X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রুটিমুক্ত পরীক্ষা হবে কবে?

সাদ্দিফ অভি
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ২২:১৮আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:২১

এসএসসি পরীক্ষা দুই বছর আগেও পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ছিল একটি সাধারণ বিষয়। ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে’ বলে কেউ স্বীকার না করলেও তা বন্ধে অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গত বছর থেকে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পাওয়া যায়নি। তবে ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে’ এমন গুজব সামাজিক মাধ্যমে দেখা গিয়েছে। চলতি বছর তেমন গুজবও নেই। তবে চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনেই দেখা গেছে প্রশ্নপত্র বিতরণজনিত জটিলতা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড বলছে—এ ধরনের প্রবণতা আগে বেশি ছিল। এখন কমে আসছে। এ ধরনের সমস্যা পুরোপুরি বন্ধে নতুন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে বোর্ড। অন্যদিকে শিক্ষাবিদরা বলছেন, এখানে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।

ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে প্রথম দিনে গ্রেফতার অনেক

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে সারাদেশে ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহসহ বেশ কিছু জটিলতার মধ্য দিয়েই দেশজুড়ে শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের দাখিল, এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষা। প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনও জটিলতা না হলেও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উত্তরপত্র সরবরাহ করায় পাঁচ শিক্ষককে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। রাজধানীর রামপুরা, গাজীপুর ও খুলনা থেকে পৃথক অভিযানে এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রতারণা ও গুজব সৃষ্টির অভিযোগে চার জনকে আটক করেছে র‌্যাব। খুলনা মহানগরীর পৃথক দুই স্থানে অভিযান চালিয়ে এসএসসির ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষার রেজাল্ট পরিবর্তনের গুজব সৃষ্টিকারী প্রতারকচক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব-৬।

প্রথম দিনের পরীক্ষায় যত ত্রুটি

ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়। চলতি বছর যারা রেগুলার পরীক্ষার্থী তাদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল ২০১৯-২০ সালের সিলেবাসে। কিন্তু অনেক কেন্দ্রেই প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর পাঠ্যক্রমের সঙ্গে প্রশ্নপত্রের কোনও মিল পাওয়া যায়নি। ২০১৮ সালের সিলেবাসের প্রশ্নপত্রে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা হয়েছে। আবার অনেক কেন্দ্রে প্রায় ৩০ মিনিট পরীক্ষা চলার পর ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহের বিষয়টি নজরে এলে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২০১৮ সালের সিলেবাসের প্রশ্ন তুলে নিয়ে নতুন করে ২০২০ সালের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। এতে অনেকে অতিরিক্ত সময় পেলেও অনেকে পাননি। এছাড়া একই সেটে সব কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও কিছু কিছু কেন্দ্রে অন্য সেটেও পরীক্ষা নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি কেন্দ্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বিতরণে তিনটি স্তর থাকে। এরমধ্যে আছে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পরীক্ষা কমিটি এবং কক্ষ পরিদর্শক। এই তিন স্তরে গাফিলতি থাকায় প্রশ্নপত্র বিতরণ সংক্রান্ত জটিলতা তৈরি হয়েছে। প্রশ্নের এই জটিলতাকে অনেক বড় করেই দেখছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গত বছর থেকেই অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং নেওয়া হচ্ছে। ব্যবস্থা নেওয়ার কারণেই কিন্তু গত বছর এ ধরনের ঘটনা যে পরিমাণ ঘটেছে, এই বছর সে পরিমাণ ঘটেনি। এখানে একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, এটা অনেক বড় পরীক্ষা। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরীক্ষা কেন্দ্র এবং ৫৫-৬০ হাজার কক্ষে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক লাখ শিক্ষক এর সঙ্গে জড়িত। ফলে এতগুলো কেন্দ্রের মধ্যে ৭-৮টি কেন্দ্রে ঘটনাটি ঘটেছে। যদিও এটা ঘটা উচিত ছিল না। আমরা আরও বেশি সতর্ক হওয়ার জন্য শিক্ষকদের নির্দেশনা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় কিন্তু আর ঘটনাটির পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় প্রতি বছরই একটি জটিলতা তৈরি হয়। অনেক সিলেবাস থাকে। ফলে ওলট-পালট হয়ে যায়। এখানে আমরা আরও একটি নীতিমালা করছি, যেখানে আগামীতে পরীক্ষার আগে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কিছু প্রশিক্ষণের আয়োজন করবো। একটা নির্দেশনা দেবো যে, একজন পরীক্ষার্থীর হলে গিয়ে কী কী করণীয়। প্রশ্নের ওপরে কিন্তু লেখা থাকে কোন বছরের সিলেবাসের প্রশ্ন। সেটা কিন্তু শিক্ষার্থীরা পড়েনি। এটি আসলে শিক্ষার্থীর দোষও নয়। শিক্ষকরা যখন কেন্দ্রে এই প্রশ্নগুলো দিয়েছেন, এটা তাদের দোষ। কক্ষ পরিদর্শক যখন এটি বণ্টন করেছেন তার কিছু দায়িত্ব ছিল, সেখানে অবহেলা আছে। সবশেষে শিক্ষার্থীর কিছু দায়িত্ব ছিল, সেও অবহেলা করেছে।

তিনি বলেন, আমরা আগামীতে নতুন আরেকটি কৌশল নেবো। শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কিছু নির্দেশনা তৈরি করবো, যাতে এই ভুলটি আগামীতে না হয়। একজন পরীক্ষার্থী প্রথম পরীক্ষার দিন কিছুটা টেনশনে থাকে। তার পক্ষেও সবকিছু বুঝে ওঠা সম্ভব হয় না। আমরা দেখি নতুন কোনও পথ খুঁজে বের করতে পারি কিনা। গত বছর প্রায় ১৩০-১৪০টি কেন্দ্রে এই ঘটনাটি ঘটেছে। এ বছর কিন্তু ৮-১০টি কেন্দ্রে হয়েছে। আমরা আশা করি আগামীতে আর হবে না।

তবে পরীক্ষায় প্রশ্নগত জটিলতা বন্ধে সরকারের আন্তরিকতার অভাব আছে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদ ও বুয়েটের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ। তিনি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের অনেক বেশি আন্তরিক হতে হবে। আমাদের মধ্যে কিন্তু আন্তরিকতা নেই। যে কারণে সমস্যাগুলো থেকে যাচ্ছে।

/এমআর/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!