X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

নন-কোভিড রোগীরা যাবেন কোথায়!

জাকিয়া আহমেদ
০৫ নভেম্বর ২০২০, ১১:০০আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২০, ১১:২০

করোনাভাইরাস

গত ২১ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট ও দুই নম্বর ভবনকে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড ঘোষণা করা হয়। তখনই এ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা বলেছেন, করোনার মতো স্পর্শকাতর ও অধিক ছোঁয়াচে রোগীদের সাধারণ নন-কোভিড রোগীদের পাশে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ হাসপাতালের নতুন ভবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ থাকলেও এখন করোনা রোগীদের চিকিৎসার কারণে সেগুলো বন্ধ রয়েছে। একাধিক চিকিৎসক প্রশ্ন তুলে বলছেন, তাহলে নন-কোভিড রোগীরা যাবেন কোথায়?

গত সপ্তাহে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ঝিনাইদহ থেকে আসেন ৫২ বছরের রউফ সিকদার। তার এমআরআই করা হয়। এরপর তার যাবার কথা ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে, কিন্তু দ্বিতীয় তলায় সেটা বন্ধ। স্বজনরা তারপর নিয়ে যান চারতলায় নিউরোলজি বিভাগে, সেটাও বন্ধ।

কুষ্টিয়া থেকে ৩০ বছরের রবিউল ইসলাম এসেছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কুষ্টিয়ার চিকিৎসকরা সন্দেহ করছেন তার ব্ল্যাড ক্যানসার। কিন্তু দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগটিই এখন বন্ধ।

‘প্রতিদিন এমন সহস্রাধিক রোগী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হতেন। এমনকি এই হাসপাতালের ফ্লোর-মেঝেতেও জায়াগা দিতে পারতাম না। এই রোগীরা এখন যাবেন কোথায়’—প্রশ্ন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসকদের।

নতুন ভবনের বন্ধ থাকা দ্বিতীয় তলায় ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে আগে প্রতিদিন রোগী হতো ২০০ থেকে ৩০০ জন। তিন তলার কার্ডিওলজি বিভাগ, সিসিইউ-পোস্ট সিসিইউ ‍দুটোই বন্ধ। সরেজমিনে দেখা গেলো সার্জারি করতে হবে এমন এক বয়স্ক রোগীর ইকো করা যাচ্ছে না ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

অ্যান্ডোসকপি বিভাগ ও এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগও বন্ধ। চারতলায় নিউরোলজি বিভাগ বন্ধ পুরোটাই। নিউরোলজির রোগীরা আসতে পারছেন না হাসপাতালে। স্ট্রোকের রোগীদেরও নেওয়া যাচ্ছে না। স্ট্রোকের রোগী এলেই তাদের আগে সিটি স্ক্যান করতে হয়। সিটি স্ক্যানে যদি রক্তক্ষরণ ধরা না পড়ে তবে পাঠানো হয় মেডিসিন বিভাগে। রক্তপাত হলে নিউরোসার্জারি বিভাগে পাঠিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়।

কিন্তু রোগীরা এখন ভোগান্তিতে পড়ছেন। এখন অন্য হাসপাতাল থেকে সিটি স্ক্যান করিয়ে আনতে হচ্ছে তাদের। পাঁচ, ছয়, সাত, আট তলার পুরো মেডিসিন বিভাগই বন্ধ। চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিদিন ২০০ রোগী হলে সপ্তাহে প্রায় এক হাজার ৪০০ রোগী কেবল মেডিসিন বিভাগেই আসতেন। অথচ এখন বিভাগটিই বন্ধ।

অপরদিকে, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হচ্ছে অ্যাকাডেমিক হাসপাতাল। কিন্তু এখন এখানে যারা ইন্টার্নশিপ করছেন, তারা আদতে কিছুই শিখতে পারছেন না বলেও জানান চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, অন্তত মেডিসিন বিভাগের কথাতো বলতেই হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ‘মাদার সাবজেক্ট’ হচ্ছে মেডিসিন। ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর চিকিৎসা দিতে গেলেই তো এর দরকার হবে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জায়গা রয়েছে, এখানে মেডিসিন বিভাগের জন্য আলাদা করে ইমার্জেন্সি চালু করা যেতে পারে।

কার্ডিওলজি বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বললেন, ‘সিসিইউতে ৬৫ শয্যা রয়েছে। সব বেডে রোগী থাকতো। অপেক্ষায় থাকতো তারও দ্বিগুণ। এখন রোগী আসতে পারছে না। এসব রোগীর জন্য বিশেষায়িত জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের ধারণক্ষমতা তো বেড়ে যায়নি। বলা যায় এখন ওই রোগীরাও চিকিৎসাবঞ্চিত।

‘এমন তো না যে দেশে আচমকা হার্ট অ্যাটাকের রোগী কমে গেছে’ মন্তব্য ওই চিকিৎসকের। তিনি আরও বলেন, এখানে প্রতিদিন ইকো কার্ডিওগ্রাম হতো ৪০ জনের। সিরিয়াল থাকতো দুই সপ্তাহ আগে থেকে। এখন তা বন্ধ। এনজিওগ্রাম করার জন্য ক্যাথল্যাব কারা আগে নেবেন সে নিয়ে বিভাগের চার ইউনিটের চিকিৎসকদের মধ্যে বলতে গেলে প্রতিযোগিতা হতো। গত আট মাস ধরে সেই ক্যাথল্যাবও বন্ধ।

আগে কার্ডিওলজি বিভাগের বহির্বিভাগে চিকিৎসকদের কথা বলার ফুরসত হতো না। এখন বহির্বিভাগ বন্ধ। কার্ডিয়াকের রোগীদের এখন কী হবে?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২১ এপ্রিল থেকে হাসপাতালের ইকোকার্ডিওগ্রাম ও এনজিওগ্রাম সম্পূর্ণ বন্ধ। ৮ মাস ধরে এতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ বন্ধ থাকার বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক এবং বিভাগীয় প্রধানসহ অন্যরাও চিন্তিত। কয়েকটি মিটিংও হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে যে করেই হোক অন্তত ইকো-কার্ডিওগ্রাম চালু করা চাই।

নতুন ভবনে কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আর এতে নন-কোভিড রোগীদের ভোগান্তি হচ্ছে, এতে লুকানোর কিছু নেই মন্তব্য করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মেডিসিন এবং এর সঙ্গে জড়িত ইন্টারনাল মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন, নেফ্রোলজি, কার্ডিওলজি, কার্ডিয়াক সার্জারি, এন্ডোক্রাইনোলজি, হেমাটোলজি-বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল‌্যান্টসহ সব গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ এই নতুন ভবনেই ছিল।

প্রসঙ্গত, গত মার্চে প্রথম স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ চারটি হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করার বিষয়ে জানান। পরে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে মন্ত্রণালয়। গত ১০ এপ্রিল ঢামেকের পুরাতন বার্ন ইউনিট কোভিড রোগীদের জন্য প্রস্তুত করার কথা জানায় মন্ত্রণালয়। পরে ১৬ এপ্রিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আরেকটি চিঠিতে বলা হয়, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত করেছে মন্ত্রণালয়। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত বদলে ২১ এপ্রিল মন্ত্রণালয় থেকে নতুন নির্দেশনা আসে।

/জেএ/এফএ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রেল ও সড়ক বিটের রিপোর্টারদের সংগঠনের নতুন কমিটি
রেল ও সড়ক বিটের রিপোর্টারদের সংগঠনের নতুন কমিটি
কঙ্গোর বাস্তুচ্যুত শিবিরে হামলা, নিহত ৯
কঙ্গোর বাস্তুচ্যুত শিবিরে হামলা, নিহত ৯
প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার ও প্রচারণা
প্রতীক বরাদ্দের আগেই পোস্টার ও প্রচারণা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
বিসিএসে সফলতায় এগিয়ে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
যশোরে আজ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
কেমন থাকবে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়া?
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা
নদীতে ধরা পড়ছে না ইলিশ, কারণ জানালেন মৎস্য কর্মকর্তা