রাজধানীর সাইনবোর্ড এলাকার প্রো-অ্যাকটিভ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট মোবারক করিমকে বৃহস্পতিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর তার কর্মস্থল থেকে ডেকে মাতুয়াইলের ফ্রেন্ডশিপ স্পেশালাইজড হসপিটাল অ্যান্ড ডিজিটাল ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। এরপর বিকাল থেকে মধ্যরাতের মধ্যে যেকোনও সময় তাকে হাসপাতালের ভেতরেই হত্যা করা হয়। পরে মৃত্যুকে আত্মহত্যা বোঝাতে জানালার গ্রিলের সঙ্গে তোয়ালে দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালের পরিচালক মো. জামাল হোসেন ও মো. আক্তার হোসেন মামুনকে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করছে মোবারকের স্বজনেরা।
শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে ডেমরা থানায় নিহতের বড় ভাই মো. রুহুল আমিন বাদী হয়ে ফ্রেন্ডশিপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের এই দুই পরিচালক ও দারোয়ানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
আসামি দুই পরিচালকের মধ্যে জামাল হোসেনের সঙ্গে মোবারক করিমের আর্থিক লেনদেন ছিল বলে দাবি করছেন নিহতের স্ত্রী সাবিকুন্ননাহার রিতু।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে বারডেম-২ হাসপাতালে এনেস্থেশিয়া বিভাগে কাজ করতেন মোবারক। একই বিভাগে কাজ করতেন জামাল। চাকরির সুবাদে পরিচয়। এরইমধ্যে একটি হাসপাতালের পার্টনারশিপ দেওয়ার কথা বলে মোবারকের কাছ থেকে চার লাখ টাকা নেন জামাল। এরইমধ্যে জামাল প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে চাকরি নেন। আর জামাল চলে আসেন মাতুয়াইলের ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে। এদিকে টাকা নিলেও মোবারককে হাসপাতালের অংশীদার করেননি জামাল। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল দু’জনের। নতুন ব্যবসার কথা বলে টাকা ফেরত না দেওয়ার টালবাহানা শুরু করে জামাল। টাকা চাওয়ায় মোবারককে হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
সাবিকুন্ননাহার রিতু জানান, বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাসা থেকে বের হয়ে প্রো-অ্যাকটিভ হাসপাতালে যান মোবারক। দুপুরে মোবারকের সঙ্গে ফোনে তার বোনের কথা হয়। এরপর অনেকবার কল দেওয়া হলেও মোবারকের ফোন কেউ রিসিভ করেনি। রাত ১২টার দিকে মোবারকের নম্বর দু’বার ওয়েটিং পাওয়া যায়। এরপর রাত ২টা থেকে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ডেমরা থানা থেকে মোবারকের মরদেহ উদ্ধারের খবর দেওয়া হয়।
মোবারকের খালাতো ভাই ইউসুফ আহমেদ রাসেল বলেন, খবর পেয়ে আসার পর আমার দেখেছি লাশ ব্যাগে ঢোকানো। পুলিশ বলছে, গ্রিলের সঙ্গে তোয়ালে দিয়ে ঝুলন্ত ছিল। পরে ছবিতে দেখেছি, ঝোলানো ছিল ঠিক আছে, তবে তার পা ফ্লোরে লেগেছিল এবং শরীরেও অনেক আঘাতের চিহ্ন।
এদিকে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কাজ চলছে এবং আসামিদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘জামাল ও মামুনের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। জামালের সঙ্গে নিহত মোবারকের একাধিকবার ফোনালাপের তথ্য পেয়েছি।’
কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন ডেমরা জোনের সহকারী কমিশনার মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আসামিরা পলাতক। এজহারনামীয় দু’জনকে আমরা এখনও গ্রেফতার করতে পারিনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আশা করি তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।