X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপিকে জিয়ার আদর্শে ফেরার পরামর্শ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর

সালমান তারেক শাকিল
০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:০৯আপডেট : ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ২৩:২০

জাফরুল্লাহ চৌধুরী (ছবি-সংগৃহীত) বিএনপিকে ‘দলটির প্রতিষ্ঠাতা’ জিয়াউর রহমানের আদর্শে ফিরতে এবং তার আধুনিক চিন্তা-চেতনা ও রাজনৈতিক কৌশলকে অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন,‘দীর্ঘদিন ক্ষমতা ও সংসদের বাইরে থাকা বিএনপিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কাছে ফিরতে হবে।’ এক্ষেত্রে জিয়ার রাষ্ট্রনীতি রপ্ত করতে জিয়াকে অধ্যয়ন করতে হবে বলেও মত দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) মুঠোফোনে দেওয়া এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতকারে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ১ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) বিএনপির ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলটির নেতাকর্মীদের  শুভেচ্ছা জানান জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

জনগণের কাছে বিএনপিকে কিছু প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন  এই  মুক্তিযোদ্ধা-চিকিৎসক। বিএনপি’র প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘তারা কী কী করবেন, তা নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। কোনও রাজনৈতিক কর্মীকে হয়রানি করবেন না। দুর্নীতির বিচার করবেন, কিন্তু হয়রানি করবেন না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। র‌্যাব বন্ধ করে দিতে হবে। কৃষক শ্রমিকদের স্বার্থ দেখতে হবে। পাশাপাশি আরও বুদ্ধিজীবীকে সঙ্গে নিতে হবে। যতগুলো কাজ, এগুলো সবই জিয়াউর রহমান করেছেন। তিনি একুশের পদক, স্বাধীনতা পদক প্রবর্তন করেছেন। এগুলো ভুলে গেলে চলবে না। জিয়াউর রহমানের কাজগুলোকে চিন্তায় নিতে হবে। বিএনপির জন্মদিনে এটাই আমার কামনা।’

আগামী দিনের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দিতে গিয়ে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘তিনি কী করবেন আর কী করবেন না, এ বিষয়ে আগামী নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। কতগুলো সুচিন্তিত দফায় আসতে হবে। সাতটা বা দশটা দফা হতে পারে। আমার ধারণা, এগুলো করলে তাদের (বিএনপি’র) উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আছে। হাজার হোক, তাদের সঙ্গে সাত-আট কোটি লোক এখনও আছে। আর অবশ্যই তারা জিতবেন। তা না হলেও তাদের বাদ দিয়ে কিছুই করা যাবে না।’

বিএনপিকে জিয়ার আদর্শে ফিরতে হবে জানিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘ঘুরে দাঁড়াতে হলে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কথা স্মরণ করা উচিত তাদের। জিয়াউর রহমানের চিন্তাধারাকে অনুসরণ করলে তারা লাভবান হবেন।’

জিয়াউর রহমানের চিন্তাধারার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের চিন্তাধারা ছিল সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা। রাজনীতি, কর্মক্ষেত্র ও দেশ শাসনে সবাইকে সঙ্গে নিতে হবে। কারণ, জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করতে এসে সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে শিখলেন। তিনি যখন গেরিলাদের ট্রেনিং দিতেন সেখানে শ্রমিক ছিলেন, কৃষক ছিলেন, ছাত্র ছিলেন, বিভিন্ন পেশার লোক ছিলেন। আমার ধারণা, সেখান থেকেই জিয়াউর রহমান সবাইকে নিয়ে কাজ করার প্রেরণা পেয়েছিলেন। সে কারণে তিনি যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন, প্রথমেই তিনি সবাইকে ডেকেছিলেন। তার খাল কাটা কর্মসূচিতে সিপিবিও অংশ নিয়েছে। এরপর তিনি যখন পার্টি গঠন করলেন সেখানে কাজী জাফর, এনায়েতুল্লাহ খানসহ অনেককে সঙ্গে নিয়েছেন। মাওলানা মান্নানকে নেওয়াটা আমাদের পছন্দের ছিল না। কিন্তু তাদের সংস্কার ও উন্নতির ব্যাপারে চিন্তা ছিল তার। মানুষকে ক্ষমা করতে জানতেন জিয়াউর রহমান।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উদ্দেশে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার উচিত হবে জিয়াউর রহমানের এ চিন্তাধারা ও কাজগুলোকে পুনর্বিবেচনা করে তা কাজে লাগানো।’

জাফরুল্লাহ চৌধুরী আরও বলেন, ‘বিএনপির গঠনতন্ত্রে গণতান্ত্রিক মনোভাব ছিল। তাতে নির্বাচিত প্রতিনিধি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেখানে প্রত্যেকটি পদে নির্বাচনের কথা ছিল। শুধুমাত্র উপদেষ্টাদের ক্ষেত্রে চেয়ারপারসনের ক্ষমতার কথা বলা আছে।’

দলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাধান্য দেওয়ার প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি, সবগুলো বিরোধী দলকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনে নামতে হবে। বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়াকেই এ উদ্যোগ নিতে হবে। পার্টির মধ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। স্থায়ী কমিটির যে পদগুলো খালি আছে, সেখানে খুব কড়া দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে নিতে হবে। যেমন- আবদুল্লাহ আল নোমান আছেন, হাফিজ উদ্দিন আছেন। এটা মুক্তিযোদ্ধাদেরই দল। কিন্তু আরও শক্তিশালী মুক্তিযোদ্ধাকে নিতে হবে। এটা খুব সহজ কাজ।’

বিগত দিনের আন্দোলন প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল, কিন্তু পদ্ধতিটা ভুল ছিল। খালেদা জিয়া যদি ২৯ ডিসেম্বরের স্থলে নভেম্বর মাসে এ ঘোষণা দিতেন, তাহলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারতো না। কারণ, সাতদিন ঠেকানো গেলেও এক মাস ঠেকানো যায় না। সেখানেই তার ভুল ছিল।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২১ আগস্ট খালেদা জিয়াকে খোলা চিঠি দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। প্রায় সাড়ে তিন হাজার শব্দের চিঠিতে তিনি খালেদা জিয়াকে জামায়াত  বিষয়ে দ্রুত  সিদ্ধান্ত নেওয়া,  দলে গণতন্ত্র ও গঠনতন্ত্রের চর্চা করা, উপদেষ্টা পরিষদে  বিশিষ্ট জনদের কোআপ্ট করা ও  ড. কামাল হোসেনের দলসহ কয়েকটি দলকে নিয়ে একসঙ্গে  জনসভার ঘোষণা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি।

 

/এএইচ/ এপিএইচ/আপ-এনআই
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাছ কাটা ও লাগানোর বিষয়ে আইন-বিধি চেয়ে আইনি নোটিশ
গাছ কাটা ও লাগানোর বিষয়ে আইন-বিধি চেয়ে আইনি নোটিশ
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম