বাংলাদেশে আসতে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করছে বেবিচক। তবে এ নির্দেশনা অমান্য করছে দেশি-বিদেশি ৯ এয়ারলাইন্স। করোনা নেগেটিভ সনদ ছাড়াই বাংলাদেশে যাত্রী নিয়ে এসেছে এয়ারলাইন্সগুলো। এয়ারলাইন্সগুলোকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে ব্যবস্থা নিতে ৯ এয়ারলাইন্সের তালিকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, ওই ৯টি এয়ারলাইন্স হচ্ছে—বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সালাম এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজ, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স, এমিরেটস, এয়ার এশিয়া, এয়ার অ্যারাবিয়া, গালফ এয়ার ও তার্কিশ এয়ারলাইন্স। ৫ ডিসেম্বর কার্যকর হওয়ার পর ৯টি এয়ারলাইন্স দুদিনে নেগেটিভ সার্টিফিকেটবিহীন ৪৩৩ জন যাত্রী বাংলাদেশে নিয়ে এসেছে। বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের সবাইকে সরকারিভাবে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ করোনা সনদ ছাড়া এসব যাত্রীকে পরিবহন করায় এয়ারলাইন্সগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বেবিচকে চিঠি দেবে বলেও জানা গেছে।
বেবিচকের সদস্য (ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশন্স) গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী মো. জিয়াউল কবীর স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আসতে হলে সকল যাত্রীকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষা করতে হবে এবং নেগেটিভ যাত্রীরাই আসতে পারবেন। বিমানবন্দরে সেই নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। একইসঙ্গে বিমানবন্দরেও যাত্রীর লক্ষণ উগসর্গ আছে কিনা অনুসন্ধান করা হবে। কোনও যাত্রীর উপসর্গ দেখা গেলে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকলেও তাকে নির্ধারিত হাসপাতালে পরবর্তী পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে। প্রয়োজনে আইসোলেশন সেন্টারেও পাঠানো হবে। কোনও যাত্রীর মধ্যে উপসর্গ দেখা না গেলেও তাকে নিজ বাড়িতে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে যাদের বিএমইটি কার্ড আছে, তারা যে দেশ থেকে আসবেন সে দেশে পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা সহজলভ্য না হলে অ্যান্টিজেন টেস্ট বা অন্য কোনও গ্রহণযোগ্য পরীক্ষার সনদ নিয়ে দেশে আসতে পারবেন। বাহরাইন, চীন, সৌদি আরব, কুয়েত, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, ওমান, কাতার, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও যুক্তরাজ্যে চলাচল করা ফ্লাইটের ক্ষেত্রে করোনা মহামারির মধ্যে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে ৫ ডিসেম্বর থেকে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অন্যান্য গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট নেই। সিঙ্গাপুর, তুরস্ক, দুবাই, আবুধাবি, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্যে ট্রানজিট হয়ে যাত্রীরা এসব গন্তব্যে আসা-যাওয়া করেন। ফলে এ নির্দেশনা কার্যকর হলে ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অন্যান্য গন্তব্যে চলাচল করা ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও এ নির্দেশনা কার্যকর হবে। তবে শিডিউল বাণিজ্যিক ফ্লাইট ছাড়া রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ত্রাণ, মানবিক সাহায্য, প্রত্যাবাসন, বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত আনা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত কূটনৈতিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এ শর্ত প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া, বাংলাদেশে অবস্থানরত কূটনৈতিক মিশনগুলোর কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ক্ষেত্রেও পিসিআর ল্যাবে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট থাকতে হবে (যাত্রার আগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করা)। বিদেশি উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে আসলে তার জন্যও একই শর্ত প্রযোজ্য।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান বাংলা ট্রিবিউনেকে বলেন, আমার এয়ারলাইন্সগুলোকে মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি। একইসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে এয়ারলাইন্সগুলোর নামের তালিকাও পাঠানো হচ্ছে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।