X
সোমবার, ১২ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

নৌকার টিকিট পেতে কেন এত ভিড়?

মাহফুজ সাদি
১৯ নভেম্বর ২০২৩, ২৩:২১আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ২৩:৩২

বিএনপিবিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সংসদীয় ৩০০ আসনের বিপরীতে দুই দিনেই নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে ২ হাজার ২৮৬ জন ফরম কিনেছেন। তারা দলের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অনুসারী, কর্মী, সমর্থকদের বড় দল নিয়ে দলের টিকিট নিতে আসেন। ভিড় সামাল দিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে দেখা যায় সংশ্লিষ্টদের। আরও দুই দিন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে। এবার নৌকার টিকিটপ্রত্যাশীর সংখ্যা ৫ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের অন্তত ডজনখানেক মনোনয়নপ্রত্যাশী একান্ত আলাপচারিতায় বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি ও তাদের সঙ্গী দলগুলো। কার্যত আওয়ামী লীগ ও দলটির মিত্র দলগুলো নির্বাচন করেছে। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৩ জন প্রার্থী জয়ী হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনও সেই অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়নি। এবারের নির্বাচনও এই বৃত্তের দিকেই এগুচ্ছে বলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে।

দুই দিনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২৮৬টি (কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের ছবি: ফোকাস বাংলা)

তাদের মতে, গত দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের টার্গেট ছিল নৌকার টিকিট নিশ্চিত করা। নৌকার প্রার্থী হতে পারলেই সংসদ সদস্য হওয়া অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। এবারের নির্বাচনও বিএনপিবিহীন হওয়ার নৌকার মনোনয়ন পেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এই তালিকায় ক্রীড়া, বিনোদনসহ বিভিন্ন অঙ্গনের কয়েকজন তারকাও নাম লিখিয়েছেন এবং লেখাবেন। ১৪ দলের বেশিরভাগ শরিক দলও নৌকা প্রতীকে জোটগতভাবে ভোট করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে এরইমধ্যে।

তবে বিপুল সংখ্যক মনোনয়নপ্রত্যাশী ফরম সংগ্রহ করায় শেষ পর্যন্ত নৌকার টিকিটের সোনার হরিণ কারা পাচ্ছেন, তা নিয়ে শঙ্কায় থাকার কথা জানিয়েছেন অনেকেই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য ও ফরিদপুর-১ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী আব্দুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শনি ও রবিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের দিকে তাকিয়ে সহজে বোঝা গেছে নেতাকর্মীদের মাঝে এবারের উচ্ছ্বাসটা কেমন। উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা ফরম সংগ্রহ করছেন। এটি খুবই ইতিবাচক দিক। বিএনপি-জামায়াতের হুমকি-ধামকিতে কোনও লাভ হবে না।

ভিড়ের কারণে রবিবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি দলের সাধারণ সম্পাদক (ছবি: ফোকাস বাংলা)

শনিবার ও রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ফরম কিনতে অনুসারীদের নিয়ে আসেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ভিড় থাকায় লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেন অনেকেই। এ সময় পাশ থেকে অনুসারী কর্মী-সমথকদের নানা ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়। রবিবার মনোনয়নপ্রত্যাশী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের ভিড়ে তিন বার চেষ্টা করেও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দেশের মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনে ভোট দিতে চায়। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রিকে ঘিরে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও নির্বাচনি ঢেউ তৈরি হয়েছে। আগের নির্বাচনগুলোর চেয়ে এবারের উচ্ছ্বাস আরও বেশি, এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক বলে আমরা মনে করি।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কেনার ভিড় (ছবি: ফোকাস বাংলা)

তবে বিএনপি ও তাদের সঙ্গী দলগুলোর নির্বাচন বর্জন ও হতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছে, সেটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। নির্বাচন করতে না দেওয়ার হুমকি দিয়ে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড করে মানুষের মাঝে ভয়ের সৃষ্টি করতে চায়। এতে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তাদের এই অপচেষ্টা ব্যর্থ হবে। অতীতে তা প্রমাণিত হয়েছে। এবারও নির্বাচন যথাসময়ে হবে।

শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ কার্যক্রম। প্রথম দিনে ১ হাজার ৭৪ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে সরাসরি ১ হাজার ৬৪ জন ও অনলাইনে ১০ জন এই ফরম সংগ্রহ করেন। এতে দলটির আয় হয় ৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। রবিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত মোট ১ হাজার ২১২ মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে। দুই দিনে ২ হাজার ২৮৬টি ফরম বিক্রি করে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ১১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

মানা করা হলেও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা দলবল নিয়ে ফরম কিনতে আসছেন (ছবি: মাহফুজ সাদি)

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বরিশাল-৪ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী শাম্মী আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পুরো দেশ এখন নির্বাচনমুখী। আমাদের নেতাকর্মীরাও উৎসবমুখর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আজ আমি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। সবার মাঝে এখন উচ্ছ্বাস। বিরোধীদের ষড়যন্ত্র নিয়ে মানুষের মাঝে শঙ্কা থাকলেও তাদের কোনও অপচেষ্টাই সফল হবে না, অতীতেও হয়নি।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলটির কার্যালয়ে আট বিভাগের জন্য স্থাপন করা হয় ১০টি বুথ। সেখান থেকে ফরম বিক্রি করা হয়। মনোনয়ন ফরম বিক্রির এই কার্যক্রম চলবে আগামী মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) পর্যন্ত। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরমের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হলে দলের মনোনয়ন বোর্ড যাচাই বাছাই শেষে ৩০০ আসনে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আওয়ামী লীগ।

/এফএস/
সম্পর্কিত
ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধর করে পুলিশে সোপর্দ
খুলনায় মহিলা আ.লীগ নেত্রী গ্রেফতার
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এবি পার্টির অভিনন্দন
সর্বশেষ খবর
ঋণের চাপে ছোট হচ্ছে বাজেট, উন্নয়নে বরাদ্দ ৪ বছরে সর্বনিম্ন
ঋণের চাপে ছোট হচ্ছে বাজেট, উন্নয়নে বরাদ্দ ৪ বছরে সর্বনিম্ন
দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও লিভারপুলকে রুখে দিলো ১০ জনের আর্সেনাল
দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও লিভারপুলকে রুখে দিলো ১০ জনের আর্সেনাল
সীমান্তে গোলাবর্ষণের আতঙ্কে ফিরতে চান না বাস্তুচ্যুত গ্রামবাসী
ভারত-পাকিস্তান সংঘাতসীমান্তে গোলাবর্ষণের আতঙ্কে ফিরতে চান না বাস্তুচ্যুত গ্রামবাসী
আমিরাতে সিঙ্গাপুরের গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে তাহসিনের ড্র
আমিরাতে সিঙ্গাপুরের গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে তাহসিনের ড্র
সর্বাধিক পঠিত
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
বেসরকারি ব্যাংক সরকারি মালিকানায় নেওয়া যাবে, অধ্যাদেশ জারি
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারিস্টার কাজল
আ. লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে যে আইনি ব্যাখ্যা দিলেন ব্যারিস্টার কাজল