X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

আ. লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে

সালমান তারেক শাকিল
৩০ মে ২০১৮, ২৩:১২আপডেট : ৩১ মে ২০১৮, ০১:২৭

 

আ. লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানিয়ে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যকে চিঠি দিয়েছে সিলেট মহানগর বিএনপি। এই বছরের শুরুর দিকে এ চিঠি তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়। ওই সময় খালেদা জিয়ার কাছেও চিঠির কপি দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাছিম হোসাইন।

বাংলা ট্রিবিউনকে নাছিম হোসাইন বলেন, ‘তিন-চারমাস আগে চিঠি দিয়েছি। দলের চেয়ারপারসনের হাতে ওই চিঠি দিয়েছি। এছাড়া মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, মোহাম্মদ শাজাহানের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম।’ নাছিম হোসেইন এও বলেন, ‘তখন তো পরিবেশ ছিল না। তারা বলেছিলেন, সময়মতো বিষয়টা দেখবেন।’

 বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনও অভিযোগ আসেনি। কোনও তথ্যও নেই। এটা নিয়ে মহাসচিব বলতে পারবেন।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খানও বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’ পরে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সিলেট বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আরিফুল হক চৌধুরীকে আসন্ন সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ঠেকাতেই মহানগর বিএনপির এই চিঠি। গত এক বছর ধরেই হাইকমান্ডকে জানানোর জন্য তৎপরতা ছিলেন নগরীর সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম।বর্তমানে তিনি ওমরা পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন। এরপর তিনি লন্ডন যেতে পারেন। তিনি মেয়র নির্বাচন করতে আগ্রহী। আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটিসহ আরও তিনটি মহানগরীতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। আসন্ন এই নির্বাচনে আরিফুল হকই বিএনপির দলীয় মনোনয়নে এগিয়ে রয়েছেন বলে কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা আছে।

আরিফুল হকের বিরুদ্ধে দেওয়া চিঠিটি ৫ পৃষ্ঠার। এর শুরুতেই দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ‘বিমাতাসুলভ’ আচরণের অভিযোগ করা হয় মেয়রের বিরুদ্ধে। এতে আরও অভিযোগ তোলা হয়েছে, দলীয় নেতাকর্মীরা কোনও অনুষ্ঠানে দাওয়াত করলে তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে অনুপস্থিত থাকেন।

সিলেট মহানগর বিএনপির প্যাডে লেখা চিঠিতে আরিফুল হকের বিরুদ্ধে ১১টি অভিযোগ তোলা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে সিলেট সদর উপজেলায় জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাহের শামীম ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। চিঠিতে অভিযোগ, মেয়র আরিফ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থনে কাজ করেন। ফলে জেলা বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হন।

চিঠিতে বলা হয়, ‘‘ওই সময় থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে ‘দহরম-মহরম’ সম্পর্ক তৈরি হয় আরিফুল হকের সঙ্গে। এরপর তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবুল মুহিতকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সংবর্ধিত করেন। ’’

মহানগর বিএনপির অভিযোগ সংবলিত চিঠিতে এও বলা হয়, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহরিয়ার সামাদ, তাকে মিষ্টিমুখ করিয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। চিঠিতে এ সম্পর্কিত ছবিও যুক্ত করা হয়েছে। 

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি নাছিম হোসেইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম স্বাক্ষরিত অভিযোগ সংবলিত চিঠির শেষ প্যারায় বলা হয়, ‘ক্ষমতালোভী স্বার্থপর এ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অতীতে বহুবার কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে, কিন্তু তার চাপাবাজি আর ভাঁওতাবাজি দিয়ে প্রায়ই নেতাদের মন ভুলিয়ে দেন। তাই, আগামী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থী নির্ধারণে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ 

 জনপ্রিয় আরিফের বিরুদ্ধে কেন সিলেটের বিএনপি?

