X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

হারুনের এমপি পদ থাকছে কী?

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:১৮আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৪৫

শুল্ক ফাঁকির মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদের সংসদ সদস্য পদ থাকা না থাকা নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে হারুনের আইনজীবী এবং দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আইনজীবী পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। দুদকের আইনজীবী বলেছেন, আদালত তার আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। এর অর্থ তার (হারুন) বিচারিক আদালতের সাজাই বহাল রয়েছে। আদালত কেবল অনুকম্পা করে তার সাজা ভোগের সময়টা কমিয়েছে। ফলে নৈতিক স্খলনজনিত কারণে হারুনুর রশিদের এমপি পদ থাকার কথা নয়।

অপরদিকে হারুনের আইনজীবী বলেছেন, আদালত রায় সংশোধন করে কারাবাসের ১৬ মাস সময়কে সাজা হিসেবে গণ্য করেছে। ফলে সংবিধান অনুযায়ী, তার সংসদ সদস্য পদ যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। এ বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘রায়ে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে তার সংসদ সদস্য পদ যাবে না। তবে, পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে এই বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।’

সংসদ সদস্য হিসেবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করা গাড়ি বিক্রির কারণে শুল্ক ফাঁকির অভিযোগে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদকে ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। ওই মামলায় চ্যানেল নাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্যবসায়ী এনায়েতুর রহমান বাপ্পীকে দুই বছরের কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা জরিমানা, আর গাড়ি ব্যবসায়ী ইশতিয়াক সাদেককে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবরের ওই রায়ের পর হারুনকে জেলেও পাঠানো হয়। পরে তিনি হাইকোর্টে আপিল করলে ওই বছরের ৫ নভেম্বর তাকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়া হয়। হারুন ছাড়াও অপর দুই আসামি  বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছিলেন। তিনটি আপিলই খারিজ করে বৃহস্পতিবার রায় দিয়েছেন বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। তবে আপিল খারিজ করলেও তিন জনের সাজা কমিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের অর্থদণ্ডও বাতিল করা হয়।

রায়ে বলা হয়, বিচারিক আদালতের সাজা সংশোধন করে তিনটি আপিলই খারিজ করা হলো। বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা কমিয়ে আপিলকারীদের কারাবাসের মেয়াদ পর্যন্ত সাজা নির্ধারণ করা হলো।

রায়ের পর সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান মনে করেন, সাজা কমলেও সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, হারুনুর রশিদ আর সংসদ সদস্য পদে থাকতে পারবেন না। কারণ, তিনি দণ্ডিত এবং এতে তার নৈতিক স্থলন প্রমাণিত।

এ বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘উচ্চ আদালত উনাদের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। এর অর্থ নিম্ন আদালতের সাজা বহাল রয়েছে। আদালত তার কারাভোগের মেয়াদকে সাজাভোগের সময় হিসেবে গণ্য করার কথা বলেছেন। আদালত অনুকম্পা করে সাজাভোগের সময়টা কমিয়েছেন। এর অর্থ এই নয় যে তার সাজা কমেছে। যদি তাই হয় তাহলে তারা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা বলতেন না। আর যেহেতু হারুন সাহেবের ৫ বছরের সাজা হয়েছে, ফলে তার সংসদ সদস্য পদ থাকার সুযোগ নেই।’

রায়ের পর বিএনপির এমপি হারুনের আইনজীবী সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ মামলায় সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ প্রায় ১৬ মাস কারাভোগ করেছিলেন। কারাভোগের ওই সময়টা সাজা হিসেবে গণ্য করে আদালত আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। হাইকোর্টের এ রায়ের ফলে তাকে আর সাজা ভোগ করতে হবে না। তার সংসদ সদস্য পদ নিয়েও কোনও সমস্যা হবে না। কারণ, সংসদ সদস্য পদ বাতিল হতে হলে ন্যূনতম দুই বছর সাজা হতে হবে। তিনি নির্বাচনও করতে পারবেন।’

এ মামলা থেকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে হারুন আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘আদালত  কারাভোগের ১৬ মাস সময়কালকে সাজা হিসেবে গণ্য করেছেন। নিশ্চয় আদালত কোনও একটা গ্রাউন্ডে এটা করেছেন। এর অর্থ সাজা ওই ১৬ মাসকেই ধরতে হবে। কাজেই উনার সংসদ সদস্য পদ যাওয়ার কথা নয়। রায় শুনে আমার আপাতদৃষ্টিতে এটাই মনে হয়েছে। তবে যেহেতু পূর্ণাঙ্গ রায় নয়, তাই এখনই চূড়ান্ত মন্তব্য করা ঠিক হবে না। পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়া গেলে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া যাবে।’

সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের ২ নম্বর উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার বা সংসদ-সদস্য থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি—(ঘ) তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছরকাল অতিবাহিত না হয়ে থাকে।’

আর সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদে সংসদ সদস্যের আসন শূন্য হওয়া প্রসঙ্গে বলা আছে। এই অনুচ্ছেদের উপ-অনুচ্ছেদ (১)-এ বলা হয়েছে, ‘কোনও সংসদ-সদস্যের আসন শূন্য হবে, যদি—(ঘ) তিনি এই সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে (২) দফার অধীন অযোগ্য হয়ে যান।’ অর্থাৎ কোনও ব্যক্তি নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দুই বছর বা তার বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারবেন না।’ একই কারণে তিনি নির্বাচিত হলেও তার পদটি শূন্য হয়ে যাবে। যার কারণে কুয়েতের আদালতে সাজা হওয়ায় এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য পদ শূন্য হয়।

/ইএইচএস/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
কৃষকরাই অর্থনীতির মূল চলনশক্তি: স্পিকার
কৃষিজমি সুরক্ষা ও ব্যবহার আইন দ্রুত পাস করতে সংসদকে হাইকোর্টের পরামর্শ
সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন আগামী মাসে
সর্বশেষ খবর
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
বাংলাদেশের উন্নয়ন দেখলে আমাদের লজ্জা হয়: শাহবাজ
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
৬ ম্যাচ পর জয় দেখলো বেঙ্গালুরু 
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সাদি মহম্মদ স্মরণে ‘রবিরাগ’র বিশেষ আয়োজন
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা