X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ডে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের উদ্বেগ

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১২ অক্টোবর ২০২০, ২১:২৮আপডেট : ১২ অক্টোবর ২০২০, ২১:২৯

আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধানে সরকার অনুমোদন দেওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সোমবার (১২ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই উদ্বেগ জানানো হয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটির মহাসচিব মো. নূর খান স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার (১২ অক্টোবর) মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনের এই খসড়াটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

সম্প্রতি একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটার প্রেক্ষাপটে আইন সংশোধন করার জোর দাবি ওঠে। সে দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে আইনটি সংশোধন করে ধর্ষণের সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড যোগ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান আছে। এ সংস্কারের মাধ্যমে সেক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড যোগ করা হয়েছে। জনগণের দাবির মুখে সরকার আইন সংশাধনের যে উদ্যোগ নিয়েছে- তা তাৎক্ষণিকভাবে জনঅসন্তোষ কমানোর কৌশল হিসেবে কাজ করলেও আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, কেবল সাজা বাড়িয়ে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্যতম সামাজিক অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব নয়।

আসক মনে করে, এ জনমতকে কাজে লাগিয়ে বরং ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংস্কার আনার জন্য সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। মূলত, যে পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে একজন নারীকে ধর্ষণ করা হয় এবং ধর্ষণের শিকার নারীকে সামাজিকভাবে দোষী সাব্যস্ত করে তার বেঁচে থাকা দুর্বিসহ করে তোলা হয়। ন্যায়বিচার চাইতে গিয়ে ভুক্তভোগীকে পদে পদে যেসব প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয়- সেগুলোর ওপর দৃষ্টি না দিয়ে, সেগুলো নির্মূল না করে কেবল শাস্তি বাড়িয়ে এ অপরাধ রোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। একজন মানুষ ধর্ষক হিসেবে জন্ম নেয় না। বিদ্যমান সামাজিক, শিক্ষা বা রাজনৈতিক কাঠামো তাকে ধর্ষক করে তোলে। এ কাঠামোর পরিবর্তন সম্ভব না হলে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সুদূর পরাহত।

সংস্থাটি বলে, ভুক্তভোগীর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আইনের সংস্কার প্রয়োজন, কিন্তু সেক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে কেবল শাস্তি বাড়ালেই মূল সমস্যার সমাধানে অগ্রগতি আসবে না। বিদ্যমান আইনের অধীনেই শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড থাকলেও দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনার বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রসিকিউশন, তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ার নানা ফাঁকফোকর দিয়ে অভিযুক্তরা পার পেয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা নানা ভোগান্তি আর হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাই আসক মনে করে, আইনের অন্যান্য সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে এ সংক্রান্ত আইনগুলোকে যুগোপোযোগী করা এবং আইনের আশ্রয় ও বিচারলাভের ক্ষেত্রে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা নিরসনের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ও কাঠামোগত সংস্কার আনা প্রয়োজন।

আইনগত সংস্কার আনার ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই ধর্ষণের সংজ্ঞাকে বিস্তৃত করা, সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য ধারা সংশোধন, দ্রুত সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, ভুক্তভোগীর জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত, শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

আসক সরকারের কাছে ধর্ষণমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় দ্রুততার সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে। এছাড়া, মৃত্যুদণ্ড মানবাধিকারের মূলনীতির বিরোধী বলে বিশ্বব্যাপী রাষ্ট্রসমূহ ধীরে ধীরে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বিলোপকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বাংলাদেশে অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কার না এনে কেবল মৃত্যুদণ্ডের বিধান যোগ করে আইন সংশোধন কার্যকর করা হলে তা মানবাধিকারের মূলনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না বলে আসক মনে করে।

আরও পড়ুন-

৬ মাসে শেষ করতে হবে ধর্ষণের বিচার, সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলে ধর্ষণ কমবে: আইনমন্ত্রী

ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ডের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নও এগিয়ে গেলো: প্রতিমন্ত্রী

 

/জেইউ/এফএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কিশোরকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে ৪ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার
কিশোরকে তুলে নিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে ৪ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার
সুন্দরবনের আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসায় প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষ
সুন্দরবনের আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসায় প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষ
লন্ডনের স্টেডিয়ামে গাইবেন জেমস
লন্ডনের স্টেডিয়ামে গাইবেন জেমস
যাত্রাবাড়ীতে বাস-পিকআপ সংর্ঘষে নিহত ২
যাত্রাবাড়ীতে বাস-পিকআপ সংর্ঘষে নিহত ২
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
কোন পথে এগোচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ?
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার