বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলে ২০১৮ সালের মধ্যে এ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন,আঞ্চলিক সহযোগিতা ছাড়া ম্যালেরিয়া নির্মূল সম্ভব নয়। তাদের মতে,শহরের কাছাকাছি এলাকায় ম্যালেরিয়া কমে গেলেও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে যতোদিন ক্রস বর্ডার কোলাবোরেশন (আঞ্চলিক সহযোগিতা) না করা হবে,ততোদিন ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব কমবে না।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে,বাংলাদেশের ১৩টি জেলার ১৭টি উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব রয়েছে। দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার জনগোষ্ঠী ম্যালেরিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্তের এবং মৃত্যুর শতকরা নব্বই শতাংশই সংঘটিত হয়ে থাকে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় অর্থ্যাৎ, রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানে।
আরও পড়তে পারেন: এফবিআইয়ের তদন্তজালে ক্লিনটন ফাউন্ডেশন
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মাদ শামছুজ্জামান বলেন,আমাদের সঙ্গে ভারতের তিন দিক দিয়ে সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্ত যদিও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মাধ্যমে সুরক্ষার কাজ চলে,কিন্তু এর মধ্যেও অনেকগুলো পয়েন্ট দিয়ে মানুষ যাতায়াত করে থাকে। একই সঙ্গে মিয়ানমার ও ত্রিপুরার সঙ্গে আমাদের যাতায়াত রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো,ত্রিপুরাতেও ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক। ত্রিপুরার যে অংশে আমাদের সীমান্ত সেখানে দুই বাংলার মানুষের সখ্যতা অনেক বেশি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ওপারের মানুষ এদেশের সেবা গ্রহণ করে।ত্রিপুরার যে অংশে আমাদের সীমান্ত সেখানে ভারতের ওই অঞ্চলে সেরকম সুসংগঠিত ম্যালেরিয়ার সার্ভিস খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে ওখানকার আক্রান্তদের বেশিরভাগ বাংলাদেশে এসে সেবা গ্রহণ করে।তাই সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে তিনদেশ মিলে কাজ করতে হবে।
অপরদিকে ব্রাকের যক্ষা ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক ড. আকরামুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশের ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলাগুলোতে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকাতেই ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটায় দেশে ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি এখনো কমেনি।
ডা. আকরামুল ইসলাম বলেন,ত্রিপুরা,মিজোরাম এবং রাখাইন এ তিন জায়গাতেই ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেশি। যার কারণে সীমান্ত এলাকাগুলোতে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এই তিন দেশের সমন্বয় দরকার।ওই জায়গাগুলোতে কি পরিকল্পনা নেওয়া হবে,কি কি ওষুধ যাবে,কোথায় স্বাস্থকর্মী কাজ করবে সেসব বিষয়ে সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।এটি কারও একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কারণ,বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূলের জন্য কাজ হলো,কিন্তু ভারত ঠিক মতো সার্ভিস দিলো না,তাহলে সেটি কাজের কাজ হবে না,ম্যালেরিয়া কমবে না।
তিনি বলেন,আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি,অনেক মানুষ ওপার থেকে ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করে এদেশে আসে।আর সেজন্যই আমরা যদি ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে চাই তা হলে আঞ্চলিক সহযোগিতা দরকার।এটি ছাড়া হবে না।
আরও পড়তে পারেন: ৩২ টাকা দরে চাল কিনবে সরকার
বাংলাদেশ,ভারত এবং মিয়ানমার-এই তিন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য উদ্যোক্তা যারা স্বাস্থ্যখাতে কাজ করেন তাদের এক্ষেত্রে ভূমিকা নিতে হবে। কিভাবে ওই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সেবার আওতায় আনা যায় সে নিয়ে ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মশার দেহে পরিবর্তন হচ্ছে।তাই ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি একেবারে কমছে না। সরকারি-বেসরকারি কার্যকর উদ্যোগে আশা করছি ২০৩০ সালের আগেই ম্যালেরিয়া অনেকটাই নির্মূল হবে।
জেএ/এমএসএম/