X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

যে কারণে শিক্ষা আইনবিরোধী কওমিপন্থীরা

চৌধুরী আকবর হোসেন
২০ আগস্ট ২০১৬, ১৯:০৬আপডেট : ২০ আগস্ট ২০১৬, ২১:২৫

শিক্ষা-মন্ত্রণালয়-বেফাক কওমি মাদ্রাসার নিবন্ধন ও শিক্ষার মানোন্নয়নের বিধান রেখে সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন ২০১৬-এর বিরোধিতা করছে দেশের কওমিপন্থীরা। প্রস্তাবিত আইনে কওমি মাদ্রাসার স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ক্ষুণ্ন হওয়ার কথা বললেও মূলত মাদ্রাসার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার বিধানেই আপত্তি কওমিপন্থীদের। এ আইনের বিরোধিতায় আন্দোলন ও কঠোর কর্মসূচির হুমকিও দেওয়া হয়েছে। কওমি শিক্ষা বোর্ড, কওমিপন্থী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘শিক্ষা আইন ২০১৬’-এর খসড়া প্রণয়ন করে জনমত যাচাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ৩ এপ্রিল  প্রকাশ করে। ওইসব সুপারিশ পর্যালোচনা করে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
আইনটির শুরুতে বলা হয়েছে, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সরকার অনুমোদিত বা স্বীকৃত কোনও বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গণ্য করা হবে।’ এছাড়া, আইনটির তৃতীয় অধ্যায়ের ২০-অনুচ্ছেদে মাদ্রাসা শিক্ষার ‘খ’-এর ৩ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার কওমি মাদ্রাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’
প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের বিরোধিতার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমদ বলেন, শিক্ষানীতি  ও প্রস্তবিত  শিক্ষা  আইন  বিতর্কিত  হয়েছে  ধর্মহীন  শিক্ষা ব্যবস্থার কারণে। ধর্মনিরপেক্ষতার  নামে ৯২ ভাগ মুসলিম নাগরিকের অধিকার ক্ষুণ্ন হয় এমন নীতি, আইন বা সিলেবাস কোনও বিবেচনায় গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ জন্য ইসলাম বিদ্বেষী শিক্ষানীতি ও আইন, পাঠ্যপুস্তক বাতিলের দাবি উঠেছে সারাদেশে।

ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ধর্ম শিক্ষার জন্য কওমি মাদ্রাসা পাড়ায় মহল্লায় গড়ে ওঠা অপরিহার্য বিষয়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো স্থাপনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে নিবন্ধন প্রক্রিয়া। সব কওমি মাদ্রাসা প্রকাশ্যেই আছে। ফলে সরকারের অজানা নেই কোথায় কয়টি মাদ্রাসা আছে, কারা পরিচালনা করছে। এজন্য নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই। সরকারের হস্তক্ষেপ হলেই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে, ধর্মীয় শিক্ষা বাধাগ্রস্ত হবে।

শিক্ষা আইনের বিরোধিতা প্রসঙ্গে কওমি শিক্ষা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া (বেফাক) মহাসচিব মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবাদী বলেন, কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার মানোন্নয়নের ধারাটির বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনও সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ফলে কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়ন হবে তা অস্পষ্ট।

বেফাক মহাসচিব আরও বলেন, বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন হচ্ছে এ প্রক্রিয়ায় কওমি মাদ্রাসার নিবন্ধন হতে পারে না। কওমি মাদ্রাসার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে যদি বিকল্প নিবন্ধন প্রক্রিয়া করা হয়, তবে মানা যেতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করছি।

দেশের ১ হাজার ৫০০টি মাদ্রাসা রয়েছে আঞ্চলিক মাদ্রাসা বোর্ড গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে। এই বোর্ডের মহাসচিব মুফতি রুহুল আমিন নিবন্ধন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে বলেন, কওমি মাদ্রাসা সরকারি সুযোগ সুবিধা নেয় না। ফলে সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো কওমি মাদ্রাসার নিবন্ধন এক হতে পারে না। কওমি মাদ্রাসার জন্য আলাদা ও স্বকীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়া হওয়া উচিত।

প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন নিয়ে কওমিপন্থীদের বিরোধিতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এটা অন্য হিসাব। এটা নিয়ে কোনও কথা বলতে চাই না।

আন্দোলনে কওমিপন্থীরা

প্রস্তাবিত  শিক্ষা আইনের বিরোধিতা করেছে বেফাক। গত ৩ মে জাতীয় শিক্ষা নীতি ও শিক্ষা আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বেফাক। সর্বশেষ গত ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ধানমণ্ডির বাসভবনে বাংলাদেশ বেফাকের মহাসচিব আবদুল জব্বার জাহানাবাদীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় শিক্ষানীতি, শিক্ষা আইন নিয়ে বৈঠক করেন।

বৈঠক সূত্র জানা গেছে, বেফাকের প্রতিনিধিরা শিক্ষামন্ত্রীকে জাতীয় শিক্ষানীতি ও শিক্ষা আইনের কিছু ধারা সংশোধনসহ কওমি মাদরাসা নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা বাতিলের দাবি জানান।  

বেফাক ছাড়াও কওমি ঘরানার ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষা আইনের বিরোধিতা করে কর্মসূচি পালন করছে। চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন দেশব্যাপী শিক্ষানীতি, শিক্ষা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন, সমাবেশসহ নানা কর্মসুচি পালন করেছে। দলটি গত ২৭ মে ৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ৫ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিমুখে গণমিছিল। এরপরও দাবি না মানলে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করা হবে বলেও জানান দলটির আমির।

এছাড়া, ইসলামী ঐক্য জোট, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম শিক্ষা নীতি ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

 আরও পড়তে পারেন: এবারও সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হচ্ছে না: লোকসান দিতে চায় না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো!

/এএ/এমএনএইচ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
শর্তে একমত হতে পারেননি, বায়ার্ন ছাড়ছেন টুখেল
শর্তে একমত হতে পারেননি, বায়ার্ন ছাড়ছেন টুখেল
ইসরায়েলকে থামাতে হবে, আইসিজিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদন
ইসরায়েলকে থামাতে হবে, আইসিজিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আবেদন
থানচির দুর্গম পাহাড়ি পাড়ায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে এনেছে বিজিবি
থানচির দুর্গম পাহাড়ি পাড়ায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে এনেছে বিজিবি
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব