X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

কৃষিকাজে যুক্ত মাত্র ১৫ ভাগ নারী মজুরি পান: গবেষণা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:৩৩আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২০, ২২:৪০

কৃষিকাজে যুক্ত মাত্র ১৫ ভাগ নারী মজুরি পান: গবেষণা কৃষিকাজে যুক্ত আছেন এমন ১৫ ভাগের কাছাকাছি নারী মজুরি পান বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত এক ওয়েববিনারে ‘কৃষিতে নারীর কাজের মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করা হয়।

গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ড. ইসমত আরা বেগম। তাকে গবেষণার কাজে সহায়তা করেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং ড. মাহবুব হোসেন।

২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে শুরু হওয়া এই গবেষণাতে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে বাংলাদেশে কৃষিকাজের কতটা নারীর দ্বারা সম্পাদিত হয়। পরিবারের কতটা খাবারের যোগান দেন নারী। গ্রামীণ শ্রমবাজারে নারী কতটা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিবিএস পরিসংখ্যানে কী গ্রামীণ নারীর কাজকে ঠিকমতো তুলে ধরা হয়েছে? এমন কি কোনও প্রমাণ আছে যে, গ্রামীণ পুরুষরা লাভের আশায় কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন এবং নারীরা কৃষি-ব্যবস্থাপনায় মূল চালিকাশক্তি হতে চলেছেন?

গবেষণার কারণ হচ্ছে ধান উৎপাদন, গবাদিপশু পালন, হাঁস-মুরগি পালন এবং মাছ চাষে নারীর অংশগ্রহণ কতটা? এটা দেখা যে, কৃষিখাতে নারী শ্রমিক তাদের কাজের পাওনা পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে কতটা বৈষম্যের শিকার হন। গ্রামীণ নারী তাদের কাজের কতটা উৎপাদনশীল কাজে এবং কতটা অনুৎপাদনশীল কাজে ব্যয় করেন এবং শ্রম বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে নারীর বড় বাধাগুলো কী কী?

গবেষণাপত্রে বলা হয়, ‘সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, কৃষিতে মজুরিযুক্ত কাজে নারীর সংখ্যা মাত্র ১৫ ভাগের কাছাকাছি। গবাদিপশুর লালন পালন ও খাদ্যশস্য উৎপাদনে নারীর অনেক বেশি অংশগ্রহণ থাকার পরও এত অল্প সংখ্যা দেখে এটাই প্রমাণিত হয় যে, গ্রামীণ জীবনে আনুষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে নারীর কাজের পরিধি এখনও খুবই সামান্য। গ্রামের সাপ্তাহিক বাজারে নারীর উপস্থিতি খুব একটা চোখে না পড়লেও, ইদানিং জীবিকার প্রয়োজনে তারা বাজারে আসছেন। যদিও তাদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ স্বামী গ্রহণ করেন এবং এই টাকা ব্যয় করার অধিকারও তাদের নেই। ফলে এই কাজে নারীর যে শ্রম ও সময় ব্যয় হলো, তা অবমূল্যায়িতই থেকে গেলো।’

এতে বলা হয়, গ্রামীণ নারীদের অনেকেই মনে করেন, তারা আগের চাইতে অধিক হারে অর্থনৈতিক কাজে অংশ নিতে পারলেও, নিজেদের অর্জিত টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এখনও তাদের সুযোগ খুব কম, নারীকে কাজ করতে হয় মূলত পারিবারিক শ্রমিক হিসেবে, কাজেই তাদের আয়ের পরিমাণ খুবই সামান্যই রয়ে গেছে।

আরও জানা যায়, দেশে মোট ৫ কোটি ৬৭ লাখ কর্মজীবী মানুষের মধ্যে শতকরা ৪৭.৬ জন কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। আবার এদের মধ্যে শতকরা ৬৪.৮ জন নারী। অথচ অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা জমির মালিক নন। তাই তদারকির দায়িত্বে নয়, বরং তাদের কাজ করতে দেখা যায় জমিতে।

আজকের আলোচনায় আরও উঠে এসেছে, স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট সিস্টেমের কথা। এটি একটি হিসাব পদ্ধতি, যা দিয়ে ঘরের অ-অর্থনৈতিক সেবামূলক বা গৃহস্থালি কাজ মাপা হয়। এই কাজগুলো কোনও অর্থনৈতিক লেনদেন বা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা ছাড়াই গৃহিনীরা করে থাকেন। তাদের এই কাজগুলো উৎপাদনের জাতীয় হিসাবের বাইরে থাকে অথবা জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতির (এসএনএ) বাইরে থাকে।

যেহেতু আর্থিক মূল্য ছাড়া কোনও কাজই বাজার অর্থনীতির অর্ন্তভুক্ত হয় না, আর তাই অর্থনীতিবিদরা সাধারণত স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট সিস্টেমের ওপর নির্ভর করেন। স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে নারীর অমূল্যায়িত কাজকে চিহ্নিত করে অর্থনীতিবিদরা জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতি বা সিস্টেম অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস (এসএনএ) এর কঠিন সীমাবদ্ধ চৌহদ্দি অতিক্রম করতে পারেন। যদিও গ্রামে মেয়েরা অধিক হারে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছেন, এলাকায় কৃষিবিষয়ক তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের প্রবেশাধিকার সহজ হয়েছে এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যোগ দেওয়ার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার পক্ষ থেকে সহয়তা করা হচ্ছে, কিন্তু এরপরও সব কাজের ক্ষেত্রেই নারী ও পুরুষের মধ্যে প্রকট বেতন বা মজুরি বৈষম্য রয়েছে। গ্রামীণ নারীকে ঘরে এবং বাইরে কাজের যে বোঝা বহন করতে হয়, তা পুরুষকে করতে হয় না।

শুধু যে গৃহস্থালি ও সেবামূলক কাজই গ্রামীণ নারীকে শ্রম বাজারে অনেক বেশি হারে প্রবেশে বাধা দেয়, তা নয়। গবেষণায় দেখা গেছে গ্রামীণ নারীর অবদানকে স্বীকার করে নেওয়ার ক্ষেত্রে জেন্ডার অর্থনীতির মাপকাঠির যে তত্ত্বীয় পরিমাপক আছে, তার ভিত্তিতে গ্রামীণ নারীর কাজকে বিচার করা হয়। এর পাশাপাশি তাদের অর্থনৈতিক কাজসমূহকে সিস্টেম অব ন্যাশনাল অ্যাকাউন্টস (এসএনএ) এর মাধ্যমে হিসাব করা হয়।

অথচ এই কাজগুলো কোনও অর্থনৈতিক লেনদেন বা ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা ছাড়াই গ্রামীণ নারী সংসারে ও সংসারের বাইরে করে থাকেন। তাদের এই কাজগুলো উৎপাদনের জাতীয় হিসাবের বাইরে থাকে বা জাতীয় আয় পরিমাপের পদ্ধতির (এসএনএ) বাইরে থাকে। যেহেতু আর্থিক মূল্য ছাড়া কোনও কাজই বাজার অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত হয় না আর তাই গ্রামীণ নারীর অবৈতনিক ও অমূল্যায়িত গৃহস্থালি, সেবামূলক এবং কৃষিকাজের  মূল্যায়ন করে, জাতীয় জিডিপিতে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. বিদিশা হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক শারমিন্দ নিলোর্মী, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রোকেয়া বেগম এবং কৃষি মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ আলোচনায় অংশ নেন।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যাঞ্চেলর ড. লুৎফুল হাসান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম এবং প্রধান অতিথি ছিলেন সাংসদ সাবের হোসেন চেীধুরী।

 

/এসআইআর/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাড়তি ফসল মিষ্টিকুমড়ায় কৃষকের মুখে হাসি
বাড়তি ফসল মিষ্টিকুমড়ায় কৃষকের মুখে হাসি
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ধাক্কা মেরে ফেলে চাপা দিলো কাভার্ডভ্যান, মোটরসাইকেলচালক নিহত
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!