X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খতম তারাবির উত্তম পদ্ধতি কোনটি?

বেলায়েত হুসাইন
১৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:০০আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩, ০৯:০০

রমজানে সারাদেশের অসংখ্য মসজিদে খতম তারাবির আয়োজন করা হয়। মসজিদগুলোতে সাধারণত একই পদ্ধতিতে তারাবির নামাজের মধ্যে পবিত্র কোরআন খতম করেন হাফেজরা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনও ওই পদ্ধতি অনুসরণের আহ্বান জানায়। পদ্ধতিটি হলো—তারাবির প্রথম ছয় দিনে দেড় পারা করে ৯ পারা এবং বাকি ২১ দিনে ১ পারা করে ২১ পারা। এভাবে ২৭ দিনে কোরআনের কারিমের ৩০ পারা সমাপ্ত করা। 

প্রচলিত পদ্ধতির সুবিধা

সব মসজিদে একযোগে অনুষ্ঠিত এই পদ্ধতির তারাবিতে বিশেষ একটি সুবিধা আছে। তা হলো—একজন মুসল্লি যে কোনও মসজিদেই তারাবি পড়ুক না কেন, তাতে তারাবিতে তার সম্পূর্ণ কোরআন শ্রবণে কোনও বাধার সৃষ্টি হয় না। মানে ধরে নেওয়া যাক—একজন মুসল্লি দশম রমজানের তারাবি তার মহল্লার মসজিদে আদায় করলেন। যেদিন সেখানে ১৩ নাম্বার পারা তিলাওয়াত হয়েছে। সে পরের দিন অন্য কোনও মসজিদে তারাবি পড়লেন, তাহলে তারাবিতে সম্পূর্ণ কোরআন তিলাওয়াত শোনার তার যে সংকল্প ছিল তা অটুট থাকবে। কেননা সব মসজিদে একই পদ্ধতিতে তারাবি চলছে। পরের দিন তথা একাদশ রমজানে তিনি যে মসজিদে নামাজ পড়লেন, তার মহল্লার মসজিদের মতো সেখানেও নিয়মমতো ১৪ নাম্বর পারার তিলাওয়াত হবে।

পবিত্র কোরআনকে ৩০ পারায় বিন্যস্ত করার কারণ

সম্পূর্ণ পবিত্র কোরআনে কারিম ৩০টি পারা বা অংশে বিন্যস্ত। এই পারার হিসাবেই আমরা খতম তারাবি পড়ছি। তবে বিস্ময়কর তথ্য হলো—পারার এই বিন্যাস খতম তারাবির জন্য করা হয়নি; বরং কোরআন মুখস্থকারী ছোট বাচ্চাদের পড়া ও পড়ানোর সুবিধার্থে করা হয়েছে। হাফেজি কোরআন শরিফের প্রতিটি পারায় ২০টি পৃষ্ঠা থাকে। পৃষ্ঠার এ বিন্যাসও শিশুদের দিকে খেয়াল রেখেই করা।

পারা ও পৃষ্ঠার বিন্যাসকারী

পবিত্র কোরআনের আয়াত ও সুরাগুলোর বিন্যাস আল্লাহ প্রদত্ত। কিন্তু পৃষ্ঠা ও পারা সাজানো হয়েছে রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগের পরে। তবে এগুলোর আসল বিন্যাসকারী কে–এর নির্ভরযোগ্য কোনও সূত্র পাওয়া যায় না। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তার অমর গ্রন্থ মাজমাউল ফাতাওয়াল কুবরাতে উল্লেখ করেছেন, হরকত তথা ‘জবর-জের-পেশ’র মতো পবিত্র কোরআনের পারারও প্রবর্তন করেছেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ।

তারাবির বিবেচনায় পারা নয়, রুকু

আমরা জানি, নামাজে কেরাত পড়ার উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে—অর্থগত দিক থেকে কেরাতের শুরু এবং শেষে অভিন্ন প্রেক্ষাপট বজায় রাখা। কিন্তু কোরআনের পারা ও পৃষ্ঠা বিবেচনায় যদি আমরা নামাজের কেরাত পড়ি, তাহলে কেরাতের সূচনা ও সমাপ্তিতে অভিন্ন প্রেক্ষাপট বজায় থাকে না। কারণ, পারা এবং পৃষ্ঠা অর্থ বা বিষয়ের প্রতি নজর রেখে বিন্যস্ত হয়নি; বরং হিফজের বাচ্চাদের দিকে নজর রেখে করা হয়েছে। এজন্য অনেক জায়গায় দেখা যায়, একটি পৃষ্ঠা বা পারা শেষ হয়েছে কিন্তু বিষয়বস্তু অপূর্ণ রয়ে গেছে।

