X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

টিএসসি ভাঙার পক্ষে নেই কেউ

সিরাজুল ইসলাম রুবেল, ঢাবি
২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ২৭ ডিসেম্বর ২০২০, ১৫:০৯

টিএসসি শিক্ষার্থীদের তুলনায় চরম আবাসন সংকট রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি)। বছরের পর বছর প্রথম ও ‍দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হচ্ছে ‘গণরুমে’। সেখানে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা। আবাসন সমস্যা সমাধান না করে টিএসসির মতো ঐতিহাসিক স্থাপনা নষ্ট করে এমন ‘উন্নয়ন’ কি খুব জরুরি? এমন প্রশ্ন প্রশাসনের কাছে রাখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

টিএসসি ঐতিহাসিক জায়গা। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে উজ্জ্বল অতীত। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সমস্যার সমাধান না করে, গবেষণার বরাদ্দ না বাড়িয়ে, লাইব্রেরিতে পর্যাপ্ত বই না রেখে এবং সেটাকে অনলাইনে বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত না করে শুধু বড় বড় ভবন নির্মাণ করাকেই উন্নয়ন বলে না। এমন মন্তব্য করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা। হলগুলোতে আবাসন সমস্যার উন্নয়ন না করে টিএসসির মতো একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাকে ভেঙে উন্নয়ন করার দরকারটা কী? এর পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থও দেখছেন তিনি।

শিক্ষক ও ছাত্রনেতারা বলছেন, রাজনৈতিক স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে কৃত্রিমভাবে আবাসন সংকট তৈরি করে রাখা হয়, যাতে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলো সিট রাজনীতি করে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য করতে পারে। হলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেও এ তথ্যের সত্যতা মিলেছে।

স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন বলেন, ‘যারা সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করবে, তাদের আগে সিট দেওয়া হয়। আর রাজনীতিতে সক্রিয় নয়, এমন শিক্ষার্থীদের গণরুম বা মসজিদে থেকে ছাত্রজীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দিতে হয়।’

সামিনা লুৎফা আরও বলেন, ‘ভবন নির্মাণের সঙ্গে আর্থিক স্বার্থ জড়িত। টিএসসির মতো প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাকে রাজনৈতিকভাবে না দেখে জাতির ইতিহাসের অংশ হিসেবে সংরক্ষণ করা উচিত। আর যদি সংস্কার করার প্রয়োজন হয়, তাহলে প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে কমিটি করে সংস্কার করা যেতে পারে।’        

যেভাবে দেখছেন ছাত্রনেতারা

টিএসসিকে আধুনিকায়ন করার কথা উঠলে শুরু থেকে এর বিরোধিতা করে অনেকে। সমালোচনার মুখে পড়ে বৃহস্পতিবার টিএসসির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামত চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন টিএসসির উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের বিষয়ে মতামত চাওয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ধরনের কার্যক্রমকে আমরা স্বাগত জানাই। মূলত এর আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছি, শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে টিএসসির নান্দনিকতা এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা ঠিক রেখে যেন নকশা করা হয়। আমরা আশা করি টিএসসির সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো তাদের মতামত ব্যক্ত করবে।'

ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক হল রয়েছে যেগুলো প্রায় ভেঙে পড়ছে। সেসব হলের সংস্কার না করে টিএসসির মতো একটি ঐতিহাসিক স্থাপনার উন্নয়ন করা কি খুব প্রয়োজন? টিএসসি হলো মুক্তচিন্তার জায়গা। এটি ভাঙা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানের সভায় প্রশাসন আমাদের বলেছিল যে, টিএসসির পেছনে পরমাণু শক্তি কমিশন এবং বিএনসিসির যে ভবনটি রয়েছে সেটি স্থানান্তর করে টিএসসিকে সম্প্রসারণ করবে। তখন আমরা রাজি হয়েছিলাম। টিএসসির বর্তমান কাঠামো ঠিক রেখে সেটি করা যেতে পারে। কোনোভাবেই বর্তমান নান্দনিকতা যাতে নষ্ট না হয়।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'টিএসসি ভাঙার বিষয়ে কোনো মতামত চাওয়াই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি বিভ্রান্তিকর। আধুনিকায়নের নামে টিএসসির মতো প্রাচীন স্থাপনাকে নষ্ট করাটা কোনো একটা পাঁয়তারারই অংশ। আমরা কখনো টিএসসিকে ভাঙতে দেবো না। টিএসসির বুকের ওপর দিয়ে মেট্রোরেল তৈরি করে এখন টিএসসিকে ভাঙার পরিকল্পনা চলছে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, 'টিএসসির বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মতামত চাওয়া হয়েছে। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলে মনে করি। টিএসসির বর্তমান নকশার ক্ষতি না করে যদি উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়, তবে তা ভিন্ন। কিন্তু এর জন্য খ্যাতনামা শিল্পী যারা আছেন, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই কাজটি করতে হবে। টিএসসি ভাঙার প্রশ্নই আসে না। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’

প্রশাসনের বক্তব্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শুক্রবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'টিএসসির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত চাওয়া হয়েছে। এর আগেও আমরা দেখেছি শিক্ষার্থীরা তাদের সৃজনশীল মতামত দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা প্রস্তাবনা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'টিএসসি ভাঙার প্রশ্ন কেন আসছে? এর সম্প্রসারণ এবং উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।'

/এফএ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
২৫ জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা শনিবার বন্ধ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চলবে
সর্বশেষ খবর
চীন সফরের পরিকল্পনা করেছেন পুতিন
চীন সফরের পরিকল্পনা করেছেন পুতিন
টসে জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
টসে জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
কম শক্তির আবাহনীর বিপক্ষেও জিততে পারেনি মোহামেডান
কম শক্তির আবাহনীর বিপক্ষেও জিততে পারেনি মোহামেডান
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি সরকারি কর্মচারীদের
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