রাজাকারের তালিকা তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজ আসল মুক্তিযোদ্ধা ও প্রকৃত রাজাকারদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। যে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে তাতেও অনেক ভুল। কেন ভুল। তারা বলেন, এটা পাকিস্তানিদের তৈরি। পাকিস্তানিদের দেওয়া তথ্যে আপনি রাজাকারের তালিকা দেবেন, সেটা তো আপনার বা এ দেশের তালিকা হবে না। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিজয় দিবসের র্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং স্বাধীনতার যুদ্ধে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ রাজাকারের তালিকা তৈরি করেছে। তারা মুক্তিযুদ্ধকে একটি রাজনৈতিক প্রোডাক্ট হিসেবে ব্যবহার করে। এ কারণে আজ মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের তালিকা তৈরি করছে।
সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, তারা দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে, বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করেছে। মিডিয়াকে পর্যন্ত তারা নিয়ন্ত্রণ করছে। আজ দেশে কোথাও গণতন্ত্র নেই।
দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে বিজয় র্যালিতে অংশ নিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আজ র্যালিতে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের স্ত্রীর, যিনি ৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন, সেই নেত্রী খালেদা জিয়ার। তবে জোর করে ক্ষমতা দখল করে থাকা সরকার চক্রান্ত করে তাকে বন্দি করে রেখেছে।
আওয়ামী লীগের আমলেই গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছিল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আজ যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে, দখলদার সরকারের হাতে তারাই গুম-খুনের শিকার হচ্ছেন। আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার। বহু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে।
খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে নেতাকর্মীদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, তার (খালেদা জিয়া) মুক্তি ছাড়া আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা যাবে না। দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য সবাইকে দুর্বার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এবং সরকারকে বিদায় নিতে বাধ্য করতে হবে। আজ বিজয় দিবসে এই হোক আমাদের শপথ।
৩টা ১৫ মিনিটে বিজয় দিবসের র্যালি উদ্বোধন করেন মির্জা ফখরুল। র্যালিতে অংশ নেয় ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠন শ্রমিক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, তাঁতী দল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। র্যালি থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। র্যালিটি মালিবাগ মোড়ে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশ শান্তিনগর মোড় থেকে র্যালিটি ঘুরিয়ে দেয়।
একটি গোয়েন্দা সংস্থার হিসাব মতে, র্যালিতে প্রায় ১৫ হাজারের মতো নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বিএনপির র্যালিকে কেন্দ্র করে দুপুর আড়াইটা থেকে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা।
সর্বশেষ গত ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে র্যালি করতে চাইলেও পুলিশের অনুমতি না থাকায় কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি।
র্যালিপূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজ আমাদের মধ্যে বিজয়ের আনন্দ নেই। কারণ, দেশের বিজয়ের মূল উদ্দেশ্য গণতন্ত্র নেই। খালেদা জিয়াকে আজ অন্যায়ভাবে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে বন্দি রাখা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের হাত থেকে দেশ এবং দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় কারাগারে বন্দি। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাকে মুক্ত করবো ইনশাআল্লাহ।
র্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, উপদেষ্টা জয়নুল আবদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুস সালাম, আব্দুল হাই, হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিম প্রমুখ।