কোরআনে পারার মতোই আরেকটি বিন্যাস পদ্ধতি হচ্ছে—রুকু। কোরআনে সর্বমোট ৫৪০টি রুকু আছে। রুকু হিসেবে কোরআনের এ বিন্যাসটি দিয়েছেন মাশায়েখে বুখারা তথা বুখারার আলেমরা। পবিত্র কোরআনের মুসহাফ বা প্রতিলিপিগুলোর পার্শটিকায় রুকুর চিহ্ন হিসেবে আরবি অক্ষর ‘আইন’ লেখা থাকে।

কোরআনকে রুকুতে বিভাজন করা হয়েছে অর্থ ও মর্মের প্রতি লক্ষ্য রেখে। উদ্দেশ্য যেন আরবি ভাষা সম্পর্কে অনবহিত পাঠক বুঝতে পারেন—কোথায় একটি বিষয়ের আলোচনা শেষ হয়েছে আর কোথা থেকে নতুন বিষয়বস্তুর আলোচনার সূচনা।

৫৪০ সংখ্যায় রুকুর এই বিভাজনে রয়েছে দারুণ এক রহস্য। ওলামায়ে কেরাম কোরআনকে ৫৪০ রুকুতে ভাগ করেছেন—এ কারণে যে, যাতে পবিত্র রমজানে তারাবির নামাজে ২৭ দিনে তা খতম করা যায়। মানে প্রতিদিন তারাবির ২০ রাকাতের প্রত্যেক রাকাতে যদি এক রুকু পরিমাণ তিলাওয়াত করা হয়, তাহলে ২৭ রমজানে ৫৪০টি রুকু তথা সম্পূর্ণ কুরআন খতম হবে। কেননা, ৫৪০ সংখ্যাটিকে ২০ দিয়ে ভাগ দিলে ভাগফল হয় ২৭।

রুকু হিসেবে তারাবি পড়া উত্তম

নামাজে কেরাত পাঠে বিশেষ দুটি পদ্ধতি আছে—এক. প্রথম রাকাতের কেরাত দ্বিতীয় রাকাতের কেরাতের চেয়ে বড় হওয়া। দুই. বিষয়বস্তু ঠিক রেখে প্রতি রাকাতে তিলাওয়াত করা। মানে একটি রাকাতে যে বিষয়টির কেরাত শুরু করা হলো, ওই রাকাতেই বিষয়টি শেষ করা।

কিন্তু দেখা যায়—রুকু হিসেবে কেরাত পড়লে কিছু কিছু সময় উপরোক্ত দুই পদ্ধতির ওপর একত্রে আমল করা সম্ভব হয় না। যেমন—সুরা বাকারার প্রথম রুকু ছোট আর দ্বিতীয় রুকু বড়–এক্ষেত্রে তো দ্বিতীয় পদ্ধতি তথা বিষয়বস্তু ঠিক রেখে প্রতি রাকাতে তিলাওয়াত করার ওপরে আমল হলো ঠিকই কিন্তু প্রথম রাকাতে বড় আর দ্বিতীয় রাকাতে ছোট কেরাত পাঠের ওপর আমল করা সম্ভব হলো না।

এক্ষেত্রে ইসলামি স্কলার ও ফোকাহায়ে কেরামের অভিমত হলো—বিষয়বস্তুর ওপর আমলের ব্যাপারটা প্রথম রাকাতের তুলনায় দ্বিতীয় রাকাতে ছোট কেরাত পড়ার আমলের ওপর প্রাধান্য পাবে। এজন্য সর্বাবস্থায়-ই পারার তুলনায় রুকু হিসেবে খতম তারাবি ও অন্যান্য নামাজ পড়া উত্তম ও মুস্তাহাব।

তথ্যসূত্র : ফাতওয়া তাতারখানিয়া : ১/৪৭৯, ফতোয়ায়ে আলমগীরি : ১/৯৪ ও অন্যান্য।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী; শিক্ষক, মারকাযুদ দিরাসাহ আল ইসলামিয়্যাহ, ঢাকা

/এসটিএস/এমএস/
সম্পর্কিত
ঈদুল ফিতরে করণীয়
চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার
রমজানে নবীজির রাতের আমল
সর্বশেষ খবর
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
যাত্রা শুরু করলো ইউএস-বাংলার ‘এয়ারবাস’
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
ব্রাইটনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর সতর্ক ম্যানসিটি
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