত এই কাউন্সিলরকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩। চলমান ক্যাসিনোবিরোধী ও শুদ্ধি অভিযানের ধারাবাহিকতায় মঞ্জুকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।
র‌্যাব-৩ অধিনায়ক লে. কর্নেল শাফিউল্লাহ বুলবুল বলেন, ‘কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুর বিরুদ্ধে অবৈধ দখলদারি, চাঁদাবাজি, মাদক কারবার ও জুয়ার আসর পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে। আগে থেকেই তার বিরুদ্ধে একাধিক চাঁদাবাজির মামলা ছিল। সর্বশেষ বুধবার রাতে রাজধানী মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেছেন।’ মঞ্জুর কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র ও মাদক জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাউন্সিলর মঞ্জু সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি করতেন রাজধানী মার্কেটকে কেন্দ্র করে। ১ হাজার ৭৮৮টি দোকান থাকা এই মার্কেট পরিচালনা, জেনারেটর, এসি লাগানো, পানি ও বিদ্যুৎ বিলসহ নানা অজুহাতে মাসে কোটি কোটি টাকা চাঁদা তুলতেন তিনি। এই টাকার একটি অংশ মার্কেটের জন্য খরচ করলেও বাকি টাকা আত্মসাৎ করতেন। মার্কেট পরিচালনা কমিটির কেউ তার কাছ থেকে হিসাব চাওয়ার সাহস পেতেন না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে নানাভাবে হয়রানি করা হতো।
কাউন্সিলর মঞ্জুর অফিস থেকে উদ্ধার করা অস্ত্র ও মাদক রাজধানী মার্কেটের একাধিক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, মার্কেটের কোনও দোকান বিক্রি বা কিনতে মঞ্জুকে অন্তত ২ লাখ টাকা করে চাঁদা দিতে হতো। এমনকি কেউ আগের ব্যবসা ছেড়ে নতুন পণ্যের ব্যবসা শুরু করলে তাকেও চাঁদা দিতে হতো। কেউ চাঁদা না দিলে তার বিরুদ্ধে ক্যাডার বাহিনী লেলিয়ে দিতেন। মার্কেট অফিসে ডেকে নিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিতেন। তার সঙ্গে সবসময় থাকতো ক্যাডার বাহিনী। ব্যবসায়ীদের দাবি, বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব জানালেও মঞ্জুর বিরুদ্ধে কখনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাতে কাজী রনি নামের রাজধানী মার্কেটের এক ব্যবসায়ী ওয়ারী থানায় কাউন্সিলর মঞ্জু ও তার ক্যাডার বাহিনীর ১২ সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। মামলায় কাজী রনি অভিযোগ করেন, মার্কেটের ‘এ’ ব্লকের ১৩৩/১৩৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে তার একটি দোকান রয়েছে। সম্প্রতি তিনি আগের ব্যবসা বাদ দিয়ে জুয়েলারি পণ্যের ব্যবসা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য দোকানের ডেকোরেশন পরিবর্তন শুরু করলে মঞ্জুর লোকজন তাকে ডেকে নিয়ে যায়। মার্কেট অফিসে মঞ্জু তাকে বলেন, ব্যবসা পরিবর্তন করতে হলে দুই লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। এই চাঁদা না দেওয়ায় তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওই ব্যবসায়ীর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কাউন্সিলর মঞ্জুর ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে প্রদীপ তালুকদার, সায়েম, সাইদুল, ভুঁইয়া মিলন, আফজাল ওরফে বোর্ডিং আফজাল, আব্দুল হক, আওলাদ, এহসান, মোরশেদ, আরিফ, নাজমুল ও জাফর সানি উল্লেখযোগ্য। এই ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমেই তিনি রাজধানী মার্কেট নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতেন।
মঞ্জু গ্রেফতারের পর এলাকায় কিছু মানুষের উল্লাস ও মিষ্টি বিতরণ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, ৯ বছর ধরে রাজধানী মার্কেট ও এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আছেন কাউন্সিলর মঞ্জু। মার্কেট থেকে তিনি এ পর্যন্ত ৮ কোটি ৫৩ লাখ ৯৪ হাজার ২৯৭ টাকা চাঁদাবাজি করে আত্মসাৎ করেছেন। এরমধ্যে জেনারেটর পরিচালনার নামে ২ কোটি ৯৮ লাখ, বিদ্যুৎ বিলের নামে ৩ কোটি ১৪ লাখ, এসি লাগানোর নামে ১ কোটি ৩ লাখ, বিদ্যুতের লোড বাড়ানোর নামে ১৪ লাখ টাকা, মার্কেটর গেট উন্নয়নের নামে ৬৫ লাখ, মার্কেটের দানবাক্সের টাকা, দোকান ভাড়া ও মুসল্লিদের অনুদানের ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ও সরকারি ভ্যাটের নামে ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।
স্থানীয় লোকজন ও ব্যবসায়ীরা জানান, নানা অজুহাতে মার্কেটের দোকান থেকে মাঝে-মধ্যেই টাকা তুলতেন মঞ্জু। মার্কেটে প্রায় ২ হাজার দোকান থাকায় অনেক টাকা উঠতো। এর থেকে সামান্য কিছু টাকা খরচ করে লোক দেখানো উন্নয়নের কাজ করা হতো। বাকি টাকা মঞ্জু ও তার ক্যাডার বাহিনী আত্মসাৎ করতো। এর আগে ২০১৫ সালের ৩১ আগস্ট ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট প্রধান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু এতে কোনও কাজ হয়নি।
র‌্যাব সূত্র জানায়, মঞ্জুর পরিবারের সদস্যরা আমেরিকায় থাকে। অবৈধ দখলদারি ও চাঁদাবাজি থেকে পাওয়া টাকা হুন্ডির মাধ্যমে আমেরিকায় পাচার করতেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র আইনের পাশাপাশি মানি লন্ডারিং আইনেও মামলা দায়ের করা হবে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার সম্পত্তির বিষয়ে জানার চেষ্টা চলছে।
র‌্যাব কর্মকর্তা সাফিউল্লাহ বুলবুল জানান, মঞ্জুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়াও চলছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ও মামলা নথিভুক্ত হলে আরও কিছু বিষয় জানা যাবে। এছাড়া রিমান্ডে এনেও জিজ্ঞাসাবাদ করলে তার চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বের অনেক কিছু বের হয়ে আসবে বলে মন্তব্য করেন এই র‌্যাব কর্মকর্তা। 

আরও পড়ুন...
ডিএসসিসি’র কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু গ্রেফতার

/এইচআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মনজিল হত্যা: সৎমা-ভাইসহ ৬ জনের যুক্তিতর্ক অব্যাহত
কাওরানবাজারে প্রাইভেটকারে আগুন
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
সর্বশেষ খবর
চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই: ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
চালককে হত্যা করে ভ্যান ছিনতাই: ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড
হজের ভিসায় মক্কা, জেদ্দা ও মদিনার বাইরে ভ্রমণ করা যাবে না
হজের ভিসায় মক্কা, জেদ্দা ও মদিনার বাইরে ভ্রমণ করা যাবে না
‘মোবাইলে দেখেন, ভারতের মানুষের দিনে ইনকাম কত আর আমাদের কত’
‘মোবাইলে দেখেন, ভারতের মানুষের দিনে ইনকাম কত আর আমাদের কত’
রাষ্ট্রপতি পেলেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা স্মার্ট এনআইডি
রাষ্ট্রপতি পেলেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ লেখা স্মার্ট এনআইডি
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র