ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদ দৃষ্টি কেড়েছে সবার। বাংলাদেশের মসজিদের প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে অনুপ্রাণিত এর নকশা।
অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের নামে মসজিদটির নামকরণ হয়েছে। আজিমপুর পুরনো কবরস্থানের ভেতরে এটি অবস্থিত। মসজিদে প্রবেশ করলে প্রথমেই নজর কাড়ে নান্দনিক কারুকাজ। প্রবেশপথে বিশাল শান, অন্যপ্রান্তে আজিমপুর কবরস্থান।
প্রাচীন ও আধুনিক নকশার সমন্বয়ে সাজানো মসজিদটির মূল স্থপতি রফিক আজম। তিনি মনে করেন, মসজিদটি ঢাকাবাসীর ঐতিহ্য বহন করে যাবে।
নকশা তৈরি ও নির্মাণকাজে আরও যুক্ত ছিলেন তার প্রতিষ্ঠান ‘সাতত’র একদল স্থপতি ও প্রকৌশলী। তারা হলেন স্থপতি ইকরামুন নেসা, স্থপতি ফাহিম আবরার কবির, প্রকৌশলী মোহাম্মদ আখতার হোসেন, প্রকৌশলী লুৎফর রহমান, প্রকৌশলী মোহাইমিনুল ইসলাম ও প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম।
মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদের ভেতরে আছে উন্নতমানের বিদেশি টাইলস। নানান রঙের সুদৃশ্য বাতিতে আলোকিত হয় এটি। কারুকার্যময় নয়নাভিরাম মসজিদটির অভ্যন্তর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। মসজিদে আজানের বাংলা অর্থ বড় বড় অক্ষরে লেখা।
উঁচু মিনারে রাখা মাইকের মাধ্যমে আজানের ধ্বনি ছড়িয়ে যায়। মুসল্লিদের জন্য আছে প্রশস্ত পার্কিং সুবিধা। এতে ৩০টির বেশি গাড়ি রাখা যায়।
নারী-পুরুষের জন্য রয়েছে আলাদা অজু ও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা। মসজিদটিতে একসঙ্গে ১ হাজার ৫২০ জন মুসল্লি ও একসঙ্গে ৭০ জন নারী পৃথকভাবে নামাজ আদায় করতে পারেন। রমজানসহ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদে দুই হাজারের বেশি মানুষ নামাজ পড়তে সমবেত হন। নামাজের কাতার মেলাতে আছে লাইটিংয়ের আধুনিক ব্যবস্থা।
মসজিদে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। লিফট ও উন্নতমানের টয়লেট সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে জানাজা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা। নারী-পুরুষসহ সবার লাশ গোসল দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয় এখানে। ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের উদ্যোগে ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট শুরু হয়ে মসজিদের কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মসজিদের সঙ্গে আজিমপুর কবরস্থানের মেলবন্ধন নকশাকারদের দারুণ কৃতিত্ব। এতে রয়েছে সব ধরনের আধুনিক সুবিধা।’
ডিএসসিসির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ জানিয়েছে, দুটি প্যাকেজের মাধ্যমে দুই তলা মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১৪ কোটি ১৯ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা। ২৩ কাঠা জমির ওপর বাহারি ইটের তৈরি এই মসজিদের আয়তন ৩০ হাজার ২২ বর্গফুট। এর মধ্যে সেমি বেজমেন্ট ১১ হাজার ৩৫০ বর্গফুট, গ্রাউন্ড ফ্লোর ১১ হাজার ৩৫০ বর্গফুট ও দ্বিতীয় তলা ৭ হাজার ৫০০ বর্গফুট। এছাড়া প্লিন্থ এরিয়া রয়েছে ১১ হাজার ৩৫০ বর্গফুট।
জাতীয় ঐতিহ্য ও মুসলিম স্থাপত্যকলার অংশ হিসেবে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদ উজ্জ্বল হয়ে থাকবে বলে মনে করেন স্থপতিরা।
ছবি: প্রতিবেদক