 সিলেটে আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। নগরীর নাগরিকরা রাস্তাঘাট পরিষ্কার, নতুন রাস্তা নির্মাণ ও রাস্তা প্রশস্তকরণসহ নানা কাজে তার প্রশংসা দৃশ্যমান। দলের নেতাকর্মীরাও স্বীকার করেছেন তার জনপ্রিয়তার কথা। বিশেষ করে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর জেলে যাওয়ার ফলে সিমপ্যাথিও অর্জন করেছেন।

 ২০১৩ সালের ১৫ জুন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর পরের বছরের ২৮ ডিসেম্বর কারাবন্দি হন। সাবেক অর্থমন্ত্রী এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রে আসামি হন তিনি। এরপর ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে বহিষ্কার করে। দীর্ঘদিন কারাগারে বন্দি থাকতে হয় আরিফুল হক চৌধুরীকে।

পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সালের ১২ মার্চে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আদেশের বিরুদ্ধে আরিফুল হক চৌধুরী হাইকোর্টে রিট দায়ের করলে শুনানি শেষে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ স্থগিত হয়। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন। গত বছরের ৬ এপ্রিল স্বপদে মেয়রের কার্যালয়ে যোগ দেন আরিফুল হক চৌধুরী।

সিলেটের নেতাকর্মীরা বলছেন, মেয়র হিসেবে আরিফুল জনপ্রিয় হলেও নেতাকর্মীদের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য নন। বিশেষ করে সিলেট মহানগর, জেলা পর্যায়ের নেতারা আরিফের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন অনেকটাই প্রকাশ্যে।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও গত সিটি নির্বাচনে বিএনপির কো-অর্ডিনেটর আবদুল কাহের শামীম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিলেটে বিএনপির পরিস্থিতি খুব ভালো না। আরিফ তো আমার বিরোধিতা করেছেন। আমার নিশ্চিত বিজয় ছিল উপজেলা নির্বাচনে। তিনি সিটিতে কাজ করেছেন, এটা ঠিক। মাঠপর্যায়ে মানুষের মধ্যে তার সমর্থন আছে। সিমপ্যাথিও আছে। কিন্তু তিনি কর্মীবান্ধব নন। যার কারণে কর্মীরা মাঠে থাকবে না।’ 

নেতাকর্মীদের কেউ-কেউ মনে করেন, সিটি নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীকে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার চিঠি দেওয়া হলেও তা সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে হয়নি। এক্ষেত্রে মহানগরের সভাপতি নাছিম হোসেইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম দুজনেই মেয়র প্রার্থী হতে চান, সিলেটে এমন প্রচার আছে। ফলে, আরিফুলহকের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া হলেও আগ্রহের মূল কারণ নির্বাচনে প্রার্থিতা বলেও তারা বলছেন। 

জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এমন কোনও তথ্য আমার জানা নেই। কেউ চিঠি দিয়ে থাকলে, তা একান্তই ব্যক্তিগত উদ্যোগে হতে পারে।’ 

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্র্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগীয়) ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিলেটের বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে। চলমান আন্দোলনে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কে প্রার্থী হবেন, তা ঠিক করবে দল। আশা করি, দলীয়ভাবে মনোনয়ন যাকে দেওয়া হবে, তার পক্ষেই সবাই কাজ করবে।’ 

তবে সাখাওয়াত হাসান জীবন এও জানান, মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে লিখিত চিঠি না পেলেও তার কাছে কিছু পত্রিকার কাটিং পৌঁছেছে। তবে এ নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করতে আগ্রহী নন।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে আরিফুল হক চৌধুরীকে বহুবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। বুধবার রাতে তার সহকারী ফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘মেয়র ব্যস্ত আছেন।’

/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
উপজেলা নির্বাচন অর্থ ও সময়ের অপচয় মাত্র: সাইফুল হক
উপজেলা নির্বাচন অর্থ ও সময়ের অপচয় মাত্র: সাইফুল হক
৮ নন্দিত শিল্পীকে নিয়ে আসিফ ইকবালের ‘ঐশ্বর্য’
৮ নন্দিত শিল্পীকে নিয়ে আসিফ ইকবালের ‘ঐশ্বর্য’
ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে: কৃষিমন্ত্রী
মানবাধিকার সমুন্নত রেখে জনগণকে সেবা দিতে আইজিপির নির্দেশ
মানবাধিকার সমুন্নত রেখে জনগণকে সেবা দিতে আইজিপির নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল